সত্যি কাজের ছোটগল্প
‘মায়ের শাড়ি’
ছবির সঙ্গে শিরোনামটা বেমানান। সবিস্তারে শুনলে হয়তো অস্পষ্টতা কাটবে।
অফিসে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ এক মানসিক বিকারগ্রস্ত যুবক এসে ঢুকল। পা খালি। জিজ্ঞেস করলাম, ‘পা খালি কেন?’
সাবলীল উত্তর, ‘এসব বড় অফিসের সিস্টেম আমি জানি। আমারে শিখানো লাগবি না।’
আমি বললাম, ‘এটা উপাসনালয় না যে জুতো খুলে ঢুকতে হবে। যাও! জুতো পরে আসো।’
জুতো পরে আসার পর সামনে বসালাম। অঝোরে কাঁদল কিছুক্ষণ জিল্লুর। বলল, ‘এমন ভালো ব্যবহার আগে কোথাও সাতি কেউ করিনি।’
জিল্লুর রহমান। বয়স ৩০ হবে। বাবা নেই। আছে শুধু মা। বাড়ি অভয়নগরে না। পাশের কোনো এক উপজেলায়। চলে এসেছে সেখান থেকে। নিজে নিজেই বলে, ‘আমিও আপনার মতো বড় অফিসার হতে পাইত্তাম। বিসিএস দিসি। ইকোনমিকসে পড়িসি।’ কথাগুলো অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল বৈকি। তবে পড়াশোনা যে জিল্লুর একদম খারাপ করেনি, তা আলাপে বুঝলাম। এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে অনেকটা।
—আমার কাছে কী চাও?
—শাড়ি।
—শাড়ি! কার জন্য?
—মার জন্যি। ৪০০ টাকা চাইয়েসে দাম। ঈদে নতুন শাড়ি দেবো না???
সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ টাকার একটা নোট পকেট থেকে বের করে বললাম, ‘যা পাগলা। নিজে কিনে নিয়ে আয়। যদি সত্যিই কিনে আনিস, তবে তোর জন্য উপহার আছে।’
টাকাটা নিয়ে একপলকেই দৌড়।
বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমার রুমে বসা প্রত্যেকে বলল, ‘কী করলেন স্যার! ৫০০ টাকা জলে গেল।’ সবার কথায় আমারও মনে খানিকটা অবিশ্বাস বাসা বেধেছিল। মৃদুস্বরে উত্তর দিলাম, ‘গেলে যাক তো!’
টাকাটা জলে যায়নি। চোখ ভরেছে জলে। ১৫ মিনিট পর জিল্লুর ফিরেছে ওর নিজের পছন্দের শাড়ি হাতে। মায়ের শাড়ি।
আর এসেই বলল, ‘আমার গিপট কই?’
উপহার দিয়েছি। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বলেছি... মাকে শাড়িটা দিয়ে বলবি, তাঁর কোনো এক অচেনা ছেলে শাড়িটা দিয়েছে।
*** অফিসারদের কাঁদতে হয় না।
লেখক : মনদীপ ঘরাই, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভয়নগর, যশোর। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পে সংযুক্ত।