বাংলাদেশ

রাজনীতির মন্দার বছর ছিল ২০১৫

Looks like you've blocked notifications!

‘রাজনীতি কাকে বলে?’-সেটা নিয়ে একাডেমিক বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের জনপ্রিয় ‘বোঝাবুঝি’ আছে। সাধারণ জনপরিসরে রাজনীতি বলতে বোঝানো হয় আওয়ামী লীগ (এবং এর অঙ্গসংগঠন) কিংবা বিএনপি ( এবং এর অঙ্গসংগঠন) বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে বাম রাজনৈতিক শক্তির (তাদের অঙ্গসংগঠনের) রাজনৈতিক কর্মসূচিকে। কিংবা কোনো একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম, অথবা এমন কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয় যার সাথে রাষ্ট্র, সরকার এবং জনগণের এক ধরনের সংযোগ আছে এবং যার এক ধরনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক তাৎপর্য আছে, সেই রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামকে রাজনীতি নামে শনাক্ত করা হয়। এ রকম একটি জনপ্রিয় বোঝাবুঝির জায়গা থেকে বিবেচনা করলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরনের নরম-গরম পরিবেশ জারি ছিল। ছোট ছোট কিছু বিষয় বাদ দিলে, ২০১৫ সালের বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোটাদাগে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল পাঁচটি : (১) বিএনপি-জামায়াত জোটের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চের ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলন, (২) এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচন, (৩) বিভিন্ন ব্লগার হত্যা, বিদেশি হত্যা ও ধর্মীয় ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ, (৪) যুদ্ধাপরীদের বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর, এবং (৫) পৌরসভা নির্বাচন।

২০১৪ সালের জানুয়ারির ৫ তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোট জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ- এ তিনমাস লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সে সময় ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা সংঘটিত হয় যার কারণে এ আন্দোলন মোটামুটি ‘মানুষ পোড়ানো ও জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন’ হিসেবে পরিচিতি পায়। তিন মাস আন্দোলনের পরও দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সমর্থন না পাওয়ায় এ আন্দোলন কার্যত ব্যর্থ হয়। এ আন্দোলন বিএনপি এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের মধ্যে এক ধরনের মতৈক্য তৈরি হয়। তবে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রশ্নে বিএনপি ‘কৌশলগত নীরবতা’ শরিক দলগুলোর মধ্যে একটি বড় ধরনের ‘না-খুশি’ তৈরি এবং ২০০৮ সালে গঠিত নির্বাচন কেন্দ্রীক বিশ দলীয় জোট কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। যার ফলে বিএনপি পরে আর কোনো শক্ত আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি। তা ছাড়া, এ তিন মাসের আন্দোলনে সংঘটিত নানান সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ততার সূত্র ধরে বিএনপির কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয় এবং ব্যাপক হারে ধরপাকড় হয়। ফলে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক ধরনের ‘গা বাঁচিয়ে চলা’র নীতি গ্রহণ করে, যা স্থানীয় পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি করে। ফলে, একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপির অবস্থান বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে বাংলাদেশে পরবর্তী সময়ে বিএনপি আর কোনো উল্লেখ করার মতো আন্দোলন বা রাজনৈতিক কর্মসূচি ২০১৫ সালে নিতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য এবং বড় ছেলে তারেক জিয়াকে দেখার জন্য লন্ডন গিয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করায় দেশে কার্যত বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। এদিকে জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দল হিসাবে কোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছিল না, কেননা জাতীয় পার্টি নিজেই সরকারের অংশ। সরকারেরই একটি অংশ সংসদের বিরোধী দল হওয়ার এক ‘অদ্ভুত’ ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি না আমাদের জানা নেই। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির আদতে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিই ছিল না। আর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে রায় হওয়া এবং কয়েকটি রায় কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ায় দুয়েকটি নাম সর্বস্ব হরতাল ডাকা ছাড়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে কার্যত জামায়াতের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। তবে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদের নেতৃত্বে বাম সংগঠনগুলো নানান ইস্যুতে সারা বছর বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। তবে তা রাজধানী কেন্দ্রিক কেবলই দলীয় নেতা-কর্মীদের জমায়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কেননা এসব কর্মসূচির সাথে ব্যাপক ভিত্তিতে কোনো জনসম্পৃক্ততা চোখে পড়েনি। তবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘শান্তি চুক্তি’র পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে সারা বছরই ‘অসহযোগ’ আন্দোলনসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল, তবে তা জাতীয় পর্যায়ে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে পারেনি।

এপ্রিলের ২৮ তারিখ অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান আবার সাময়িক সময়ের জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। তবে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঢাকায় সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক এবং চট্টগ্রামে আ জ ম নাসির জয়লাভ করায় বিএনপি আবারও নতুন করে রাজনীতিতে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠলেও বিএনপি কার্যত কোনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তবে, এপ্রিলের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকায় গণসংহতির প্রার্থী হিসেবে গণসংহতির সমন্বয়ক জোনায়েত সাকি বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন কিন্তু সেটা কেবলই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তিনি এবং তাঁর দল তৈরি করতে পারেনি।

এ বছর রাজনীতির ময়দান গরম ছিল মূলত ব্লগার হত্যা, বিদেশি হত্যা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের হামলা নিয়ে। সর্বশেষ হচ্ছে, শুদ্ধস্বর প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলকে, ব্লগার সুদীপ কুমার ওরফে রণদীপম বসু এবং তারেক রহিমকে কুপিয়ে চেষ্টা করে হত্যা করতে না পারলেও জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে এসব উগ্রপন্থীরা শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে অবস্থিত তাঁর নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অফিসে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অভিজিতের বই প্রকাশ করার কারণে দীপনকে হত্যা করা হয়েছে। ফলে, ঘটনার কার্যকারণ বিবেচনায় আমার কাছে দীপনের হত্যাকাণ্ড অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ এবং গুরুতর বলে মনে হয়েছে। অনেকে এটাকে ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদের প্রতিফল হিসেবে দেখার চেষ্টা করেন। যদি তাই হয়, তাহলে এর জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছে আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিই মূলত এসব ক্রমবর্ধমান জঙ্গিপনাকে আসকারা দিচ্ছে। অভিজিৎ রায়, নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ওয়াসিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় কারো হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হয়নি। সত্যিকার অর্থে দীপনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর, আমার বার বার মনে হচ্ছে আমরা কেবল সবাই একটা চরম নিরাপত্তা হুমকির মধ্যেই বসবাস করছি না, বরঞ্চ শকুনের চাপাতির হুমকিতে আজ গোটা বাংলাদেশ তটস্থ। শুধু ব্লগারদেরই হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে দুজন বিদেশি নাগরিককে; একজন ইটালীয় এবং আরেকজন জাপানের নাগরিক। হামলা করা হয়েছে শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে এবং হোসেনি দালানের তাজিয়া মিছিলে। এসব নিয়ে ২০১৫ সাল ছিল মূলত ব্লগার হত্যা, বিদেশি হত্যা এবং শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বছর। দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার কারণে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদিও বড় কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠেনি, তবে রাজনীতির ময়দান এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে কিছুটা ‘মৌসুমি উত্তেজনায়’ গরম ছিল।

২০১৫ সালটা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যুদ্ধাপরাধ এবং একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং বিচারের তিনটি রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ইতিহাসে দায় মুক্তির একটি বিশেষ বছর হিসেবে। এ বছর যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি রায় কার্যকর করা হয়। কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ইতিহাসের দায় মুক্তির বছর হিসেবে ২০১৫ সাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইল ফলকের বছর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে।

২০১৫ সালটা শেষ হয়েছে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ অনুষ্ঠিত সারা বাংলাদেশের পৌরসভা নির্বাচন দিয়ে। এবার প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীক নিয়ে। বিএনপি সারা বছর ধরে রাজনীতির ময়দানে নানান রাজনৈতিক কর্মসূচির পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করে কার্যত অকার্যকর হলেও পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে এক রকম চাঙ্গা করে তুলেছিল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ফলে এই পৌরসভা নির্বাচন বেশ জমে উঠেছিল। আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি প্রচার প্রচারণায় সমানে সমানে পাল্লা দিলেও নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ব্যাপক ব্যবধানে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়ায় সৃষ্ট উত্তেজনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তা ছাড়া, নির্বাচনের কিছু অনিয়মের অভিযোগ আনলেও বিএনপির পক্ষ থেকে সে অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো আলামত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। নির্বাচন-উত্তর একটা প্রেস কনফারেন্স করার মধ্যেই বিএনপির প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ফলে, বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে কনকনে শীতের দিনে শিগগিরই গরম হওয়ার আর কোনো নিকট সম্ভাবনা নেই।

মোটা দাগে উল্লেখিত এসব রাজনৈতিক ঘটনার বাইরেও বেশ কিছু বিষয় ২০১৫ সালে সারা বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির ঠাণ্ডা আকাশে কিছুটা গরম হাওয়া দিয়েছিল তার মধ্যে একটি হলো অষ্টম বেতন কাঠামো নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন। অন্য আন্দোলনের মধ্যে ছিল  শিক্ষা-ক্যাডারের আন্দোলন, প্রকৃচির আন্দোলন, সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন, ২০১৫ সালের মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, রাজন-রাকিব হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন, লন্ডনের বিভিন্ন সভা সমাবেশে তারেক জিয়ার দেওয়া নানান বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নানান বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ, এবং সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের করা যথাক্রমে একাত্তরে শহীদের সংখ্যা এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য রাজনীতিতে কিছু গরম হাওয়া সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু সেটাও ছিল বেশ ক্ষণস্থায়ী।

পরিশেষে, রাজনৈতিক আন্দোলন, রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবেচনায় রাজনীতির বাছবিচার করলে ২০১৫ সাল ছিল রাজনীতির জন্য মূলত মন্দার বছর। রাজনৈতিক গতিশীলতা মূলত সমাজের গতিশীলতাকে নির্দেশ করে। আর রাজনীতির এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে সরব থাকার ভেতর দিয়ে মূলত সরকারের কর্মকাণ্ডের যেমন একটা স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়, তেমনি জনগণের আবেগ-আকাঙ্ক্ষা  এবং চাওয়া-চাহিদারও একটা প্রতিফলন ঘটে। আমরা অনেকেই মনে করি, রাজনৈতিক ডামাডোলের বাইরে থাকার কারণে দেশ সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাদের এটাও বুঝতে হবে কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই উন্নয়ন বলে না। মানুষের সামগ্রিক জীবন মানের উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা, ভিন্নমত ও ভিন্ন চিন্তার সুরক্ষা, নারীর প্রতি সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজের নিচতলার মানুষের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা, সমাজে বিদ্যমান-ক্রমবর্ধমান সামাজিক বৈষম্য হ্রাসকরণ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মানের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি একটি উন্নত দেশের প্রাথমিক লক্ষণ। সমাজে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার অভাবের কারণে মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হয় না। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, ভিন্নমত মূলত মূল মতকে পরিশুদ্ধ করে। এসব বিবেচনায় নিলে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ২০১৫ সাল ছিল বাংলাদেশের সুস্থ রাজনীতির অচর্চার বছর। আশা করছি, ২০১৬ সাল হবে সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি সুন্দর, উদার ও সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার বছর।  

লেখক : নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।