ব্যঙ্গ রঙ্গে

বইমেলার জনপ্রিয় মুরগি লেখক

Looks like you've blocked notifications!

আমার সেই মামাতো ভাইয়ের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে, পল্টি তরফদার। একবার আওয়ামী লীগ একবার বিএনপিতে নাম লেখায়। যখন যেখানে ধান্দা ফিকির করার সুযোগ পায় সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। একবার সে এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টিতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সুযোগ পায়নি। গত বর্ষায় সে ঢাকায় মৌসুমী নৌকা ব্যবসায়ী হওয়ার ধান্দা নিয়ে এসেছিল। অর্থ সংকটে সেই আশাও পূরণ হয়নি তার।

এবার সে আমার বাসায় এসেছে বইমেলায় বই প্রকাশ করার ধান্দা নিয়ে। তাকে কারা পরামর্শ দিয়েছে বই লিখে খুব তাড়াতাড়ি মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। আর যদি একটা বই হিট করানো যায় তবে আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হবে না।

অফিস থেকে বাসায় ফিরে ভাত খেয়ে টিভি দেখতে বসেছি, এমন সময় আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঢুকে আমার পাশে বসল।

ভাইজান কোথায় গিয়েছিলেন? বললাম তাকে।

একটু ভাতিজিকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। ওকে আইসক্রিম খাওয়ালাম।

কখন এসেছেন?

বিকেলে। শোনো এবার আমি এসেছি তোমার সাহায্য নিতে। তোমার সাহায্য লাগবেই। তুমি না করতে পারবে না।

কী সাহায্য?

আমি একটা বই লিখেছি, তুমি এটা একুশের বইমেলায় বের করে দিবা। তোমার অনেক প্রকাশকের সাথে খাতির আছে, জানি। তুমি এবার না করতে পারবা না।

আপনি বই লিখেছেন?

কেন আমি কি লিখতে পারি না?

না পারেন, অবশ্যই পারেন। কিন্তু হঠাৎ বই লেখার ভূত মাথায় আসল কেন?

শোনো তুমি হয়তো জানো না, এখন অনেক মানুষ বই লিখে নিজের টাকায় ছাপে। নিজের টাকায় লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দেয় পত্রিকায়। আমিও ওরকম লেখক হতে চাই। আমার তো টাকা পয়সা লাগবে না। তুমি আছ, প্রকাশককে বলে দিবা। আর তুমি চাকরি কর পত্রিকায়। বিজ্ঞাপন দিতে তো টাকা লাগবেই না। বিনা খরচায় লেখক হওয়া যাবে।

আমি কী বলব, বুঝে উঠতে পারছি না। আজকাল শুনেছি বাংলাবাজারে বইমেলার আগে মুরগি লেখকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। কিছু কিছু প্রকাশক আছে, যারা এসব লেখককে পেলে ভালোভাবে জবাই করে দেয়। বই ছাপতে যা খরচ হয় তার দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপর যা ছাপার কথা তার চার ভাগের এক ভাগ ছাপে। লেখককে কোনোমতে ১০০ বা ২০০ বই দিয়ে বিদায় করে দেয়। লেখককে বলে, আপনার বই ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। বিক্রি হয়ে যাবে। আরে ভাই আপনাকে লেখক বানানোর জন্য যা যা করা লাগবে সব আমি করব। কোনো চিন্তা করবেন না। এসব লেখক নাকি বইয়ের বিজ্ঞাপন দেয় নিজেকে জনপ্রিয় লেখক দাবি করে। প্রথম বইয়ের বিজ্ঞাপনে লেখে কালজয়ী লেখকের সারা জাগানো বই বের হলো এবার। যে বই বের হলো মাত্র সে বই সারাটা জাগাল কবে?

অনেকক্ষণ কি যেন ভেবে মামাতো ভাই বললেন

তুমি কাল অফিসে কখন যাবে?

সকাল ১১টায়।

কাল একটু আগে বের হতে পার না?

কেন?

আমাকে নিয়ে একটু বাংলাবাজারের বইয়ের প্রকাশকের কাছে নিয়ে যাবে। একজন প্রকাশকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।

আমি যেতে পারব না ভাই। আর আমার অনুরোধ রাখবেন না কোনো প্রকাশক। কারণ কেন খামোখা আপনার বই বের করে টাকা গচ্চা দেবেন?

তুমি আমার ফুপাতো ভাই। সেজন্য আমার একটা দাবি থাকতে পারে না।

ভাই আমি পারব না। আমাকে মাফ করে দেন।

তুমি চাও না আমি জনপ্রিয় লেখক হই, এই তো?

আমি কী বলব। ঈশ্বর তুমি মাটি দুভাগ করে দেও, আমি একটু লুকাই। এ জিনিস নিয়ে আমি কোথায় যাব?

ঠিক আছে থাক তোমার সাহায্য আমার লাগবে না। কাল সকালে আমি চলে যাব। বলেই শিশুর মতো আমার সামনে থেকে চলে গেল।

আমি সেসব লেখককে অভিশাপ দিচ্ছি যারা আমার এই মামাতো ভাইয়ের মাথাটা খেয়েছে। যারা নিজের টাকায় বই ছেপে লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দেয়, নিজের টাকায়। বিজ্ঞাপনে নিজেকে জনপ্রিয় লেখক বলে দাবি করে। কেন সবাইকে লেখক হতে হবে? হে ঈশ্বর এসব মুরগি লেখক থেকে আমাদের সাহিত্যকে রক্ষা করো। 

লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক।