মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস

কিছু প্রশ্ন ও বিভ্রান্তি

Looks like you've blocked notifications!

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশে একযোগে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই গুঞ্জন শোনা যায়, প্রশ্ন নাকি ফাঁস হয়েছে। এদিকে, ১৯ সেপ্টেম্বর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহকারী পরিচালক (ইউজিসি) ওমর সিরাজ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্টোরকিপার রেজাউল করিম ও ঈশান ইমতিয়াজ হৃদয়। এর আগে বুধবার চারজনকে ধরা হয় ডিওএইচএস থেকে। তাঁদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা এবং এক কোটি ২১ লাখ টাকার চেক আটক করা হয়।

বিকেলে আগারগাঁওয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা নয়, বিভিন্ন পরীক্ষা, যেমন—কৃষি ব্যাংকের অফিসার, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তরপত্র সরবরাহকারী চক্রের মূলহোতাও নাকি ওমর।

এদিকে ফেসবুকেও দেখলাম, বিভিন্ন গ্রুপে প্রশ্নের স্ক্রিনশট শেয়ার হচ্ছে। কেউ বলছে, এটাই প্রশ্নপত্র, যদিও কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।

অন্যদিকে দেখলাম, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে কাজ চলছে।

কয়েকজন পরীক্ষার্থীর কথা শুনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে যা বুঝলাম, প্রশ্ন খুবই সহজ হয়েছে। তার ওপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই গুজব এতটা প্রকটভাবে এর আগে কখনই হয়নি। তাতে পরীক্ষার মান নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

আমার কথা হচ্ছে, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের কয়েকটা সেট থাকে। সেট ‘ক’ সব সময়ই সহজ হয়, বাকি সেটের প্রশ্ন হয় কঠিন। প্রশ্ন হলো, পরীক্ষার দিন সকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলে, তাৎক্ষণিক কেন সেট পরিবর্তন করা হয়নি? স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যদিও এটাকে গুজব বলেছেন, তার পরও কথা থেকেই যায়। আমার মনে হয়, এ রকম একটা বিতর্কিত পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হলে ভালো হবে। যারা প্রশ্ন পেয়ে সুযোগ পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কয়েকটা ব্যাপার হবে বলে আমার মনে হয়। যেমন—যদি মেধাবীরা প্রশ্ন পেয়ে চান্স পায়, তারা হীনমন্যতায় থাকবে। আর যারা মেধাবী ছিল না, তাদের ক্ষেত্রে হবে যে তারা কম পরিশ্রমে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় এই পড়াশোনার প্রতি তাদের সম্মান-ভক্তি ব্যাপারটা আসবে না। মানবসেবার মতো এত বড় একটা ব্যাপারে এ রকম হলে সেটা ভবিষ্যতে কত বড় সমস্যা হবে, তা উপলব্ধি করাই যায়। আর মেডিকেলের মতো এত দীর্ঘমেয়াদি পড়াশোনা এত কিছু আত্মস্থ করে রাখতে গিয়ে সে হতাশায় ভুগবে, পাস করতে পারবে না এবং পরবর্তী জীবনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

এখনো ২০০৬ সেশনের সেই প্রশ্ন ফাঁসের খবরটা মনে পড়ে। যদি খোঁজ নেওয়া হয় দেখা যাবে, তাদের অনেকেই এখনো মেডিকেলের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই যোগ্য মেধাবীরা চান্স পাবে না। অযোগ্য ছাত্ররা চান্স পেয়ে ডাক্তারি পেশার মতো একটা মহৎ পেশাকে একদিকে যেমন কলুষিত করবে, অন্যদিকে মানবসমাজের জন্য এরা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে সরকারের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

লেখক : শিক্ষার্থী, পঞ্চম বর্ষ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ঢাকা।