শিক্ষা

ভ্যাট আরোপ পূর্বমূল্যায়ন হলে সংকট তৈরি হতো না

Looks like you've blocked notifications!

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে অভিনন্দন। এটি নিঃসন্দেহে সরকারের সঠিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত আমজনতার জন্য যেমন ভালো, তেমনি ভালো খোদ সরকারের জন্য।

কারণ, এই ভ্যাটকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ ধরে দেশে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তার মাত্রা দিন দিন বেড়ে যেত। এর সঙ্গে যোগ হতো নানা ইস্যু। বন্ধ হয়ে যেত শহরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। কারণ, বেশির ভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শহরের গর্ভে ও কোল ঘেঁষে অবস্থিত।

সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরোধ ঠেকাতে পারত? কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ওপর জলকামান নিক্ষেপ করতে পারত?

এতে আন্দোলন বন্ধ হতো না; বরং এর সঙ্গে যোগ হতো বহুদলীয় রাজনৈতিক ইস্যু। এসব ইস্যুর কোনোটি হতো সত্যিই ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট, আবার কতেক হতো রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার। তারা আগুনে ঘি ঢালার সুযোগ পেত।

কত কয়েক দিনের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের বক্তব্য হতে সরকার নিশ্চয় বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছে।

আমি মনে করি, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির চেয়ে নিজেদের প্রয়োজনেই ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখার মানসিকতা যদি সরকারের থাকতই, তাহলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হতো না।

ইউনেস্কো কর্তৃক বলা আছে, বাজেটের ৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে। অথচ আমাদের দেশে এ বরাদ্দ ২ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। অথচ সামরিক খাতে ঠিকই মোটা অঙ্কের বরাদ্দ চলছে। যদিও অনেক রাষ্ট্র-বিশ্লেষকই মনে করেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জাপানের মতো অনিয়মিত সামরিক ব্যবস্থা চালু করা। আমাদের যে সামরিক শক্তি আছে, তা বহির্বিশ্বের আক্রমণ প্রতিহত করতে তেমন যে সক্ষম নয়, সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ এখন চলছে টেকনোলজির যুদ্ধ। তাই চাই শিক্ষার প্রসার। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার।

প্রথম দিকে ভ্যাট আরোপের পক্ষে সরকারের কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছিল যে, এসব প্রতিষ্ঠানে ধনীর ছেলেরা পড়ে। তাই এ অর্থ তাদের জন্য বাড়তি বোঝা হবে না। ধনীর সন্তানদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আসলেই তেমন বোঝা হতো না বলে আমিও মনে করি। তবে এ কথা কি সরকারের সেই বক্তারা জানেননি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানরাও পড়ে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী আছে, যারা পার্টটাইম চাকরি বা টিউশনি করে এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে।

কারণ আমাদের দেশে এখনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই কম। আবার ন্যাশনাল ভার্সিটিতে চার বছরের অনার্স কোর্স সাত বছর লেগে যায়। তিন বছরের ডিগ্রি পাস কোর্স সম্পন্ন হতে চার বছরের বেশি সময় লেগে যায়।

তাই বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হচ্ছে। কারণ, এখানে চার বছরের অনার্স কোর্স চার বছর বা তার আগেই শেষ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার জটিলতার কারণে প্রায় এক বছর শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়। অথচ অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয় না।

তা ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক অভিজাত পরিবারের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকেও করছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়মুখী।

এই ভ্যাট প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি মূল্যায়নকারীদের দূরদর্শিতার অভাব বোধ করছি। কারণ, কোনো নীতি প্রণয়নের আগে সরকারের উচিত ছিল এর পূর্বমূল্যায়ন।