রাজনৈতিক সংকট : সমাধান কোন পথে?

Looks like you've blocked notifications!
ফিরোজ আহমেদ

একদিকে সরকারের নৈতিক জোর নেই; অন্যদিকে সরকারকে যারা এক্ষুনি ফেলে দিতে চাইছে, তাদের নেই গায়ের জোর—এমন এক পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা কীভাবে কাটতে পারে? খুব সম্ভবত কোনো পূর্বানুমানই এমন সময়ে কাজ করবে না। আগেকার কোনো কোনো টোটকা এসব পরিস্থিতিতে কমবেশি কাজ দিয়েছিল, সেগুলোও এরই মধ্যে অকেজো হয়ে গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমাধান কত দূর, আপাতত কেউই বলতে পারছেন না। এমনকি প্রধান কুশীলবরাও নিশ্চিত নন, কীভাবে বর্তমান সংকটের সমাধান হবে। সরকারের প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়ে বিচার করলে, আরো বেশি ক্ষমতা পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাবের হাতে তুলে দিয়ে, আরো কিছু ক্রসফায়ার, আরো বহু গ্রেপ্তার এবং ভীতি প্রদর্শন করে তারা পরিস্থিতি ঠান্ডা করার আশা করছে। তাদের কর্মপন্থা থেকে মনে হবে, বর্তমান সংকট একটা আইনশৃঙ্খলার সংকট। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে বাড়তি ক্ষমতা এবং রসদ সরবরাহ করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। অন্যদিকে, বিরোধী দল অতীতের অভিজ্ঞতায় জানে, বর্তমান জ্বালাও-পোড়াও কায়দায় অবরোধ-হরতাল জারি রাখা গেলে সরকার নাজুক পরিস্থিতিতে পড়বে। পেট্রলবোমা, বাসে আগুন, অগ্নিদগ্ধ মানুষ দুই পক্ষের এই খেলার উপকরণ মাত্র।

সরকারের বক্তৃতা-বিবৃতিতে যা নেই, সেটা হলো রাজনৈতিক সংকট হিসেবে বর্তমান সংকটের স্বীকৃতি। বর্তমান সরকারের নৈতিক অবৈধতা কিংবা জনসম্মতিহীনতা তারা স্বীকারই করতে চায় না। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের দাবির ভেতর যা নেই, সেটা হলো সংকটের স্থায়ী সমাধানের কোনো কার্যকর প্রস্তাব। একদল চায় ক্ষমতা ধরে রাখতে, অন্যদল সেটা কেড়ে নিতে। কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখার বা হস্তান্তরের যে বৈধতা আসে জনসম্মতি থেকে, বাংলাদেশে সেই নির্বাচনের প্রক্রিয়াটিই ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে প্রতি পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে বারবার একই অরাজকতা নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং তা হানাহানি উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও পাচ্ছে। ক্ষমতার বৈধতা নেওয়ার কিংবা রদবদলের এ প্রক্রিয়া মোটামুটি গ্রহণযোগ্যভাবে সেসব রাষ্ট্রেই দেখা যাবে, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচন হলেও নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ—রাষ্ট্রের এ তিনটি অঙ্গের ক্ষমতার পৃথকীকরণ সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্রিয় থাকে। ফলে সরকারের পক্ষে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হয় না। 

একদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বিশেষ ধরনের ‘গণতন্ত্র’ মার্কিন কিংবা ব্রিটিশ ধরনের গণতন্ত্রের চেয়েও অনেক বেশি ‘গণতান্ত্রিক’; ওই দেশগুলোতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নাগরিকরা বড়জোর একটি সংসদ কিংবা সিনেট বা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। বাংলাদেশে নির্বাচিত করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। এ দেশে টেম্পোস্ট্যান্ডের ইজারা থেকে শুরু করে উড়ালসেতুর ঠিকাদারির বিলি-বণ্টন, পিয়ন থেকে শুরু করে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা—সবকিছুই নির্ধারিত হয় একটি মাত্র নির্বাচনে। বৈদেশিক বাণিজ্যের মাখন থেকে শুরু করে নদী ভরাট করে বিপণিবিতান বানানো, ঘুষের একচেটিয়া থেকে পোশাকশিল্পের ঝুট কাপড়ের নিয়ন্ত্রণ, পাড়ার ডিশের ব্যবসার দখল থেকে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ—কোনোটিই বাদ যাবে না এ তালিকা থেকে। ফলে সংগত কারণেই শাসক দলগুলো জনগণের ‘রায়’ হাতে নিয়েই চোখ-কান বন্ধ করে পকেট ভর্তি করতে শুরু করে। সম্পদ আহরণের কায়দাটা যেহেতু লুণ্ঠনমূলক, ফলে ক্ষমতা হাতে পাওয়ামাত্র সর্বত্র পূর্বতন দখলদারদের উচ্ছেদ এবং বিতাড়ন প্রধান কর্মসূচি হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে শাসকরা ক্ষমতা রক্ষায় আর বিরোধীরা ক্ষমতাবানকে ফেলে দেওয়ার বাসনায় যে মরিয়া হয়ে উঠবে, তা বলা বাহুল্য।

বিরোধী দলে থাকাটা তাই কারো জন্যই এখানে নিরাপদ নয়। অন্যদিকে, ক্ষমতায় থাকলে সবকিছু চলে আসবে হাতের মুঠোয়। কলকারখানা বা কৃষি এখানে সম্পদ কামানোর প্রধান উপায় যেহেতু না, কাজেই উৎপাদনশীলতার ধারাবাহিকতা রাখার কোনো তাগিদও শাসকগোষ্ঠী সেভাবে বোধ করে না। এ প্রক্রিয়ারই আরেকটি ফলাফল উৎপাদনশীল খাতগুলোর দুর্বল ও ভঙ্গুর দশা। 

রাষ্ট্রের উৎপাদনশীল খাতগুলো বিকশিত হওয়ার অভাবেই কিন্তু আমাদের এই লুণ্ঠক চরিত্র আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। একদিকে উৎপাদনশীলতা ন্যূনতম থাকায় রাজনৈতিক ঠিকাদারি এখানে সম্পদ আহরণের প্রধান উপায়, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় ওই সামান্য উৎপাদনী খাতও দেশীয় উৎপাদনশীলতা বিকাশে সামান্য ভূমিকা রাখে। এটা একটা সংগঠিত চক্রাবৃত্তের অর্থনীতি। এখানে বহুজাতিক উৎপাদনের স্থানীয় প্রতিনিধিরা কৃষককে মুনাফা বঞ্চিত করে সস্তা শ্রমিক পাওয়ার জন্য।

লক্ষণীয়, দুর্নীতির দায়ে বিগত সরকারগুলোর রাঘববোয়ালের কারো কিন্তু বিচার হয় না। দুর্নীতিবাজরা বেঁচে যায়। পরের সরকারে কিছুটা চুপচাপ থেকে কিংবা রফা করে নিয়ে সময়ের অপেক্ষায় থাকে। নির্যাতন-জেল-উচ্ছেদ ভোগ করতে হয় প্রত্যক্ষ মাস্তানি আর অস্ত্রবাজির ‘ছোটলোকি’ কাজে নিয়োজিতদের। আর ব্যক্তিগত জিঘাংসার কারণ ঘটানো অল্প কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে পরবর্তী সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। দুর্নীতির প্রধান খাতগুলোর তদন্ত ও বিচার না হলেও বিরোধীদের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়ন আবার বহুগুণ বেশিই হয়। ’৯০-পরবর্তী ইতিহাসে দেখা যাবে, প্রতিটি সরকারই প্রতিপক্ষ দমনে আগেকার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর মানে হলো এই যে, এ দেশে দুর্নীতির আইনসংগত বিচার করা হবে না, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের দমন করা হয়। দুর্নীতির যথাযথ বিচার করতে গেলে যে নিজেদেরও দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা বানানোর ব্যবস্থাটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন—জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনে একটি আশ্চর্য ধারাবাহিকতা গত চারটি সরকারই দেখিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, বিপুল ঘুষ ও অন্যান্য রফার মাধ্যমে আগেকার দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে আপসরফা। তৃতীয়ত, প্রধান দুর্নীতিবাজদের পরস্পরের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বর্ম হিসেবে ভূমিকা পালন। এ প্রক্রিয়াটিতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। পরিবহন কিংবা স্বাস্থ্য কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্রয়—সব খাতে জনগণের অর্থের একই পরিণতি। 

বাংলাদেশের যৎসামান্য দেশীয় ভিত্তির ওপর টিকে থাকা শিল্প-কারখানাগুলোর দিকে তাকান, অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে কিংবা রাজনীতিতে তাদের মতামতের মূল্য প্রায় নেই। এরা দেশের প্রধান বড়লোক শ্রেণিও নন। অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো, যেমন—মুদ্রামান হ্রাস কিংবা এমনকি সরকারিভাবে ধানের সস্তাদর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয় রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প-মালিকদের দিকে তাকিয়ে। বর্তমান সংকটের চূড়ান্ত সমাধান কী হবে, সেটা নির্ধারণেও প্রধান খেলোয়াড় হওয়ার কথা পোশাক রপ্তানিকারকদেরই। অন্যদিকে, পোশাক মালিকরা যেহেতু শ্রেণি হিসেবে জনপ্রিয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে টাকা কামানো রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো এদের রাজনৈতিক বাতাবরণ হিসেবেই, ব্যবস্থাপক অংশ হিসেবই ভূমিকা পালন করে। কেউ কেউ আছেন যাঁরা দুই গোষ্ঠীরই সদস্য; কিন্তু সরকারি দল রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হলে এবং একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য উপায়ে নিজ শ্রেণির মধ্যে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার সম্ভাবনাও রুদ্ধ হলে পোশাকশিল্পের উৎপাদনী প্রক্রিয়া চরম মাত্রায় বিপদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতেই সাধারণত অনির্বাচিত শক্তিগুলো সরাসরি রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনার দখল নিয়ে নেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সম্ভবত তাদের মরিয়া কামড়ের মধ্য দিয়ে সে পরিস্থিতিই সৃষ্টি করতে চাইছে। সরকারের ভাবনাটাও একই তালে হওয়ার কথা, রাষ্ট্রের লাগাম ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা তারা করবে, ব্যর্থ হলে নির্বাচনে যাওয়ার ভয়াবহ ঝুঁকি নেওয়ার বদলে অনির্বাচিত কাউকেই তারা বেশি পছন্দ করবে।

রপ্তানি পোশাক যে দেশে অর্থনীতির প্রধান খাত, সেখানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিদেশিদের প্রভাব গভীরই হওয়ার কথা, যদিও এটাই বিদেশি প্রভাবের একমাত্র কারণ বা উৎস নয়। ২০১১ সালের নির্বাচনের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রথম খুব প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তার সেবারের পরাজয়ের সঙ্গে বিদেশিদের সম্পর্কের কথা। এবারে পরিস্থিতি আরো খোলামেলা। দুই দলই অদৃষ্টপূর্ব রকমে, বিশেষ করে ভারত সরকারের আশীর্বাদ রক্ষার কিংবা দৃষ্টি আকর্ষণের যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, বোধকরি এতটা নগ্নভাবে আগে কখনো এটা দেখা যায়নি। মার্কিন কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো সাবেকী কায়দায় ততটা খোলামেলাভাবে দেশে দেশে অভ্যুত্থান বা পালাবদলের নিয়ন্ত্রক হিসেবে এখন আর ভূমিকা পালন করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কৌশল সরকার যতক্ষণ সামলাতে পারে, ততক্ষণ সরকারের সঙ্গে থাকার, অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতায় পড়ে গেলে নতুনটিকে ব্যবস্থাপনায় রাখার। আগেকার মতো ঘুষ দিয়ে সামরিক শাসক তাদের দরকার পড়ে না, বরং রপ্তানি ঠিক রাখতে দেশীয় ক্ষমতাধর গোষ্ঠীগুলোই সংবেদনশীল মুহূর্তগুলোতে তাদের উপদেশ মান্য করে। এক/এগারো-পরবর্তী সময়ে দূতাবাসগুলোর ভূমিকা সে সাক্ষ্যই দেয়। যতদিন সরকার রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনার দিকটি সামলাতে পারছে বলে মনে করবে, ততদিন নিশ্চয়ই তারা অপেক্ষাই করবে। কিন্তু বাংলাদেশের সস্তা শ্রমজাত বস্ত্র ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য জরুরি। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের কাছে যেমন জিম্মি পোশাকশিল্প মালিকরা, পোশাকশিল্প মালিকদের আবদারও তেমনি তারা অনেকখানিই রক্ষা করবে। এর পরও আমাদের মনে রাখতে হবে, বদলে যাওয়া দুনিয়ায় তারা অপেক্ষা করবে আওয়ামী লীগ নিজেই এ সংকট সামলাতে পারবে কি না, সেটা দেখার জন্য। 

বিশ্ব ইতিহাসে এ ঘটনাগুলো কিন্তু খুব নতুন কিছু নয়। ইংল্যান্ডে সংসদীয় রীতির শুরুর দিনগুলোর বর্ণনায় লর্ড ম্যাকওলে লিখেছেন, টোরি বা হুইগ যারাই নির্বাচনে জিতত, অপরপক্ষ যতদ্রুত সম্ভব লন্ডন নগরী ছেড়ে পালিয়ে বাঁচত নিজের জমিদারিতে কিংবা বিদেশে আশ্রয় নিত। দুর্ভাগারা লন্ডন টাওয়ারে ফাঁসিতে ঝুলত কিংবা কারাগারে পচে মরত। খেলার পেছনের কারিগর থাকতেন রাজা কিংবা রানি। থাইল্যান্ডেও কাছাকাছি দৃশ্যই আমরা দেখছি ভিন্ন কিছু বাস্তবতাসহকারে। বহু ক্ষেত্রে ক্ষমতার এ লড়াইয়ে হতাহতের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বহু বেশি। পার্থক্য এই শুধু, তারা প্রধানত শহীদ, ঘটনার শিকার নন। কোথাও এত কুৎসিতভাবে খেলার উপকরণ হননি, এমন সব মানুষ এই পুরো বিষয়টির সঙ্গে যাদের কোনো সম্পৃক্ততা বোধ নেই। এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তের শুরু হয়েছিল আওয়ামী-জামায়াত যৌথ আন্দোলনের সময় বাসে আগুন দিয়ে। এর বর্তমান বিকাশ নজির ছাড়ানো অগ্নিদগ্ধের সংখ্যায়। প্রতিটি খারাপকে অতিক্রম করেছে এখানে খারাপতর দৃষ্টান্ত।

আশু নিষ্ক্রান্তি তাই হয়তো যুদ্ধাপরাধী ও মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনের বন্দোবস্ত করা, দুর্নীতি দমন এবং বিগত দিনের দুর্নীতিবাজদের বিচারে নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। রাষ্ট্রীয় সকল অর্থের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেবে জবাবদিহির আওতায় আনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব সংস্কারের চাপ সর্বত্র অনুভূত হচ্ছে এবং আজ কিংবা কাল সেটা কমবেশি করতেই হবে। কিন্তু পরিস্থিতির পুরো বদল সেটাতে হবে না, তা বলা বাহুল্য।

উত্তরণ একটা পথেই হতে পারে। সেটা বর্তমান অগণতান্ত্রিক সংবিধান বাতিল করে গণতান্ত্রিক, জনগণের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশের উপযুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের উপযুক্ত একটি সংবিধান নির্মাণের প্রক্রিয়ায়। সেটা একটা ধারাবাহিক সংগ্রামের পথেই অর্জিত হতে পারে। কেননা, জনগণের সংবিধান রচনা এবং তাকে কার্যকর করার জন্যও প্রয়োজন তাকে পাহারা দেওয়ার উপযুক্ত জনগণের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেটা রাজনৈতিক দল থেকে শুরু শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী সংগঠন গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পুনর্গঠন পর্যন্ত ব্যাপৃত। আমাদের চেনা ইতিহাসকে যদি সাক্ষী মানি, দেশে দেশে সেই নির্মাণ ততদূরই সম্ভব হয়েছে, যতদূর তা অর্জিত হতে পেরেছে প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির এবং তার প্রতি সহানুভূতিশীল পক্ষগুলোর লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতাও এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। 

ফিরোজ আহমেদ : কলাম লেখক ও সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, গণসংহতি আন্দোলন