বিপিএলে সমর্থন নিয়ে দ্বিধা!

Looks like you've blocked notifications!

প্রতিবছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরু হলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের ভেতর একধরনের উৎসব বিরাজ করতে দেখা যায়। তবে এই উৎসবের পাশাপাশি শুরু হয় দলকে সমর্থন নিয়ে দ্বিধা। কখনো-সখনো এই দ্বিধা রূপ নেয় হার-জিতের এক বিরক্তিকর মনোভাবে!

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দুটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ক্রিকেটপ্রেমীরা পছন্দের দলকে বাছাই বা সমর্থন করে থাকেন। একটি এলাকার ভিত্তিতে আর অপরটি হলো পছন্দের খেলোয়াড় দেখে। কখনো এমন হয়, নিজের এলাকার দলকে সমর্থন না করে পছন্দের খেলোয়াড়ের দলকে সমর্থন করছে। তবে নিজের এলাকাকেন্দ্রিক দলের প্রতিও থাকে শুভ কামনা।

কখনো আবার পছন্দের খেলোয়াড়কে অপছন্দের খেলোয়াড় বা বিদেশি খেলোয়াড়রা আউট করলে বা তার বলে রান না নিতে পারলে মন খারাপ করেন এমন কথাও ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখ থেকে শোনা যায়। আরো অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর সঙ্গে কথা বলে সমর্থন-দ্বিধা নিয়ে অনেক কথায় উঠে এসেছে।

শরিফুল ইসলামের (২৩) বাড়ি খুলনায়। স্বাভাবিকভাবে তাঁর খুলনা টাইটানসকে সমর্থন করার কথা। কিন্তু তিনি সমর্থন করেছিলেন রংপুর রাইডার্সকে। গতকাল রাতে ফাইনাল খেলা শেষে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে কথা হয় শরিফুলের সঙ্গে।

কেন খুলনার মানুষ হয়েও রংপুর রাইডার্সকে সমর্থন করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে শরিফুল বলেন, ‘পুরো ক্রিকেট বিশ্বের হিসাব যদি আমি করতে যাই, তাহলে মাশরাফি বিন মুর্তজা আমার কাছে আইকন খেলোয়াড়। শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও তিনি আমার আইকন। মাশরাফিকে আমি ভালোবাসি। এককথায় মাশরাফি বাহিনী হেরে যাবে সেটা আমি মানতেই পারি না কখনো। ক্রিকেট বিশ্বের অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আমার প্রিয় খেলোয়াড়। সে জন্যই একেবারে শুরু থেকেই আমি রংপুরকে সাপোর্ট করেছিলাম।’

রংপুর রাইডার্স আর খুলনা টাইটানসের এলিমিনেটর পর্বের খেলা যেদিন হয়েছিল, সেদিন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে শরিফুল বলেন, ‘ওই দিনটা আমার জন্য বেশ দ্বিধার ছিল। প্রথমত আমি খুলনার ছেলে। সে হিসেবে আমার সমর্থন করার কথা খুলনাকে। আবার আমার পছন্দের দল রংপুর রাইডার্স। দেখেন খেলাটা যদি এমন হতো, পুরোটা খুলনার ছেলেরা খেলছে তবু এককথা ছিল। সব দলেই তো বিদেশি খেলোয়াড়ে ভরা। তবে যখন খুলনা হেরেই গেল, তখন আমার বেশ খারাপ লেগেছিল। একই সাথে রংপুর হারলেও আমার খারাপ লাগত।’

ঢাকাতেই থাকেন জয় (২৭)। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তিনি বলেন, ‘দেখুন আমি কোন দলকে সমর্থন দিয়েছি সেটা কোনো ব্যাপার না। বাংলাদেশি খেলোয়াড় যেমন মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মাহমুদউল্লাহ যদি কোনো দলের খেলোয়াড় বিশেষ করে বিদেশি খেলোয়াড়দের কাছে আউট হয়, খুব মন খারাপ হয়। মেজাজও খারাপ হয়। আবার ধরেন তাসকিন কিংবা মুস্তাফিজের বলে কেউ খুব পেটাচ্ছে সে সময়ও খুব মেজাজ খারাপ হয়।’

জয় আরো বলেন, ‘বিদেশি খেলোয়াড়দের বলে কে বেশি রান নিচ্ছে বা কোন বিদেশিকে আউট করছে এটা আমাকে খুব নাড়া দিতে পারে না। বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের খারাপ খেলা মেনে নিতে পারি না, কষ্ট হয়। আর এলাকাভিত্তিক দলগুলো যদি শুধু এলাকার খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলত, সে ক্ষেত্রে আমি আমার এলাকার দলকেই সমর্থন দিতাম। তবু নিজের এলাকার দল খারাপ খেললে বা হেরে গেলে খুব বাজে লাগে।’

ঢাকার ছেলে আবদুস সামাদ (২১)। পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি এবার বিপিএলে সমর্থন দিয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। ঢাকার ছেলে হিসেবে তাঁর সমর্থন দেওয়ার কথা ঢাকা ডাইনামাইটসকে। কেন আপনি কুমিল্লাকে সমর্থন দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় খেলোয়াড় তামিম ইকবাল আর জস বাটলার। ইমরুল কায়েসও আমার প্রিয় খেলোয়াড়। আর সাকিবকে আমার পছন্দ হয় না। এই সব কারণে আমি কুমিল্লাকে সমর্থন করেছিলাম।’

তমাল হোসেন (৩৫) নামের একজনের গ্রামের বাড়ি সিলেটে। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। সমর্থন দিয়েছিলেন রংপুর রাইডার্সকে। কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘সব আইকন প্লেয়ারে ভরা রংপুর। আর মাশরাফি তো নেতা। নেতাকে ভালোবাসি, তাই নিজের শহরের দল সিলেট সিক্সার্সকে সমর্থন না দিয়ে রংপুরকে দিয়েছি।’

সালাম নামের একজন বলেন, ‘আমি ঢাকাকেই সমর্থন করেছিলাম। ঢাকাতে থাকি, ঢাকাতে খাই। জীবনও গড়লাম এই ঢাকাতেই। তাই আমি প্রতিবারই ঢাকাকে সমর্থন করি।’