ক্রিকেট

তাসকিন-সানির ফিরে আসায় ঈদের আনন্দ

Looks like you've blocked notifications!

দশ দিন আগে গত হওয়া ঈদের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেক ঈদ! দেশের লক্ষ-কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে তাসকিন-সানির ফিরে আসা ঠিক তেমনই। রাখঢাক না রেখেই তাসকিন আহমেদ তো বলেই দিয়েছেন বোলিং অ্যাকশনের বৈধতা ফিরে পাওয়ার এই দিনটি তাঁর কাছে ঈদের মতো লাগছে। আরাফাত সানির কাছেও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। তাঁরা দুজন তো বটেই দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে এর থেকে ভালো খবর এই মুহূর্তে আর নেই।

এ বছরই টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে ভারতের ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন আম্পায়াররা। তাসকিন এদিন  চার ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। অন্যদিকে আরাফাত সানি দুই ওভারে ১০ রান দিয়েও ছিল উইকেট শূন্য। ম্যাচ পরিচালনা করেন ভারতের সুন্দরম রবি ও অস্ট্রেলিয়ার রড টাকার। ম্যাচ শেষে তাঁরা নিজেদের সন্দেহের কথা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে জানিয়েছিলেন। তাসকিন-সানির বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়ারদের সন্দেহ হওয়ার পর একটা সময় তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। 

তাসকিন ও সানি দুজনেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে। তাসকিনের বয়স ২১ আর আরাফাতের ৩০। দুজনেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৪ সালে। বাংলাদেশের ৪৩তম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় তাসকিন আহমেদের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। আর ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়ে জানান দেন বাংলাদেশের আগামীর সুপারস্টার তিনি। মাশরাফী পরবর্তী বাংলাদেশে যত ফাস্ট বোলার এসেছেন তাঁদের মধ্যে তাসকিন বেশ সম্ভাবনাময়ী একজন এটা বলতেই হবে। এজন্যই কি না তার ওপর এই অশুভ দৃষ্টি!

আরাফাত সানি ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিক পারফর্মার। অনেক বছর ধরে খেলছেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা আড়াইশর ওপর। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে সানির টি -টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অভিষিক্ত হন এই স্পিনার। সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ করা যেতে পারে তবে তাসকিনের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করায় তখন দেশবাসী বেশি ভেঙে পড়েছিল। ভারতে গিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ায়; ভারতীয়দের  ষড়যন্ত্র কি না? এমন বিশ্লেষণে মত্ত ছিলেন অনেকে। সব শঙ্কা উড়িয়ে বোলিংয়ের দুই অস্ত্র ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসি তাঁদের বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে অসম এক লড়াইয়ে জিতল বংলাদেশ!

সাম্প্রতিক সময়ে টিম বাংলাদেশের নতুন অভ্যুদয়ের পেছনে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণটাই যেখানে প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঠিক তখনই এমন ধাক্কা আমাদের ক্রিকেটের আকাশে একটা মেঘ জমা হয়েছিল। বিশেষ করে গত এশিয়া কাপে ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে তাসকিনের বোলিং। এশিয়া কাপের শুরু থেকে মিতব্যয়ী বোলিংয়ে দলের স্পট লাইটে উঠে আসা এই তরুণ পেস বোলারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ পোষণের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছিলেন না কোচসহ অন্যরা। ঠান্ডা মাথার হাতুরুসিংহে তো তখন বলেছিলেন ‘আমি আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলিনি। আমার সংশয় আছে তাদের ভূমিকা নিয়ে।’ কেমন যেন জটলা পাকিয়ে যাচ্ছিল সব কিছু। একই ম্যাচে দু-দুজন বোলারকে রিপোর্ট করা হলো; তাও আবার ভারতের মাটিতে! যে আম্পায়াররা এটা নিয়ে রিপোর্ট করলেন তাঁরা কিছু দিন আগেও বাংলাদেশ দলের ম্যাচ পরিচালনা করার সময় কোনো কথা বলেননি। তাহলে আজ কেন? এই প্রশ্ন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল সবার মনে। তাসকিনের সর্বশেষ সাতটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৩৮টি ডেলিভারির মধ্যে ৭৫টি ডট, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমন বোলিং, ভাবা যায়! ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনালে ৯টি ডট, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং বোলিং (৪-১-১৪-১), ২৪টি বলের মধ্যে ১৬টি ডট, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ১৮ নম্বর ওভারে ৬ এবং শেষ ওভারে ৭ রানের বেশি খরচা করেননি যে বোলার, তাঁকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করায় বিতর্কটা তখন বেশ মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হতাশ হয় এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

একসময় অনেকেই ভেবে নিয়েছিল তাসকিন-সানির ক্যারিয়ার শেষ! কই, তাসকিন তো আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজেও খেলবেন। এখন যেহেতু নিষেধাজ্ঞা মুক্ত, তাই জাতীয় দলে ফিরে আসবেন সানিও। এমন প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমীদের। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জাতি হিসেবে আমাদের এক সুতোয় গাঁথতে পেরেছে কেবল এই ক্রিকেট! বাঙালি এখন ক্রিকেট পাগল জাতির মধ্যে অন্যতম। অনেক সংকট, অনেক সংশয়ের মাঝে এই ক্রিকেট আমাদের স্বপ্ন। দেশের কোটি জনতা তাকিয়ে থাকে ক্রিকেটের এক-একটি সফলতার দিকে। যেদিন বাংলাদেশের খেলা থাকে সেদিন সবাই কাজ শেষে বাড়ি ফিরে কেউ স্টেডিয়াম আবার কেউ টিভি সেটের সামনে বসে পড়ে। সেই ক্রিকেট মাঠে কালো রেখা কেউ দেখতে চায়নি। দেশবাসী প্রাণখুলে চেয়েছে- ফিরে এস তাসকিন-সানি। দেশের ক্রিকেটে হাল ধর। মন দিয়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ফিরে এসেছে তারা। এখন দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী খুশি। অশুভ কাল মেঘ আপাতত সরে গেছে এ দেশের ক্রিকেটের আকাশ থেকে। তাঁদের ফিরে আসা এখন ঈদের পরে আরেক ঈদ!  আবারও দেশের হয়ে মাঠ কাঁপাবেন তাসকিন ও সানি- এমন প্রত্যাশা দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর। 

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক