পাঠকের কলাম

যেভাবে মিস ওয়ার্ল্ডের ফাইনাল মঞ্চে জেসিয়া

Looks like you've blocked notifications!

ষোলো বছর পর বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন জেসিয়া নামের এক সুন্দরী। প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্ব অতিক্রম করে তিনি এখন পৌঁছে গেছেন ফাইনাল মঞ্চে।

ফাইনাল মঞ্চে যাওয়া এই সুন্দরীর পারিবারিক নাম জেসিয়া ইসলাম। তিনি পুরান ঢাকার মেয়ে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। জেসিয়ার মায়ের নাম রাজিয়া সুলতানা। তিনি গৃহিণী। মা-বাবার একমাত্র সন্তান তিনি। এই সুন্দরীর উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। তাঁর বয়স ১৮ বছর।

বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এ অংশ নিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আয়োজিত ‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭’-এ তীব্র আগ্রহ থেকে প্রতিযোগিতায় নাম লেখান জেসিয়া। ২৯ সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে আয়োজিত ‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭’-এর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হন জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। তবে বিজয়ী হিসেবে জান্নাতুল নাঈমের নাম ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় বিতর্কের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে চলে নানা জল্পনা-কল্পনা।

চূড়ান্ত রায়ের পর জানা যায়, জান্নাতুল নাঈম বিবাহিত। জান্নাতুল নাঈমকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার পর প্রশ্ন ওঠে, আয়োজকদের বিবেচনাতেই তাঁকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিচারকদের নম্বরকে উপেক্ষা করা হয় বলে খবরে প্রকাশ। এর পর খবর পাওয়া যায়, চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল নাঈম বিয়ের বিষয় গোপন করেছেন। বিষয়টি দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরে জেসিয়া ইসলামকে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঘোষণা করা হয়।

জেসিয়ার মাধ্যমেই বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করে বাংলাদেশের মানুষ। দীর্ঘ ১৬ বছর পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে চীনে অনুষ্ঠিতব্য ৬৭তম ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ১৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে চীনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন জেসিয়া।

২০ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৮টায় চীনে পৌঁছান লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড জেসিয়া ইসলাম। এরপর চীনের শিমেলং ওশান কিংডমে মিস ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয় ৩১ অক্টোবর। সেখানেই সব প্রতিযোগীকে স্বাগত জানানো হয়। এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ৫০০ জন শিল্পী।

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার ‘টপ মডেল’, ‘ট্যালেন্ট’, ‘মাল্টিমিডিয়া’, ‘স্পোর্ট’, ‘বিউটি উইথ আ পারপাস’-এর পাশাপাশি ‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জেস’ বিভাগটি যুক্ত করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইন্টারঅ্যাক্টিভিটির ওপর জোর দেওয়া হবে এখানে।

নতুন এই প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বের ১২০ জন প্রতিযোগী থেকে ফাইনাল ফোর্টি পর্বে যাওয়ার কথা ছিল। তবে এরই মধ্যে ‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জে’ ছয়টি গ্রুপের প্রতিটিতে বিজয়ীরা সরাসরি পৌঁছে গেছেন সেরা ৪০-এ। বাংলাদেশের জেসিয়া তাঁদেরই একজন। কয়েক দিনের মধ্যে গ্র্যান্ড ফিনালের মঞ্চে দেখা যাবে ১৮ বছরের এই তরুণীকে।

ফেসবুকে জেসিয়ার পেজে শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত ৯টায় এক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর করুণা এবং আমার প্রিয় বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও দেশের সবার দোয়ায় মিস ওয়ার্ল্ড ২০১৭-এর প্রতিযোগিতায় আমি সেরা ৪০-এ নির্বাচিত হয়েছি এবং হেড টু হেড চ্যালেঞ্জ পর্বে জয়ী হয়েছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

‘হেড টু হেড চ্যালেঞ্জে’ গ্রুপ সিক্সে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৭’ জেসিয়া ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, ইথিওপিয়া ও বটসওয়ানার সুন্দরীরা। কিন্তু ভোটে তাঁদের টপকে সেরা হন ঢাকার মেয়ে জেসিয়া।

এ প্রতিযোগিতার আগে আইবিসি ফ্যাশন পার্টিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সুন্দরীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন জেসিয়া। এ ছাড়া অন্যদের পাশাপাশি চীনের শেনজেনে নতুন গড়ে ওঠা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার (আইবিসি) ঘুরে দেখেছেন তিনি।

এরপর শিমেলং অ্যাকুয়া স্কুলে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন প্রতিযোগিরা। এখানে পশুসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মহাসাগর সংরক্ষণ প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন তাঁরা। পার্কে বেড়ানো ছাড়াও চতুর্থ চীন আন্তর্জাতিক সার্কাস উৎসবে যোগ দিয়েছেন জেসিয়াসহ সবাই।

১৮ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চীনের সানাইয়া শহরে শুরু হবে ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ডের চূড়ান্ত অনুষ্ঠান। আড়াই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান ডিজাইন করছে বেইজিং রাইজ। উপস্থাপনা করবেন টিম ভিনসেন্ট, মেগান ইয়ং ও স্টিভ ডগলাস। নতুন মিস ওয়ার্ল্ডকে মুকুট পরিয়ে দেবেন বর্তমান বিশ্বসুন্দরী স্টেফানি দেল ভালে। চীনের সানাইয়া সিটি অ্যারেনায় ৬৭তম মিস ওয়ার্ল্ড চূড়ান্ত অনুষ্ঠানের মঞ্চকে ঘিরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর ১৯ নভেম্বর দেশে ফিরবেন জেসিয়া।

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন।