অভিমত

ঝাউবন বাঁচাতে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করুন

Looks like you've blocked notifications!

উখিয়ার ইনানী সৈকতের পাশেই গড়ে উঠেছে বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে বসবাস করছে অর্ধলাখ রোহিঙ্গা। এর পাশেই রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ দান ঝাউবন। এই দৃষ্টিনন্দন ঝাউবনের গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি ব্যবহার করছে তারা। ফলে এখন ধ্বংসের মুখে পড়েছে ঝাউবন। প্রথমে তারা গাছের ডালপালা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলেও এখন গাছের গোড়াটি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। দেড় মাস ধরে রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত থাকায় জ্বালানির অভাবে এভাবেই দিনের পর দিন উজাড় হচ্ছে কক্সবাজারের বনাঞ্চল। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। রোহিঙ্গারা প্রতিদিন যে হারে বনজ সম্পদ উজাড় করছে, বিষয়টি রীতিমতো চিন্তার। তাদের জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা দরকার।

কক্সবাজার বন বিভাগের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা প্রতিদিন জ্বালানি হিসেবে পোড়াচ্ছে গড়ে সাড়ে সাত লাখ কেজি কাঠ। টাকার হিসাবে দৈনিক এই ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার বেশি। বনভূমি ধ্বংসের এই ভয়াবহতা তথ্যের পেছনে আছে উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের কারো কাঁধে দেখা যায় কচি গাছের ভারী এক বোঝা। নিকটস্থ সংরক্ষিত বন থেকে অল্প বয়সী শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে আসছে অনেকে। ঝাউবন থেকে গাছ টুকরো টুকরো করে কেটে ঝুড়িতে ভরে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। নিকটস্থ সংরক্ষিত বনই যেন এখন রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। বনের কাঠে তাদের জ্বালানি ও বিক্রি করেই তারা এখন জীবিকা নির্বাহ করছে।

স্থানীয়দের মতে, শামলাপুর সৈকতে বন বিভাগের গড়ে তোলা ঝাউবনে ১৫ হাজারের বেশি গাছ ছিল। বিশাল সেই বনে এখন চার-পাঁচশ গাছ অবশিষ্ট রয়েছে। রোহিঙ্গারা ঝাউবনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে শামলাপুরের সংরক্ষিত বনও এখন হুমকির মুখে। বনের ছোট থেকে বড়—কোনো গাছই বাদ যাচ্ছে না। কেটে উজাড় করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা।

উত্তরে কুতুপালং, দক্ষিণে হাকিমপাড়া, জামতলী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় এক লাখের বেশি বসতি গড়ে উঠেছে। বনের সবুজ বৃক্ষগুলো রোহিঙ্গারা কেটে উজাড় করে ফেলছে। রোহিঙ্গাদের দ্বারা যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে, তাতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। ১০ লাখ রোহিঙ্গা যদি রান্নার কাজে প্রতিদিন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরো কক্সবাজার বৃক্ষশূন্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। তখন পরিবেশের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে।

কক্সবাজারের বিভাগীয় বন অফিসের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বন বিভাগের আড়াই হাজার একর সংরক্ষিত বন দখল করে নিয়েছে। সেখানে তারা বসতি গড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে। প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা পরিবার এখন এখানে আশ্রয় নিয়েছে। রান্নার কাজে একমাত্র জ্বালানি হিসেবে তারা বনের কাঠ ব্যবহার করছে। প্রতি পরিবার পাঁচ কেজি করে কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে তারা প্রতিদিন সাড়ে সাত লাখ কেজি কাঠ পোড়াচ্ছে। এই কাঠের পুরোটা তারা নিচ্ছে সরকারি বনভূমি থেকে। তারা এরই মধ্যে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার বনজ সম্পদ পুড়িয়ে ফেলেছে।

১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এভাবে বনজ সম্পদ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকলে বন বলতে আর কিছুই থাকবে বলে মনে হয় না। মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। এ অবস্থা তৈরি হওয়ার আগেই তাদের জন্য দ্রুত বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা দরকার। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কেরোসিনের চুলা অথবা মানববর্জ্যকেন্দ্রিক বায়োগ্যাস প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। কম তাপে রান্না করা যায় এ রকম সরঞ্জাম সরবরাহ করার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। বেশ কিছু বায়োগ্যাস প্ল্যান্টও স্থাপন করা যেতে পারে। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলোকেও এগিয়ে আসা দরকার।

লেখক : শিক্ষার্থী ও দৈনিক আমাদের সময়ের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।