শাহ সুলায়মানের দেহাবশেষ আনতে তুরস্কের অভিযান

Looks like you've blocked notifications!
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক। ফাইল ছবি

শাহ সুলায়মান ছিলেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর এক অখ্যাত রাজা। ইউফ্রেটিস নদীতে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়। বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটানো এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সকে দখলকৃত এলাকা থেকে হটিয়ে দেওয়া অটোম্যান ও পরবর্তী আধুনিক তুরস্কের গর্ব ছিল ইসলামিক খিলাফত যুগের চিহ্ন শাহ সুলায়মানের সমাধিস্থল দখলে রাখা। ১৯২১ সাল থেকেই সিরিয়ায় অবস্থিত ওই সমাধিস্থলের দখলে রেখেছিল তুরস্কের সেনাবাহিনী। অবশেষে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইসিসের হুমকির মুখে চলতি সপ্তাহে শাহ সুলায়মানের দেহাবশেষ সরিয়ে তুরস্কের মধ্যে আনা হয়েছে। 

অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাসের শুরুতেই আসে শাহ সুলায়মান। ১২৩৬ সালে তিনি মারা যান। সুলায়মান ছিলেন অটোম্যান সাম্রাজ্যের ভিত স্থাপনকারী ইরতুগরুলের বাবা। আর তাঁর ছেলে ওসমান প্রতিষ্ঠা করেন অটোম্যান সাম্রাজ্য। সিরিয়ার প্রত্যন্ত জাবের-কালেসি গ্রামে থাকা শাহ সুলায়মানের সমাধি তুরস্কের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁর বংশধরদের থেকেই সৃষ্টি হয়েছে তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্য, যার স্থায়িত্ব ছিল ৭০০ বছরের বেশি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে পতন ঘটে অটোম্যান সাম্রাজ্যের। 

এবার আসা যাক বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী লীগ অব নেশনের কথায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই সংগঠনের মাধ্যমে ফ্রান্সকে পুরস্কার দেওয়া হয় লেবানন, সিরিয়া ও সিলিসিয়া  নামক তুরস্কের একটি বড় অংশ। তবে আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পরবর্তীকাল এক গেরিলা অভিযানে ফ্রান্সকে সিলিসিয়া থেকে বিতাড়ন করেন। ওই অভিযান কোনোভাবেই আজকের সিরিয়ার আইসিসের সঙ্গে তুলনা চলে না। ১৯২১ সালের আঙ্কারা চুক্তির অধীনে আতাতুর্ক সিরিয়া ও লেবাননে ফ্রান্সের শাসন থাকার সুযোগ দেন। তবে চুক্তি অনুযায়ী জাবের-কালেসি গ্রামে তুরস্কের পতাকা রাখার অধিকার পায় তুরস্ক। অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পরও আরববিশ্বে তুরস্কের অধিকৃত অঞ্চল হলো দুটি ফুটবল মাঠের সমান শাহ সুলায়মানের সমাধি। 

প্রায় ৯০ বছর পর মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইসিসের তাণ্ডব। এই জঙ্গিগোষ্ঠী তাঁদের মতাদর্শের কারণে সমাধিস্থল ধ্বংস করে ফেলছে। এক বছর আগে এই আইসিস সুলায়মানের দেহাবশেষ সরিয়ে নিতে তিনদিনের সময় বেঁধে দেয়। তবে তুর্কি সেনাবাহিনী সেখানেই অবস্থান করে। এর কারণ কী?

সিরিয়ার কয়েকজন তেল বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, ওই সময়ে আইসিস নিয়ন্ত্রিত অনেক তেলক্ষেত্রে তুরস্কের অনেক প্রকৌশলীকে দেখা গেছে। তবে প্রাচীন রাজার সমাধি রক্ষা নিয়ে তেল উত্তোলনে প্রকৌশলী সরবরাহ হয়েছে কি না এ সম্পর্ক কোনো তথ্য জানা যায়নি। পরবর্তী সময়ে এমন কোনো সম্মতির পরিবর্তনও হয়েছে কি না তা অজানা। অবশেষে চলতি সপ্তাহে তুলে আনা হলো শাহ সুলায়মানের দেহাবশেষ। 

লেখক : রবার্ট ফিস্ক, যুক্তরাজ্যের ‘দি ইনডিপেনডেন্ট’ পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি। সাহসী সাংবাদিকতার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। 

*দি ইনডিপেনডেন্টে একই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে অনুবাদ করেছেন জাহিদ আব্দুল্লাহ