নির্মাতাদের ক্যারিয়ারের দিকপাল ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ

Looks like you've blocked notifications!

অতল শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা মোস্তফা কামাল সৈয়দ ভাই। আহা রে মানবজীবন। জীবন এত ছোট ক্যানে? কামাল ভাই। দেখতে দেখতে আপনার চলে যাওয়ার আজ তিন বছর। 

আজকের এই দিনে গণমাধ্যম, বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষকে কাঁদিয়ে জনপ্রিয় বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর মোস্তফা কামাল সৈয়দ ২০২০ সালের ৩১ মে চলে যান না ফেরার দেশে। আজ এই বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।  

বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান ছিলেন তিনি। ৫২ বছরের কর্মজীবনে তিনি পাকিস্তান টিভিতেও শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন। এ ছাড়াও দেশের টিভিতে অনন্য অবদান রাখা এ মানুষটি একেবারে আলাদা জীবনযাপন করতেন। এড়িয়ে চলতেন বিভিন্ন প্রযুক্তিও। তিনি কখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। 

খ্যাতিমান অভিনেতা আবুল হায়াতসহ একাধিক নির্মাতা, যাঁরা মোস্তফা কামাল সৈয়দের হাত ধরে নির্মাণে সফলতা পেয়েছেন। নিপাট ভদ্রলোক বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। তিনি ছিলেন গোছানো প্রকৃতির। এলোমেলো কাজ তাঁর খুবই অপছন্দ ছিল। কোনো ঝুট-ঝামেলায় কখনও জড়াতেন না তিনি। 

নাটক ও অনুষ্ঠান নির্বাচনেও সরাসরি প্রান্তিক পর্যায়ে কথা বলে নিতেন। আর তাই তাঁর মৃত্যুর পর বহু মানুষের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষের নানান স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন তিনি। বলা হয়, এ পর্যন্ত টিভি শিল্পের অনুষ্ঠান বিভাগের সবচেয়ে সফল ও মেধাবী মানুষ ছিলেন তিনি।

তিনি ছিলেন ক্রিকেটপাগল ও কাজপাগল মানুষ। তাঁর শেষ জীবনটা এনটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান হয়ে কেটেছে । যেখানে তাঁর কাজের নিষ্ঠা ছিল অতুলনীয়। যাঁরাই তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা কেউ তাঁকে কখনও ভুলতে পারবেন না। এক হিসেবে তিনি ছিলেন তাঁদের শিক্ষক। 

মোস্তফা কামাল সৈয়দ জুনিয়রদের কদর ও সম্মান করতে পারতেন। তাঁর পরামর্শ যারা একবার পেয়েছে, তাঁরা টেলিভিশন নাটক নিয়ে কখনও ভুল করবে না। তিনি পুরোপুরি একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, টেলিভিশনের উন্নয়নের বাইরে তিনি কিছু ভাবতেই পারতেন না। 

মোস্তফা কামাল সৈয়দ তরুণ নির্মাতাদের উৎসাহ দিত। সাধারণত একটু বেশি সিনিয়র হলে তরুণদের আইডিয়া নিতে চান না। কিন্তু উনি ছিলেন এ ক্ষেত্রে উল্টো। 

অনেক তরুণকে উনি যেভাবে পরিচর্যা করার চেষ্টা করেছেন, বর্তমান জেনারেশনের প্রচুর ফিল্ম মেকার আছেন, যাঁরা আসলে এনটিভিতে কাজ করে লাইমলাইটে এসেছেন। মোস্তফা কামাল সৈয়দ ফিল্ম মেকারদের ক্যারিয়ারে একটা দিকপালের মতো ছিলেন। 

তাঁর তৃতীয় প্রয়াণ দিবসে মিডিয়ায় এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি  হয়েছে। সেই সঙ্গে সুধীসমাজ হারিয়েছে একজন অসামান্য মেধাসম্পন্ন সুশীল ব্যক্তিকে। তাঁর মৃত্যুতে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি একজন বটবৃক্ষ হারিয়েছে। সালাম আপনাকে মোস্তফা কামাল সৈয়দ সাহেব।

মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে তাঁর প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘প্রজাপতি মন’, আশি দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কুল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ।

১৯৪৩ সালে মোস্তফা কামাল সৈয়দ ঢাকার তেজকুনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ জিল্লুর রহমান ও মা আমাতুল উমদা বেগম। বাবা তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্নের পর প্রযোজক হিসেবে পাকিস্তান টেলিভিশন করপোরেশনে যোগ দেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। সুদীর্ঘ টেলিভিশন-যাত্রায় বিভিন্ন সময় সৃষ্টি করেন অনেক কালোত্তীর্ণ অনুষ্ঠান, নাটক। অর্জন করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পুরস্কার।