জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না

Looks like you've blocked notifications!

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের পিস্তলের গুলিতে শাহাদাত হোসেন সৌরভ নামের এক শিশু আহত হয়েছে। এমপি লিটনের ছোড়া গুলিতে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে নয় বছরের শিশু সৌরভ।

গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ভোরে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরার সময় সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কের ব্র্যাক মোড়ে শিশুটিকে গুলি করেন তিনি। লিটন প্রায় প্রতিদিনই মাতাল অবস্থায় ভোরের দিকে বাড়ি ফেরেন। ওই অবস্থাতেই তিনি গুলি করেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশু সৌরভকে প্রথমে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুলিবিদ্ধ শিশু সৌরভ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এমপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে জুতা হাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

ঘটনাটি নিশ্চয়ই মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক, দুঃখজনক এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই বিংশ শতাব্দীতে এগুলো মেনে নেওয়া যায় না। তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাঁর বিচার এবং শাস্তি হওয়া উচিত। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই সরকার অনতিবিলম্বে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ থেকে পদক পাচ্ছেন, ঠিক তখনই তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাই এখন সময় এসেছে তাদের লাগাম টেনে ধরার।

যে দেশে একজন সংসদ সদস্য যখন সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে একটি শিশুকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালান, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? আমি মনে করি, এর চেয়ে নির্মম আর কী হতে পারে, যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন অথচ সেই তিনিই জনগণের সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহার করছেন। তাঁর নাকি কুকীর্তির কোনো শেষ নেই। তাঁকে নিয়ে স্থানীয়দেরও দেদার অভিযোগ রয়েছে।

হয়তো তিনি এমন সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু ক্ষমা চেয়েই তিনি পার পেয়ে যাবেন! এর আগে সংরক্ষিত মহিলা আসনের আরেক এমপি পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে দুই রিকশাচালক নিহত হন। সে ঘটনা এখন বিচারাধীন।

এ ধরনের সাংসদের এমন কর্মকাণ্ডে জনগণ তাঁদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তাঁরা কি শুধুই ক্ষমতার দাপটই দেখাবেন! এলাকাবাসী কি তাঁদের ভয়ে সব সময় তটস্থ হয়ে থাকবে! আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবেন।

নিঃসন্দেহে অনেক ভালো সাংসদও আছেন, যাঁরা অনেকে ভালো কাজও করেছেন। কিছুসংখ্যক সাংসদের জন্য পুরো সংসদ সদস্যদের ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। এ ধরনের সাংসদের কাছে আবেদন, আপনারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ক্ষমতা, বিত্তবৈভব স্থায়ী নয়, এগুলো মানুষকে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখে না। মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার, দুঃখ-কষ্ট ও অনুভূতি নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করুন। যে জীবন আপনি সৃষ্টি করতে পারেন না, সেই জীবন নিয়ে রং-তামাশা খেলবেন না।

লেখক : সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।