স্মরণ

স্বপ্নবাজ মানুষ আনিসুল হক

Looks like you've blocked notifications!

মানুষকে সম্মোহন করার এত শক্তি তিনি কোথায় পেয়েছিলেন? একবার তাঁর সাথে যিনি কথা বলেছেন, তিনিই শুধু জানেন মানুষকে কী পরিমাণ কাছে টানার ক্ষমতা তাঁর।

কী তরুণ, কী যুবক, যেখানেই যার সাথে কথা হয়েছে, তাকেই অনুপ্রাণিত করেছেন। তাকেই বলেছেন স্বপ্ন দেখতে। স্বপ্নটা বড় হওয়ার। দেশকে ভালোবাসার। স্বপ্ন দেখাতেন এভাবে- আমি সাধারণ ঘরের একজন ছেলে, আমাদের সময় এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না, বিজ্ঞানের এত এত বিষয় তখনো আবিষ্কৃত হয়নি। গ্রামের একজন ছেলে, শুধু চেষ্টা আর পরিশ্রম করে যদি এত দূর আসতে পারি তা হলে তোমরা কেন ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়ে হয়ে বড় হতে পারবে না?  দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না?

সাধারণ মানুষ কেন তাকে পছন্দ করত?  পছন্দ করত হয়তো এ জন্য যে,  মেয়র হওয়ার পর যেখানেই তিনি অনিয়ম দেখেছেন, দুর্নীতি দেখেছেন, সেখানেই তিনি সোচ্চার হয়েছেন। কেউ দখল করে রেখেছে সরকারি জায়গা, কিংবা স্থাপনা তৈরি করে রেখে মাসের পর মাস ভাড়া খাচ্ছে,  তিনি তা উচ্ছেদ করেছেন সাথে সাথে। এই উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় যার স্থাপনা ছিল, সে কত বড় ক্ষমতাবান সেটা তাঁর কাছে বিবেচ্য ছিল না। তিনি ভেঙে দিয়েছেন। তখন সাধারণ মানুষ দেখেছে তাঁর নীতি-নৈতিকতা। অনুভব করেছে তিনি সবার মেয়র। তিনি অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। এমন মানুষকে কি পছন্দ না করে থাকা যায়?

আনিসুল হক চেয়েছিলেন সবুজ ঢাকা গড়তে। তিনি চেয়েছিলেন নারীবান্ধব ঢাকা, তিনি চেয়েছিলেন শিশুবান্ধব ঢাকা, যানজটমুক্ত ঢাকা গড়তে, সর্বোপরি চেয়েছিলেন পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের রাজধানীর মতো বর্তমান ঢাকার চেহারা পাল্টে দিতে। কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন।

আনিসুল হক বিশ্বাস করতেন মানুষ সংঘবদ্ধ হলে পৃথিবী বদলে যেতে পারে। এই বদলে দেওয়ার মানে হচ্ছে, যত অনিয়ম আর দুর্নীতি। তিনি হাত জোড় করে ঢাকাবাসীর কাছে বলেছেন, আপনাদের একটু সচেতনতা পারে ঢাকাকে অসুন্দরের হাত থেকে রক্ষা করতে। প্লিজ আসুন আমরা একটু সচেতন হই। দেখবেন আপনার চারপাশ থেকে সব অসুন্দর দূর হয়ে গেছে।

আনিসুল হক কখনো আমি শব্দটা বলতেন না। কোনো একটা কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করার পরে বলতেন আমরা সবাই মিলে কাজটা করেছি বলেই ভালোভাবে শেষ করতে পারলাম। এটা বলে তিনি মহত্বের পরিচয় দিতে চাননি। তিনি সবাইকে আরো ভালো কাজ করার উৎসাহ জোগাতেই এই ‘আমাদের’ শব্দটা বলতেন।

আনিসুল হক ছিলেন ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ীনেতা। তিনি যখনই নেতা হয়েছিলেন তখনই নিজের আখের গোছানোর কথা ভাবেননি। তিনি দলমতের ঊর্ধে  উঠে সব ব্যবসায়ীর কথা ভেবে সরকারের সাখে কথা বলেছিলেন। আদায় করেছেন নানা দাবি। যে কারণে ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক আদর্শ যাই থাকুক না কেন সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন।

সেই মানুষটি আমাদের সবাইকে স্বপ্ন দেখানোর সাহস জুগিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এই ঢাকা শহরের অনেক কাজ এখনো বাকি। আমরা কি এ রকম আর কাউকে পাব? যিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধনে এগিয়ে আসবেন?

গত ৩০ নভেম্বর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন আনিসুল হক। আজ ২ ডিসেম্বর দুপুর একটায় তাঁর লাশ দেশে আনা হবে।

যে শহরকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক, সেই শহরেই তাঁকে শায়িত করা হবে চিরনিদ্রায়। তিনি থাকবেন আমাদের অন্তরে। দেখবেন ঢাকা শহরকে।

আমরা কি পারি না এই ঢাকা শহরকে রক্ষা করতে, অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে? তিনি যেন পরপার থেকে দেখতে পারেন তাঁর প্রাণের শহরকে কেউ নষ্ট করছে না। শিশুরা খেলতে পারছে মাঠে। নারীবান্ধব হয়ে উঠছে ঢাকা। যানজটমুক্ত হয়ে উঠছে ঢাকা।

আনিসুল হক, আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। ঢাকাবাসী আপনার জন্য দোয়া করছে।

লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক