শীতার্তদের জন্য হাত বাড়িয়ে দিন

Looks like you've blocked notifications!

একজোড়া শীতার্ত চোখ। আশাতুর দৃষ্টি ঘন কুয়াশার মাঝে খুঁজে সূর্যালোক। এই দৃশ্যটি হতে পারে কোনো কৃষকের, হয়তো কোনো শ্রমিকের বা পথশিশুর অথবা কোনো বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। আজকের তীব্র শীতে কী হবে তাঁদের? হিমেল ঠান্ডা শীতকে প্রতিরোধ করার মতো কোনো অস্ত্র তো তাঁদের কাছে নেই। নেই কোনো গরম কাপড়। এমন অনেক শীতার্ত মানুষের হাড়ের কাঁপুনি বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয় নিয়মিত। এই দৃশ্য বাংলাদেশের কোনো মানুষের। গর্বিত বাংলার মায়ের কোনো সন্তানের।

এই কদিনের উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে শীতের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এই শৈত্যপ্রবাহের শীতে কাঁপছে দেশের প্রান্তজনের মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়। বা যাদের দিন-রাত কাটে রাস্তার অলিগলিতে। ঘরের ভেতর থেকেই শীতের অত্যাচারে বাঁচা যেন দায়। সেখানে যারা রেলস্টেশন বা রাস্তার মোড়ে শুয়ে রাত্রি কাটাচ্ছে, তাদের কেমন কষ্ট হচ্ছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। তাই যারা বিত্তশালী, তাদের এই শীতার্তদের পাশে একটু উষ্ণতা নিয়ে দাঁড়ানো উচিত। আর সেটা অবশ্যই হবে মানবিক দিক থেকে। এ সময়ই আমাদের মানবিক মনটাকে জাগানো উচিত। শৈত্যপ্রবাহ আরো কয়েক দিন থাকবে। তাদের পাশে দাঁড়ানোটা এখন থেকেই শুরু করা উচিত।

শীতের প্রকোপ থেকে তাদের বাঁচানোর জন্য একটা কম্বল কিংবা মোটা কাপড় দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তাঁদের আবাসিক ছাত্রাবাসে পুরাতন শীতের কাপড় সংগ্রহ করে শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন। দেখুন, এই পুরাতন কাপড়গুলো আপনার ঘরে এমনিতেই পড়ে থাকবে। পোকায় কাটবে। নষ্ট হবে। এর চেয়ে শীতার্ত মানুষদের দিলে তারা অন্তত শীত থেকে বাঁচতে পারবে।

আমাদের আছে সব ধরনের কাপড়চোপড়, যা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকার জন্য, তাঁদের কী আছে। শুধু নিজের দিকে চিন্তা করলেই তো হবে না। আশপাশে শীতার্তদের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া চাই। যেহেতু আমরা একই মাতৃকার মানুষ। সবার ওপরে মানুষ। কবি বলেছেন, জীবে প্রেম করেছে যেজন সেজন সেবিছে ঈশ্বর। তাহলে মানুষ নামের শীতবস্ত্রহীন এই  প্রাণীটিকে একটু সাহায্য-সহযোগিতা করুন না। তাহলে ঈশ্বর সেবাটাও হয়ে যাবে।

অনেকের শীতের কাপড় কেনা তো দূরের কথা, তিনবেলা তিনমুঠো খেয়ে বাঁচার সামর্থ্যও হয়তো তাদের নেই। নেই ছাউনি দেওয়া কোনো ঘরও। যেখানে তারা এই কনকনে শীতের রাতগুলো কিছুটা শান্তিতে কাটাতে পারে। ফলে তাদের আশ্রয় হয় কোনো গাছের নিচে, না হয় ফুটপাতে গুটিসুটি হয়ে ঘুমানো। আমাদের দেশে হাজারো লোক আছে, যারা রাস্তায় জীবনযাপন করে আসছে।

এই তীব্র শীত ধেয়ে আসছে মৃত্যুর বিভীষিকা হয়ে ওই সব অসহায় মানুষের জীবনে, যাদের মোটা কম্বলের নিচে লুকিয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই। তাদের বেঁচে থাকতে হবে শীতের সাথে লড়াই করে, পাতলা কোনো কাপড়ে নিজের শরীরকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করে কাজে নেমে পড়তে হবে। এসব মানুষগুলোর জন্য কিছু করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা যদি তাদের জন্য নতুন কাপড় কিনে দিতে না পারি, তাহলে আমাদের পুরোনো কিংবা অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত শীতবস্ত্রটি নিয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি কিংবা কিছু আর্থিক সাহায্য করতে পারি। আসুন, আমরা সবাই শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।

লেখক : বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।