ক্রিকেট উন্নয়ন

তৃণমূলে আমাদের ক্রিকেট

Looks like you've blocked notifications!

ক্রিকেটীয় যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তার ঘরানা বলে, ‘ক্রিকেট উন্নয়নে তৃণমূল’। ক্রিকেটে সমর্পিত প্রাণ বাংলাদেশ সমর্থকও মানছেন সে যুক্তি। যে কারণে তৃণমূলে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তৃণমূলে ক্রিকেট কী অবস্থায় আছে, সেটা বলার আগে সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। কারণ, প্রায় শুরু থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা অনুধাবন করেছিলেন, ‘ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করতে হবে তৃণমূলে।’ আর এই কথাগুলো এখন বেশি শোনা যাচ্ছে, তার অনেক কারণের মধ্যে একটা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বপ্নের দিন শেষ, যদি না সেই স্বপ্ন ক্রিকেট রোমান্টিকের স্বপ্ন হয়! বাংলাদেশ ক্রিকেটে একসময় রাজধানী ঢাকার দাপটে দেশের মানচিত্রের অন্য সব জায়গাকে ক্রিকেটীয়ভাবে অনগ্রসর হিসেবে চিহ্নিত করা যেত অনায়াসে। অবস্থাটা এমন ছিল, সত্তর দশকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম একাদশের আট-নয়জন ক্রিকেটার শুধু ঢাকারই ছিলেন না। যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবার ক্রিকেটীয় শৈশব ছিল পুরান ঢাকার সেই সেন্ট গ্রেগরি স্কুল। অথচ এখন পাল্টে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট মানচিত্রে সেই ঢাকাকে খুঁজে পাওয়া যায় শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর হোম অব ক্রিকেটের সৌজন্যে! কারণ, এ সময়ে জাতীয় দল কিংবা ‘এ’ দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই উঠে এসেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে; বিভিন্ন জেলা থেকে। সেই বাস্তবতায়ও বলতে হচ্ছে, তৃণমূলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচর্যাটা ঠিক হচ্ছে কি? হচ্ছে কি হচ্ছে না, সেই বিতর্ক হয়তো চলমান রাখা যাবে দীর্ঘ সময়। তবে সেই বিতর্কের চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ঢাকার ক্রিকেটচর্চার জগৎ যখন মাঠের অভাবে ছোট হয়ে যাচ্ছে, তখন তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।

নতুন সহস্রাব্দ ক্রিকেটে এনে দিয়েছে ফিটনেস ট্রেনিংয়ে বিপ্লব। কিন্তু তৃণমূলে সেই সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে শুধু একটা কথাই বলা হয়, ‘অপর্যাপ্ত’। অথচ ক্রীড়াবাজেটের বড় একটা অংশ ব্যয় হয় স্থাপনা নির্মাণে। কিন্তু সেসব স্থাপনায় ফিটনেস ট্রেনিংয়ের জন্য যা বানানো হয়, সেখান থেকে টাকা নয়ছয়ের কঙ্কালটা বেরিয়ে আসে আগে। সেখানে ট্রেনিং নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাহিদা মেটাতে পারেন, এমন ক’জন ফিট ক্রিকেটার বেরিয়ে এসেছেন তার উত্তর খুঁজতে কাগজ-কলম নিয়ে বসার দরকার পড়ে না। আঙুলের কর গুনে বলা যায়! ক্রিকেটের উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। ক্রিকেটারদের শুধু পুরস্কার দেওয়ার মধ্যে সরকারের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ থাকলে তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেটীয় অবকাঠামোর উন্নতি সম্ভব নয়। খেলার জন্য মাঠ চাই। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও বলেন, প্রতিটা উপজেলায় সবুজ মাঠ করে দেওয়া হবে। ‘মিনি স্টেডিয়াম’ করে দেওয়া হবে। কথাগুলো শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার হয়ে উঠতে শুধু একটা মাঠই যথেষ্ট নয়। আধুনিক ক্রিকেট অবকাঠামো আরো অনেক কিছু দাবি করে। উপজেলা পর্যায় তো অনেক দূরের, বাংলাদেশের কয়টা জেলায় ক্রিকেটারদের ফিটনেসের জন্য জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল আছে, সেই পরিসংখ্যান হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছেও নেই। আর একেবারে তৃণমূলে ফিটনেস সেন্টার, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুলসহ প্রযুক্তিনির্ভর অনেক কিছু একেবারে বর্ণ পরিচয়ের পর্যায়েই রয়ে গেছে।

তৃণমূল থেকে ভালো ক্রিকেটার তুলে আনতে শুধু একটা ভালো মাঠ যথেষ্ট নয়। খেলাটা ক্রিকেট। তাই ভালো উইকেট দরকার সবার আগে। সেটা সবার জানা। কিন্তু জেলা পর্যায়েও সেই ভালো উইকেটের অভাব। ভালো উইকেট তৈরি করার জন্য দরকার ভালো প্রশিক্ষিত কিউরেটর। কিন্তু দুঃখজনক সত্য, এই ডিপার্টমেন্টটা এখনো উপেক্ষিত বাংলাদেশ ক্রিকেটে। যে কারণে এখানেও বিদেশি নির্ভরতা। অথচ তৃণমূলে কাজ করেও ভালো কিউরেটর উঠে আসতে পারেন। সে উদাহরণ বাংলাদেশে আছে। এখানে যদি আরো বেশি সাবেক ক্রিকেটারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যায়, তাতে লাভবান হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। পাল্টাবে তৃণমূলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চেহারাও। সেই উদ্যোগটা নিতে হবে বোর্ডকে। জীবিকা আর সচ্ছলতার তাড়নাতেই নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার লোকের অভাব নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে। সে সুযোগটা তাদের করে দিতে হবে।

তৃণমূলে ক্রিকেটীয় অবকাঠামোর সংস্কার ও উন্নয়ন না হলে দু-একজন ক্রিকেটার হয়তো উঠে আসবেন। চমকে দেবেন। দু-একটা সিরিজ জেতা যাবে। গোটা দেশ উল্লসিত হবে। কিন্তু পৃথিবী শাসন করা যাবে না। এই সত্যটা আমাদের সবার জানা। এই মুহূর্তে যারা ক্রিকেট বিশ্বশাসন করছে, তারা যদি হয় ক্রিকেটের উন্নত বিশ্ব, তাহলে বলতে হবে আমরা এখনো উন্নয়নশীল বিশ্বের বাসিন্দা। ক্রিকেট বিশ্বের তৃণমূল পর্যায় পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে যারা ব্যক্তির চেয়ে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান আর টিমওয়ার্ককে বেশি গুরুত্ব দেয়। ইংল্যান্ড এখনো অনেকটা রক্ষণশীল। আর ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক বেশি নির্ভর করে প্রতিভার ওপর। বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটছে, সেটা পরিষ্কার নয়। তবে পথ যেটাই হোক, তার শুরু হতে হবে তৃণমূল থেকে।

উন্নত বিশ্বে প্রতিভা খুঁজে বের করার সহজ রাস্তা স্কুল ক্রিকেট। সেখান থেকে বয়সভিত্তিক দল হয়ে বিভিন্ন একাডেমি হচ্ছে তাদের ক্রিকেটার তৈরির কারখানা। তৃণমূলে আমাদের স্কুল ক্রিকেট সে রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তেমন দাবি করা যাচ্ছে না। সে তুলনায় বরং বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের আয়োজনে বেশি জৌলুস। তবে সেখানেও আরো নতুন চিন্তার প্রতিফলন দরকার। আরো বেশি ক্রিকেটমনস্ক লোকের সংশ্লিষ্টতাও দরকার। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়া জরুরি। দরকার পদ্ধতিগত সংস্কার। আর সেটা করতে হলে ক্রিকেট বোর্ডকে বিকেন্দ্রীকরণের নীতিকেই বেছে নিতে হবে। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের কথা শুধু কাগজ-কলমে থাকলে চলবে না। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা বাস্তব রূপ নিলে তৃণমূলে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে জাতীয় লিগও অন্য রকম আবেদন তৈরি করতে পারে। তৈরি হতে পারে অঞ্চলভিত্তিক অন্য রকম ক্রিকেটীয় জাগরণ। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার অধীনে থাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলাগুলো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংগঠকরাও নিজেদের দক্ষতা-আন্তরিকতার প্রমাণ রাখার সুযোগ পাবেন। আর সেই জেলা বা অঞ্চলের দর্শকও আরো ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট দেখার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবকিছুতে মিরপুরের ‘হোম অব ক্রিকেট’ নির্ভরতা কমাতে না পারলে ক্রিকেটীয় এই অগ্রযাত্রা থমকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

বাংলাদেশে স্কুল ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা না বাড়লেও বেড়েছে ক্রিকেট কোচিং স্কুল আর ক্রিকেট একাডেমি কালচার। সেটা ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলেও। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠেছে ব্যক্তিপর্যায়ে ক্রিকেট একাডেমি। এর ইতিবাচক প্রভাবটাই হয়তো বেশি দেখছি। কিন্তু নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার উদ্যোগও নিতে হবে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চেষ্টা আর পৃষ্ঠপোষকতায় ভালো কিছু একাডেমিও গড়ে উঠেছে। সেখানে স্থানীয় কোচদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটারও জড়িয়েছেন আগামী দিনের ক্রিকেটার তৈরিকে ব্রত হিসেবে নিতে। তৃণমূলে এই ব্যক্তি উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়ে বিসিবির উচিত এর সবকিছুকে একটা ‘মনিটরিং সেল’-এর আওয়াতায় আনা।

ব্যক্তি এবং বিভিন্ন করপোরেট হাউসের পাশাপাশি ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—কোয়াবও বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল থেকে ক্রিকেট মেধা খুঁজে বের করার। কিছুটা সফলও তারা। শফিউলের মতো জাতীয় ক্রিকেটার উঠে এসেছিলেন তাদের সেই উদ্যোগের ফসল হিসেবে। সেই উদ্যোগ অব্যাহত রাখা যেমন দরকার, তেমনি দরকার স্থানীয় ক্রিকেট কোচদের সংশ্লিষ্টতা আরো বাড়ানো।

তবে সবকিছুর পরও বলতে হবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সাপ্লাই লাইন হচ্ছে বিকেএসপি। একের পর এক ক্রিকেটার দিয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বয়সভিত্তিক দল গড়ার সময়ও তারাই মূল ভরসা। কিন্তু সেই বিকেএসপিও সময়ের সঙ্গে কতটা আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে পেরেছে, সে প্রশ্নও আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিকেএসপি নির্ভরতা কমাতে বিসিবি পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজস্ব ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তুলতে। কারণ, একটা বিকেএসপি কিংবা বিসিবির একটা ক্রিকেট একাডেমি দেশের উঠতি ক্রিকেটারদের সঠিকভাবে পরিচর্চার জন্য যথেষ্ট হতে পারে না। সরকারকেও এটা খুব দ্রুত উপলব্ধি করতে হবে।

দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে অবকাঠামোর আধুনিকায়নের পাশাপাশি জোর দিতে হবে প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ওপর। তৃণমূলে লোকাল কোচেস প্রোগ্রাম বাড়াতে হবে। ইতিহাস আশ্রয়ী হয়ে বলা যায়, এই উপলব্ধিটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড করেছিল সেই সত্তর দশকেই। বব জোন্স নামের এক ইংলিশ কোচকে এনে স্থানীয় কোচদের নিয়ে কোচেস কোর্স করা হয়েছিল। আশির ও নব্বই দশকেও বহুবার সে রকম কোর্স করা হয়েছে। নতুন শতাব্দীতে সেটা অব্যাহত আছে নতুন আঙ্গিকে। কিন্তু সেসব কোচের সঙ্গে তৃণমূলের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। প্রতিটি বিভাগে বিসিবির বেতুনভুক্ত একজন কোচ কাজ করছেন। সেটাকে সাধুবাদ জানিয়েও বলতে হচ্ছে, প্রতিটি বিভাগের বয়সভিত্তিক দলগুলোর জন্যও আলাদা আলাদা কোচ নিয়োগ করা গেলে তার সুফল বাংলাদেশ ক্রিকেট আগামী দিনে পাবে।

তৃণমূলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, অভিজ্ঞ কোচের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে দল নির্বাচনেও আরো বেশি স্বচ্ছতা আনা দরকার। তিন সদস্যের জাতীয় নির্বাচক কমিটি আর তিন সদস্যের জুনিয়র নির্বাচক কমিটির পক্ষে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে কাজ করা কঠিন। শুধু কঠিন নয়, দুরূহ। তার পরও বলতে হবে তারা দক্ষতা, পেশাদারিত্ব দেখাতে পারছেন বলেই হয়তো বাংলাদেশ দলে ‘নতুন মুখ’ হিসেবে অনেককে পাওয়া যাচ্ছে। তবে নির্বাচকদের কাজটা আরো সহজ করতে এবং তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ করতে নির্বাচক কমিটির অধীনে তিন থেকে পাঁচজন স্পটার নিয়োগ দিতে পারে বিসিবি। যারা সারা দেশ ঘুর বেড়িয়ে কিছু নাম সুপারিশ করতে পারবেন নির্বাচকদের কাছে। এতে আরো কিছু সাবেক ক্রিকেটারকে তৃণমূলে ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা যাবে। আগামী দিনের প্রতিভাকেও খুব কম বয়সে চিহ্নিত করার কাজটাও সহজ হতে পারে।

তৃণমূলে অর্থবান লোকগুলোর পাশাপাশি ক্রিকেট-সমাজের মস্তিষ্কবান লোকগুলোর সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো দরকার। অর্থবান আর মস্তিষ্কবান লোকগুলোর যৌথ প্রয়াসে সঠিক পথে এগোবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে সেটা পর্যবেক্ষণের জন্য একটা ‘পর্যবেক্ষণ সেল’ যেমন খোলা যাবে, তেমনি কোনো একজন সাবেক ক্রিকেটারকে প্রধান করে অঞ্চলভিত্তিক ‘চিন্তার সেল’ও খোলা যেতে পারে। আধুনিক ক্রিকেটে মাঠের বাইরে বিভিন্ন শাখায় যারা যত বেশি ক্রিকেটারকে একীকরণ করতে পারছেন, তারা তত বেশি ক্রিকেটীয়ভাবে লাভবান হচ্ছে।

শুধু সাবেক ক্রিকেটার, কোচ নন, তৃণমূলেও সংগঠকদের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। তৃণমূল সংগঠকদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে বোর্ডেরও। আর বোর্ডে তৃণমূল সংগঠকদের গুরুত্ব বাড়ুক। তবে সেটা শুধু ক্রিকেটীয়। গিভ অ্যান্ড টেকের নয়।

সাংবাদিকতায় ‘পেশাদারিত্ব’ শব্দটা অনেক কিছু মানিয়ে নিতে শিখিয়েছে। তাই অনেক চিন্তাকে ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত করে তৃণমূলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামী দিনের সবুজাভ চেহারাটা দেখার স্বপ্ন নিয়ে অনেক কথা লেখা। সঙ্গে তৃণমূল ক্রিকেটের ধূসর, মলিন, রূঢ় চেহারাটাকে পাশে সরিয়ে রাখার বিলাসিতাও দেখালাম। তৃণমূলে যারা দিনের পর দিন নিঃস্বার্থভাবে অর্থ-ঘাম-শ্রম বিলিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামী দিনের রঙিন স্বপ্ন বিনির্মাণে, তাদের জন্য ‘কৃতজ্ঞতা’ শব্দটা উচ্চারণই বোধহয় যথেষ্ট নয়। তাদেরকে একটু অন্যভাবে মূল্যায়ন করতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সেই সামর্থ্য আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের আছে। প্রতিবছর অন্তত তৃণমূল থেকে একজন করে সেরা কোচ, সংগঠক, পৃষ্ঠপোষকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারে বিসিবি। তাতে প্রায় ধন্যবাদহীন এই কাজগুলোর প্রতিও আরো অনেকে উৎসাহী হবেন।

‘তৃণমূলে আমাদের ক্রিকেট’কে মাত্র কয়েকশ শব্দে তুলে ধরা বেশ কঠিন। কিন্তু তার পরও নিবন্ধটা লিখতে হলো। তাই আবেগকে হটিয়ে যুক্তি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে অনেক কিছু কাটছাঁট করতে হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে দীর্ঘকালীন ছাপ ফেলেছে কিংবা ফেলতে পারে হয়তো এমন অনেক বিষয়ও বাদ পড়েছে। তার জন্য অসহায়ের মতো ক্ষমাপ্রার্থনা ছাড়া এই লেখকের আর কী বা করার আছে?

তবে সংশয়হীনচিত্তে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে তৃণমূলে আরো অনেক কিছু করার আছে। ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা যৌথভাবে সেই কাজগুলো করার উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাবে আরো অনেক দূর।

(প্রবন্ধটি ১৯ সেপ্টেম্বর-২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়।)

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।