প্রতিক্রিয়া

ধর্ষণ ও পুরুষের মানসিকতা

Looks like you've blocked notifications!

আজকের বাংলাদেশ উত্তাল। পাড়ায় পাড়ায় আলোচনার স্রোত বইছে। যদিও আমরা জাতিগতভাবে এমন যে আমাদের আলোচনার জন্য কোনো বিষয় খুঁজে দিতে হয় না; বরং অলস সময় কাটানোর জন্য আমরাই খুঁজে নিই। আর দেশ হিসেবে আমাদেরটা এতই বেশি মহান যে আমাদের আর আজকাল বিষয় খুঁজতে হয় না।

তনু কে? তাঁকে এই সপ্তাহখানেক আগে আমরা কেউ চিনতাম না। ও আমাদেরই কোনো এক অখ্যাত বোনের মতো কলেজ যেত। টুকটাক নাটকও করত। এখন আমরা সবাই তাঁকে চিনি। ও এখন তারকা। তবে সেটা জীবনের বিনিময়ে। তাঁর প্রিয়তম সম্পদ সম্ভ্রমের বিনিময়ে। গগনবিদারী চিৎকারের বিনিময়ে। ঘটনা পরিষ্কার করা একান্তই অপ্রয়োজনীয়, কারণ পত্রিকা আর সামাজিক গণমাধ্যম থেকে আহরিত জ্ঞান চায়ের দোকানে ফলাতে আমরা সবাই জানি।

কী জানি? অথবা কী জানতে চাই? আমরা জানি, মেয়েটার নাম সোহাগী জাহান তনু। তাঁর গ্রামের বাড়ি তিতাস উপজেলায়। তাঁরা অলিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহাগী মেজ। তাঁর আর্থিক অসচ্ছলতা হেতু টিউশনি করতেন তিনি। আর সেটা করতে গিয়েই কাপুরুষদের হাতে মেয়েটার জীবন আর সম্মান দুই গেল। পুরুষের রাষ্ট্রযন্ত্র কি আর পুরুষকে বিচার করতে পারে? হ্যাঁ, কিছু নারী অবশ্য ক্ষমতায় আছেন। তবে তাঁরা যে পুরুষের ক্ষমতাকেই বাস্তবায়ন করতে পুতুলের ভূমিকা পালন করছেন, তা সবাই জানে। সে আলোচনা আজকে তোলা রইল। তনু সম্পর্কে আমরা আরো জানব। তবে এখন নয়। কারণ, পুরুষরা এখন আপাতত তনুকে কীভাবে ধর্ষণ করা হতে পারে, তা নিয়েই কল্পনাবিলাসে মত্ত আছে। ধর্ষিত তনুর জন্য অপেক্ষা করে আছে মৃত্যু-পরবর্তী আরেক দফা ধর্ষণ, তবে তা কিছুটা সাম্যবাদী আকারে। একেবারে গণপরিসরে। পত্রিকায় পড়ামাত্রই পুরুষালি রসাস্বাদন করা যাবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, তনু যেন মৃত্যু-পরবর্তী আরেক দফা ধর্ষণের স্বীকার না হয়।

লেখক : সংস্কৃতিকর্মী