নারী নির্যাতন

এক সুঁতোয় বাঁধলো তনু

Looks like you've blocked notifications!

সমাজের আর দশটা অনাচারের মতো হত্যাকাণ্ড আর ধর্ষণ একাকার হয়ে গেছে। কোনো কিছুরই বিচার নেই। বিচারহীনতার এ সংস্কৃতিই আমাদের অপরাধের মাত্রাটা বাড়িয়ে চলেছে। আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। আবারও সংঘটিত হচ্ছে অপরাধ। মানুষ কত জঘন্য হতে পারে! চেনা কিংবা অচেনা একটি মুখের সাথে পৈশাচিকতা ও হত্যার দিকে এগিয়ে যেতে ন্যূনতম কুণ্ঠাবোধ করে না কেউ। 

সমাজিক অসংগতির এ রূপ আজকের সভ্য সমাজেই বেশি বিদ্যমান! আর দশটা অপরাধের মতো হলেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী নাট্যকর্মী তনু হত্যার বিষয়টি আজ বেশ আলোচিত-সমালোচিত। বেশ দেরিতে হলেও ধর্ষণ, হত্যার মতো বর্বর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ চলছে সারা দেশব্যাপী। গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে। পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে। এর আগেও বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছে। বিশেষ করে সিলেটে রাজন হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ও দেখেছে দেশবাসী। তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইছে এবং এর সর্বজনীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের মতো এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে অপরাধীরা একটু হলেও বাধাপ্রাপ্ত হবে। সমাজে অনাচার কমবে।

এরইমধ্যে তনু লাশ কবর থেকে উঠানো হয়েছে বৃহত্তর তদন্তের জন্য। যদিও এ ধরনের তদন্তের অনেক রিপোর্ট আমরা আটকে থাকতে দেখেছি। শেষমেশ ফলও পাওয়া যায় না অনেকগুলোর। নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সময়ও এমনটা হয়েছে। তবুও আমরা আশাবাদী তনুর ক্ষেত্রে তদন্তের রিপোর্ট পাব। অপরাধীরা চিহ্নিত হবে। তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে। এখানেও আশা করার অনেক কিছুই থাকছে। নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে পারলে এ রকম হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের হয়ে আসবে।

একটু ভিন্নভাবে দৃষ্টি দেওয়া যাক। তনুর জন্য আজ যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তাতে অংশ নিয়েছে এ দেশের স্কুল, কলেজ ও  বিশ্ববিদ্যালয়ের  হাজারো শিক্ষার্থী। ঘটনাটি বেশ আলোচিত-সমালোচিত হওয়ার কারণে এ সম্পর্কে তারা বেশ অবগত। আন্দোলনটার ফলে এখনি যদি এ ঘটনার একটা সুরাহা হয়; তাহলে আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে একটা বার্তাও পৌঁছাবে অপরাধ করলে তার শাস্তি পেতে হয়। এ ধরনের একটা উদাহরণ অপরাধ প্রবণতা কমাতে সাহায্য করবে।

ঠিক এখনি প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মাধ্যমে সমাজিক অনাচারের এই গতি যদি রুদ্ধ করা না যায় তাহলে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। যার ফলে বিপর্যস্ত হবে আমাদের সমাজিক শৃঙ্খলার প্রাচীন কাঠামো। যার ওপর ভিত্তি করে একটি সমাজ তার নির্ধারিত কর্মকাণ্ডে পরিচালিত হয়। সমাজের গোড়া হতেই ধর্ষণ, হত্যার মতো অমানবিক কালো মেঘের মূল উৎপাটনে ঐক্যবদ্ধ এ প্রয়াস অব্যাহত থাকুক। সমাজ সুন্দর হোক। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্যায়-অনাচার মুক্ত পরিবেশ আমাদের সবার কাম্য। তনু থেকে হোক সে শুরু। 

লেখক : ‘ডেইলি দ্য সান’ পত্রিকার শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।