১৯৭১

বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেনের কথা

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের চেইনম্যান বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকৌশল দপ্তরের চেইনম্যানের দায়িত্ব নেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। দেশের টানে ১৯৭১ সালে নৌ কমান্ডো হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। একে একে শত্রুপক্ষের আটটি জাহাজ ধ্বংস করেন তিনি। ১৬ মে নিজ শরীরে লিমপেট মাইন বেঁধে কর্ণফুলী নদীতে পাকিস্তানি জাহাজ ধ্বংস করার অভিযানের সময় শহীদ হন মোহাম্মদ হোসেন।

বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের সফিনগর গ্রামে। বাবা আহমদ মিয়া চাকরি করতেন পাকিস্তান পুলিশে। তাঁর মায়ের নাম তাম্বিয়া খাতুন। পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই শহীদ মোহাম্মদ হোসেন। তিনি ছিলেন সবার বড়। বয়স যখন ২২, তখন তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিচারণ করছিলেন তাঁর বোন নূরনাহার বেগম। ভাইয়ের কথা উঠতেই কণ্ঠস্বরটা ভারী হয়ে এলো। নূরনাহার বেগমের বয়স তখন ১২/১৩ বছর। ভাইয়ের সঙ্গে শেষবার যখন কথা হয়েছিল, তখন ভাই বলেছিলেন, ‘আমি চাকরিতে যাচ্ছি, আমার কাপড়গুলো একটি ধুয়ে রাখিস।’ বোন ভাইয়ের কথামতো ঠিকই কাপড় ধুয়ে রেখেছিল। বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালে মাকে দেখতে এসেছিলেন দুবার। এরপর আর ফিরে আসেননি তিনি।

বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেনের স্মৃতি সংরক্ষণে নির্মিত স্মৃতি ভবন। ছবি : সংগৃহীত

শহীদ মোহাম্মদ হোসেন যখন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে যান, তখন তাঁকে (মোহাম্মদ হোসেন) জিজ্ঞেস করা হয়, তাঁরা কয় ভাইবোন। তাঁর দেশের প্রতি এতই মমত্ত্ববোধ ছিল যে তিনি পাঁচ বোনের কথা গোপন রেখে পাঁচ ভাই আছেন বলে জানান। তাঁর দেশের প্রতি ভালোবাসা তখনই প্রকাশ পেয়েছিল। স্বাধীনতার পর পিতা আহমদ মিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আপনি মোহাম্মদ হোসেনের বাবা মানে আমারও বাবা, আপনি কী চান?’ প্রতি উত্তরে আহমদ মিয়া বলেন, ‘আমার কিছুই লাগবে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে, এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।’ কান্নাভরা কণ্ঠে এভাবেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন সেজ বোন নূরনাহার।

তবে বোনের বড়ই আক্ষেপ, দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া এই মানুষটি চলে গিয়ে বোনদের ভাইশূন্য করেছেন। এখন আর বাবার বাড়িতে নায়র করতে যেতে পারেন না। একমাত্র ভাই চলে গিয়ে পিতার ভিটায় বাতি জ্বালানোর মানুষ পর্যন্ত নেই। 

বীরপ্রতীক মোহাম্মদ হোসেনের গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী সফিনগর পশ্চিম ধলই গ্রামে ‘স্মৃতি ভবন’ তৈরি করা হয়েছে। তৎকালীন প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু ইউছুফ ২০০৮ সালে এই স্মৃতি ভবন তৈরি করে দেন। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সড়কের নামকরণ করা হয় তাঁর নামে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে নির্মিত ‘স্মরণ’ স্মৃতিস্তম্ভটিও শহীদ মোহাম্মদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শহীদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়।