বিমান বন্দরে অভিজ্ঞতা

আমার র‌্যাপ করা ব্যাগ

Looks like you've blocked notifications!

সেবার ফেরার পথে কলকাতা সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খানিকটা অপ্রয়োজনেই আমার সাথে থাকা দুটি ব্যাগের একটিকে ২০০ রূপি দিয়ে স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে নিই। আমার সঙ্গী তাইজুল বলে,‘স্যার,প্যাচাইন্যার দরকার কী?’ আমি হেসে বললাম,‘একটু দরকার আছে তাইজুল।’

টিকেট কাউন্টারে ব্যাগ-ব্যাগেজের ওজন সীমা অতিক্রম করে যায়। সুহাসিনী টিকেট চেকার আমার ভিসার ওপর কলমের লেখা দেখে কিছু একটা ভাবেন, তারপর হাসিমুখে বলেন,‘আপনাদের সাথে তো অনেক লোক থাকবার কথা, একটু দাঁড়ান, কেউ একজন আসলে তার লাগেজের সাথে আপনার একটা দিয়ে দিয়েন। তাহলে আর জরিমানা গুনতে হবে না। আমি বিনয়বশত তাকে বলি,‘অসুবিধা নেই, দেখুন কত আসে।’ বেচারি আবারও বলেন,‘দরকার কি স্যার? আপনি একটু দাঁড়ান।’

তবে তার অনুরোধ মতো খুব একটা দাঁড়াতে হয়নি আমার। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি, প্লেটোদর্শন ঢাকার এক বিখ্যাত কবি আমার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছেন; একদা যিনি বাংলা একাডেমির পরিচালক ছিলেন। আমি তাকে সালাম দেই, এবং হাতের দিকে তাকাই, দেখি একটি ঝোলা বৈ অন্য কিছুই নেই তার সাথে। তাকে পরিচয় দিয়ে জানাই, আমি বাংলা একাডেমিতে কাজ করি। আমাকে আর কিছু বলতে হয় না। টিকেট কাউন্টারের সুহাসিনী আমার হয়ে কবিকে আমার একটা লাগেজ তার নম্বরে চালিয়ে দেওযার প্রস্তাব করেন। কবি ‘শিয়র, শিয়র’ বলে রাজি হয়ে যান। তারপর দাঁড়িয়ে-বসে সিগারেট টেনে আর সুদৃশ্য মদের দোকানগুলোর দিকে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে সময় অতিবাহিত করি। মনিটরে ‘বিজি-৯৬ অনবোর্ডিং’ লেখা দেখে এগিয়ে যাই এবং চিনি এমন অনেক ভিআইপির চোখ থেকে শরীর বাঁচিয়ে ঠিক সময়ে বিজি ৯৬-এ চড়ে বসি।

গুচ্ছ-গুচ্ছ আলো আর বিমানের ধীর গতিতে বুঝতে পারি, আমারা পৌঁছে গেছি। বাংলাদেশ বিমানের সুপার-স্যালুন ব্যোমযানের প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে ইমিগ্রেশনে এসে দাঁড়াই। আমার সামনেই ছিলেন কবি, তাঁকে বিদায় করে ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার সামনের দীর্ঘ লাইনটির দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে কাউন্টার ছেড়ে উঠে যান। ঘড়িতে তখন রাত আটটা বেজে ১০ কি ১৫ মিনিট। আমি ভাবি, যাক যথাসময়েই বাসায় পৌঁছনো যাবে। আমি লাইনের সামনে, কাউন্টার ফাঁকা, অনেকক্ষণ কেটে যায়, কাউন্টারে কেউ আসে না। তাইজুল একবার বলে,‘স্যার চলেন অন্য লাইনে যাই।’ আমি বলি,‘তাইজুল, অকারণে আইনভঙ্গ করা উচিত নয়, আর একটু দাঁড়াই।’ তাইজুল অধৈর্য হয়ে আমাকে রেখেই পাশের লাইনে চলে যেতে উদ্যত হয়। কড়া ধমক আর যাত্রীদের ভর্ৎসনার মুখে আবার ফিরে আসে। একসময় কাউন্টার আলোকিত করে নীল পোশাকে আবৃত একজন কর্মকর্তা উপবেশন করেন। আমি চঞ্চল হয়ে উঠি। এর ভেতরে অনেকক্ষণ আগেই ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যাওয়া প্লেটোদর্শন কবি ওপাশ থেকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার চাঞ্চল্যে আমি বুঝতে পারি, তিনি কিছুটা বিরক্ত হচ্ছেন। উপরন্তু তিনি একজন ধূমপায়ী সুতরাং অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের জন্য আমি কিছুটা পীড়াবোধ করি।

নীল পোশাকের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তাঁর সামনে দাঁড়ানো লাইনটির দিকে দু-একবার তাকলেও গুরুত্ব দেন না। নিচু হয়ে পায়ের কাছে কিছু একটা খোঁজেন, আবার চোখ তুলে তাকান। অনুমান করি তিনি কম্পিউটার চালু করছেন। একটা কম্পিউটার চালু করতে আর কতক্ষণই বা। কিন্তু সময় আর শেষ হয় না। ঘড়ি আর অপেক্ষমাণ কবির মুখের দিকে চেয়ে আমি কিছুটা অধৈর্য্য হয়ে যাই। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে মৃদুস্বরে ফোড়ন কাটি, আবার ভয়ও পাই, যদি তিনি শুনে ফেলেন। অপেক্ষমাণদের মধ্যে যারা কিছুটা সাহসী তারা উচ্চস্বরে স্বদেশের প্রতি বিষোদগার করতে থাকে।

অবশেষে প্রায় ৯টার কাছাকাছি সময়ে কম্পিউটার চালু হয়। বিরক্তি আর পুরো রাজ্যের হতাশা মুখে নিয়ে তিনি এবার আমাকে এগিয়ে আসার জন্য ইশারা করেন। আমার পেছনে অপেক্ষমাণদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিল। অবোধ শিশুদের কেউ-কেউ ততক্ষণে বিকট চিৎকার আর কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাদের মায়েদের প্রতি সমবেদনা থাকলেও তাদের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে আমি এগিয়ে যাই। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা পাসপোর্ট আর শরীরে চাপানো খয়েরি রংয়ের ব্লেজারটির দিকে কয়েকবার তাকিয়ে খুব বেশি বাক্যালাপ ছাড়াই আমাকে মুক্ত করে দেন। আমি মুক্ত হয়ে কবির দিকে ছুটে আসি, মার্জনা প্রার্থনা করি। তিনি হেসে বলেন,‘না না কোনো অসুবিধা নেই। নতুন কিছু লিখেছ? লিখলে আমাকে দিও’ বলে পকেট থেকে কার্ড বের করে দেন। আর চার নম্বর বেল্টের কাছে এসে ঘুরতে থাকা লাগেজগুলোর ভেতর দিয়ে নিজের ঝোলাটাকে তুলে নিয়ে লাগেজস্লিপটি আমার হাতে দিয়ে বলেন,‘তাহলে ভালো থেকো।’

কোনো অজ্ঞাত কারণে আমার একটি লাগেজ; যেটা পলিথিনে পেঁচানো ছিল না সেটা, কিছুটা দোমড়ানো-মোচড়ানো অবস্থায় আমার সামনে আসে, আমি সেটাকে তুলে নিই। তাইজুলের কালোব্যাগটাও চলে আসে, আমি ঘুরতে থাকা চারনম্বর বেল্ট হেঁটে অতিক্রম করি।পলিথিন মোড়ানো লাগেজ আর আসে না। এভাবে প্রায় পৌনে একঘন্টা কেটে যাবার পর পূর্ণিমার চাঁদের মতো সেটা এবার আবির্ভূত হয়।নিচু হয়ে সেটা তুলে  নিই, ঘড়ির দিকে তাকাই, ভাবি, অসুবিধা নেই, আমার ছেলে নিশ্চয় জেগে থাকবে।

আমার দুটি আর তাইজুলের সুবিশাল একটি, মোট তিনটি লাগেজ ট্রলিতে চাপিয়ে আমি সামনে আসি। এতক্ষণ বিমানবন্দর কিছুটা ফাঁকাই ছিল। হঠাৎই বড়ো-বড়ো বিমানের কয়েকটি ফ্লাইট নেমে পড়ায় জায়গাটি জনাকীর্ণ হয়ে ওঠে। আমি পাশ ঘেঁষে এগোবার চেষ্টা করি, এগিয়ে যাই। লাগেজগুলো কালোপর্দায় ঢাকা দানবাকৃতির স্ক্যানিং মেশিনে নিজেই ঠেলে তুলে দিতে উদ্যত হই। চেকার আমাকে নিবৃত করেন। আঙুল তুলে বলেন,‘আপনার লাগেজগুলো ঐ জায়গায় নিয়ে যান, ওখান থেকে ওকে করিয়ে নিয়ে আসেন। আমি বলি, ‘কেন? আপনিই চেক করুন না।’ কঠিন মুখে চেকার বলেন,‘না ওখানে নিয়ে যান, ওখানে চেক হবে।’

আমি আমার ট্রলিটা ঠেলে চেকারের দেখানো ‘ওখানে’ নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর দেখি, একজন চল্লিশোর্ধ নারী কঠিন মুখে বসে আছেন। তিনি আমার দিকে না তাকিয়েই নির্দেশ দেন,‘ব্যাগুগুলো একটা একটা করে তোলেন’, বলেই একটা কাঁচি-আর একটা ভোতা সাদা ছুরি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ান। এতক্ষণ ব্যাপারগুলো আমার কাছে স্বাভাবিক ছিল, এবার আমি কিছুটা আহত ও উত্তেজনা বোধ করি। আমি তাকে আমার পাসপোর্টটা দেখাই, বলি,‘দেখুন আমি সরকারি নির্দেশে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম। এই লাগেজে, প্রধানত কিছু বই,যা আমি খরিদ করেছি সেগুলো ছাড়া স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতার জন্য কেনা কিছু শাড়ি-চাদর আর জুতো ছাড়া আপত্তিকর কিছু নেই।’ আমি তাকে ব্যাখ্যা করে বলি, ‘এই লাগেজটা অকারণ আমি র‌্যাপ করিয়েছি মূলত সদ্য হাঁটতে শেখা আমার শিশুপুত্রকে আনন্দ দেওয়ার জন্য। ও এটা চড়চড় শব্দে টেনে খুলবে অথবা আমি ওর সামনে আস্তে-আস্তে পলিথিনটা টেনে তুলবো, এসময় ওর চোখ-মুখে যে আনন্দমখা বিস্ময়টুকু ফুটে উঠবে আমি সেটা দেখতে চাই। অনুগ্রহপূর্বক আমার অপর ব্যাগটি খুলুন। আর এটাকে উপর্যুপরি স্ক্যান করে দেখুন, ভেতরে অনঅনুমোদিত কিছু আছে কিনা।’

ব্যাপারটি তার মনে ধরে, হয়তো নারী বলেই। তিনি হাতের ছুরিটা ফেলে বাঁ-দিকে পেছনে তাকিয়ে এক সুদর্শন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,‘স্যার, এইলোক একজন লেখক, মনে হয় তেমন কিছু নাই।’ যদিও নিজেকে আমি তার কাছে লেখক বলে পরিচিত করিনি। যাই হোক এতেই হলো আমার কাল। সুদর্শন এবার গর্জে উঠলেন,‘বইমেলোয় গিয়েছিলেন? বই নিয়ে এসেছেন, বই নিয়ে গিয়েছিলেন সে বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাগজ কোথায়? বাংলাদেশ ব্যাংকের পারমিট দেখান। রেমিটেন্স কোথায়? দেশের বই যে বিদেশে বেচে এলেন,সেই টাকা কোথায়? উনার চিৎকারের মুখে আমি ভড়কে যাই এবং কিছুটা রেগে উঠি। আমার থেকে তার দূরত্ব ছিল বেশ খানিকটা, আমি বিষয়টা খুলে বলবার জন্য তার কাছে যেতে উদ্যত হই। তিনি হাতের ওয়ারলেসের এন্টেনা নেড়ে, পুনরায় চিৎকার করে ওঠেন,‘ওখানে দাঁড়িয়ে বলুন।’

আমি সেখানে দাঁড়িয়েই বলতে থাকি,‘দেখুন বই আমি সাথে করে নিয়ে যাইনি। ও বিষয়ক বন্দোবস্ত আমার অফিস করেছে, আমি খালি হাতে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলাম মাত্র। আর বই বিক্রিয়লব্ধ টাকা আমি নিয়মমাফিক কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে জমা করে এসেছি। চাইলে সেসব কাগজপত্র আপনি দেখতে পারেন। এছাড়া যে বইগুলো আমার সাথে আছে সেগুলো আমার ব্যক্তিগত পয়সায় কেনা, রশিদ আমার ব্যাগেই আছে, কোনো মাসুল হলে আমি তা পরিশোধেও সম্মত আছি।’ যেহেতু আমি নিজেও খানিকটা উত্তেজিত হয়ে গেছি তাই আমি আরও বলি,‘দেখুন, সৌভাগ্যক্রমে একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে প্রায় সকল ট্রেডেই আমার নিকট বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। এবং আপনাদের সাথে যারা আছে তাদের অনেকের অভিজ্ঞতাই আমি শুনেছি গল্পচ্ছলে। আমি জানি, তারা প্রত্যেকেই খুব চৌকস, একজন চোরাকাবারিকে দেখেই নাকি ওরা সনাক্তকরণে পঞ্চাশ ভাগ নিশ্চিত হয়ে ওঠে। আপনি আমার পাসপোর্ট দেখুন, আমি ঢাকা-কলকাতার ফ্রিকোয়েন্ট ট্রাভেলর নই।’

‘ওরকম বহুত দেখছি, ব্যাগ খোলেন’। ব্যাগ খুলতে আমি বরাবরই প্রস্তুত ছিলাম তবে এই ধরনের রূঢ় আচরণের মুখে এবার কিছুটা বেকে বসি, বলি,‘মিডিয়া ডাকুন, আমি তাদের সামনে ব্যাগ খুলবো। এই ব্যাগে বইয়ের অন্তরালে থরে-থরে কাঁচা সোনার বার লুকোনো আছে। আমি চাই জাতি সেটা দেখুক আর আপনার মতো চৌকস কাস্টমস অফিসার জাতীয় পুরষ্কারে ভূষিত হোক।’ বলে রাখা ভালো, ঢাকায় নামার পর যেহেতু আমি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছি তাই আমার ফোনে বেশ কয়েকটা কল আসে। সেসব কলের একটাতে সর্বমহলে যাতায়াতকারী আমার এক বন্ধুও ছিলেন। তাকে আমি দু-একবাক্যে সংক্ষেপে বিষয়টা জানিয়েছি, সাহায্য প্রার্থনার জন্য নয়, মূলত সেই মুহূর্তে আমি যে তাকে মনোযোগ দিতে পারছি না, সেটা জানাবার জন্য।

এবার একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার কাছে ফোন আসে, আমি ধরি। অপরিচিত কণ্ঠ আমাকে জানান, তিনি আমার এককালের পরিচিত, বর্তমানে বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগে ডেপুটি পর্যায়ে কর্মরত। আমার ঐ বন্ধু আমার কথা জানিয়ে আমার নাম্বারটা তাকে লিখে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, দায়িত্বরতকে ফোনটা দাও। আমি আমার সামনের ভদ্রমহিলাকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলি,‘কথা বলুন।’ তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,‘আমি কেন? এখনতো কেইস স্যারের হাতে।’ স্যারকে বললাম, আপনাদের ডেপুটি মহোদয় লাইনে আছেন, দয়া করে কথা বলুন।’ স্যার কথা বলেন না, প্রথমে আমাকে শাসান, ‘আপনি ফোন করেছেন কেন?’ আমি বলি,‘ফোন আমি করিনি, এমনকি আপনার ডেপুটিকে আমি চিনিওনা। তিনিই আমাকে ফোন করেছেন।’ কথাগুলো লাইনে থেকে ডেপুটি মহোদয় নিশ্চয় শুনছিলেন। আমি পুনরায় ফোন কানে তুললে তিনি আমাকে বলেন,‘ভাই আমি সব শুনেছি, তুমি আর একটু দাঁড়াও। আমি বিলি, ‘ধন্যবাদ ভাই, ব্যাগ খুলতে আমার-তো কোনো অপত্তি নেই। ছিলও না। আমি শুধু...’ বাক্য শেষ করার আগেই তিনি লাইনটি কেটে দেন।

এবার সমবয়েসি একজন নীলকোট পরিহিত অফিসার আমার দিকে এগিয়ে আসেন, এসেই আমার নাম ধরে জিজ্ঞেস করেন, আমি সে-ই কিনা। আমি বলি,‘হ্যা’। তিনি করমর্দন করে জানান, ব্যাপারটির জন্য তিনি দুঃখিত। তবে যেহেতু চেক করার কথাটি এসেছে তাই তাকে একবার চেক করতে হচ্ছে। প্রয়োজনে সে আমার ব্যাগ পুনরায় পলিথিনে র‌্যাপ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এই বলে নিজ হাতেই তিনি আমার ব্যাগ দুটো খোলেন, দেখেন। আমি একবার আড়চোখে ঐ উত্তেজিত চৌকস অফিসারের দিকে তাকাই। দেখি তিনি নেই, হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনি  বিমানবন্দরের অন্য কোনো প্রান্তে চলে গেছেন। ব্যাগ চেক করা হলে, নীল পোশাকের নতুন কর্মকর্তা আমার পেছন-পেছন কিছুদূর আসেন এবং প্রস্তাব মোতাবেক আমার ব্যাগটিকে পুনরায় র‌্যাপ করে দিতে চান। আমি তখন ঘড়ির দিকে তাকাই, দেখি, রাত সাড়ে বারোটা।

আমি তার সাথে করমর্দন করে বলি,‘ধন্যবাদ!আমার ছেলে নিশ্চয় এখন আর জেগে নেই।’

লেখক: কর্মকর্তা, বাংলা একাডেমি, ঢাকা