ক্রিকেট

হাই স্পিন অ্যান্ড হাই স্পিড

Looks like you've blocked notifications!

 

হাই স্পিড না কি হাই স্পিন? ক্রিকেট খেলাটা কী? এই প্রশ্নের উত্তর চলমান এক বির্তক। তবে সাদা চোখে উত্তর- হাই স্পিড গেম। একটা লোক দৌঁড়ে এসে বল করছেন। সেখানে গতি। আর একটা লোক ব্যাট করছেন। দ্রুত গতিতে ছুটে আসা বলটা পিচ করার পর ব্যাটসম্যান সেটা দেখছেন। দেখার পর কী খেলবেন সেটা চিন্তা করে শরীরটাকে প্রস্তুত করার জন্য গড়ে সময় পান পাঁচ থেকে সাত মিলি মিনিট! ব্যাটসম্যানকে এই দ্রুত সময়ের মধ্যে কত কিছু ভাবতে হয়। নিজের তিনটা স্টাম্পকে আগলে রাখা, যাতে বোল্ড না হন। সঙ্গে ভাবতে হচ্ছে আরো নয় ভাবে তিনি আউট হতে পারেন। অতএব আউট না হওয়ার সব চিন্তাই তাঁকে করতে হচ্ছে। সঙ্গে স্কোর বোর্ডেও দিকেও তাকাতে হচ্ছে। সেটাকে সচল রাখতে হচ্ছে। কখনো খুব দ্রুত গতিতে রান তোলার কথা ভাবতে হচ্ছে।

সুতরাং ক্রিকেট হাইস্পিড গেম। কিন্তু সেখানে স্পিন বলও আছে। স্পিনারদের আমরা স্লো বোলারও বলছি। তারা কি খেলাটাকে গতি মন্থর করে তোলেন? সেখানে যদি কারো মনে হয়, হ্যাঁ তাই। তাকে দোষ দেওয়া যাবে না।

তবে এই জমানায় ক্রিকেট যখন ল্যাবরেটরির মধ্যে ঢুকে পড়েছে, তখন অন্য কথাও বলতে হচ্ছে। কিংবা ক্রিকেটকে হাই স্পিড গেম বলার পরও একটা পাদটীকা লিখতে হচ্ছে। স্পিনারও এখন স্পিনের চেয়ে স্পিডের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি জমানায়। স্পিন করানোর চেয়ে স্পিনাররা বলটাকে জোরের ওপর ডেলিভারি দিচ্ছেন। ব্যাটসম্যান মারতে গিয়ে আউট হচ্ছেন। স্পিনাররা উইকেট পাচ্ছেন। ক্রিকেটের সীমিত কিংবা সংক্ষিপ্ত সংস্করণে স্পিনারদের বোলিং কাঁটা-ছেঁড়া করলে তার চেয়ে বেশি কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রিকেট বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু  মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। গত আড়াই দশকে টেস্ট ক্রিকেটের দিকে তাকান। কত বড় বড় তারকা এসেছেন। খেলেছেন। ব্যাটসম্যানদের এই রাজত্ব করার সময়েও বেশি সফল স্পিনাররা! এবং সেই স্পিনারদের নামগুলো কত ওজনদার! শেন ওয়ার্ন, মুরালিধরন,অনিল কুম্বলে, সাকলায়ান মুশতাক, হরভজন সিং। ওয়ার্ন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক। ভারতের পক্ষে সেই রের্কডের মালিকানা অনিল কুম্বলের। আর মুরালিধরন? টেস্ট ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক এবং সংখ্যাটা ৮০০! এক সময় যা ছিল রীতিমতো অকল্পনীয়। তাঁদের এই সাফল্যের রহস্য কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ব্যাটসম্যানদের স্পিন খেলার টেকনিক ঠিক মতো শেখানো হচ্ছে না। আবার অন্যদিকে বলা হচ্ছে- স্পিনাররা অনেক উন্নতি করছেন। নতুন নতুন ডেলিভারি উদ্ভাবন করছেন। যা ব্যাটসম্যানরা সহজে খেলতে পারছেন না। আউট হয়ে যাচ্ছেন।

 কিন্তু সীমিত ওভারের ম্যাচে স্পিড বড় একটা ফ্যাক্টর। এখন স্পিনাররাও হাই স্পিন বল করছেন। ব্যাটসম্যানের ব্যাটের গতির চেয়ে স্পিনের গতি বাড়াচ্ছেন। ব্যাটসম্যান খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছেন। কিন্তু স্পিনটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। আর ব্যাটসম্যানরা তাঁদের ব্যাটের স্পিডে পার পেয়ে যচ্ছেন। আবার হাই স্পিনের টেকনিক যাঁরা দুর্দান্তভাবে রপ্ত করেছেন তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মাইকেল ক্লার্ক এবং বিরাট কোহলির মতো ব্যাটসম্যানরা সহজে পার পেয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন।

 স্পিন নিয়ে বাংলাদেশের গবেষণা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর একটা দল ছিল। হয়তো এখনো আছে। মোহাম্মদ রফিক টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সফল হওয়ার পর এক ঝাঁক বা-হাতি স্পিনার এলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এনামুল হক জুনিয়র, আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসান। এদের মধ্যে এখন দলে আছেন শুধু সাকিব আল হাসান। সারা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে চার ওভার করে বল করে দিচ্ছেন। উইকেট পাওয়ার চেয়ে রান কম দেওয়ার কৃতিত্বটাকে বড় করে দেখা হয় যে লিগে। টেস্ট ক্রিকেটেও অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশ কম খেলার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সাকিবদের বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগও কমে যাচ্ছে। শুরুতেই যে কথাটা বলা, ক্রিকেট হাই স্পিড গেম। তাই বাংলাদেশও  হাই প্রোফাইলের একজন ফাস্ট বোলিং কোচ খুঁজে এনেছে। কোর্টনি ওয়ালশ দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু স্পিনারদের কী হবে? তাঁদের দায়িত্ব কে নিচ্ছেন?

খুব স্পিডে উত্তর দেওয়া যেত। যদি দ্রুত গতিতে দুই পক্ষের সইটা হয়ে যেত। তবে হতে আর কতক্ষণ? সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারতের সাবেক বাঁ-হাতি স্পিনার ভেঙ্কটপতি রাজুই হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ। হাই পারফরম্যান্স ইউনিটে কাজ করে গেছেন তিনি সপ্তাহখানের জন্য ঢাকায়। তাঁর প্রেসক্রিপশনে মোশাররাফ হোসেন রুবেলকে প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাকা হয়েছে আট বছর পর। আর টেস্ট ক্রিকেটে ষোল বছর পার করার পর, ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতে একমাত্র টেস্ট খেলতে যাবে বাংলাদেশ আগামী ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে। সেই টেস্টটাও হবে রাজুর শহর হায়দরাবাদে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বড় একটা ভূমিকা রেখেছে। এ দেশের ক্রিকেটের  গোড়ার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বার তিনেক ডেকান ব্লুজ দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। সেই হায়দরাবাদেই বাংলাদেশ খেলবে ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট। সবকিছু বিবেচনা করে রাজুর চেয়ে ভালো কাউকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পাচ্ছেও না। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের আগে নিউজিল্যান্ড সফরেই রাজু যোগ দেবেন বাংলাদেশ দলে। যদি খুব হাই স্পিডে অতি নাটকীয় কিছু না ঘটে!

আর রাজুর প্রথম কাজটাও নাকি হবে হাই স্পিনের টেকনিকটা আরো ভলো করে বোঝানো। হাই স্পিন কীভাবে নিখুঁত করা যাবে এবং সেটা কীভাবে খেলা যাবে, দুটোই অবশ্য শেখাতে হবে তাঁকে। বাঁ-হাতি স্পিনারের জন্য বাংলাদেশ যথেষ্ট উর্বর জমিন। রাজুর জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ভালো এক-দুজন ডান হাতি অফ স্পিনার বা লেগ স্পিনার খুঁজে বের করা। পারলে উপকৃত হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তিনি পারবেন তো?

লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভি