২০ পেরিয়ে ২১ এ, নিঃসঙ্কোচ এনটিভি

Looks like you've blocked notifications!

এখন বর্ষাকাল। ভরা বর্ষার বৃষ্টিতে পথঘাট ভিজে ময়লা ধুয়ে দেয়। পিচঢালা পথটাকে মনে হয় ভোরে স্কুলে যাওয়া শিশুর হাতে থাকা কালো স্লেট। শিশু সেখানে সাদা চক দিয়ে রোজ নতুন শব্দ লেখে। শব্দে শব্দে গল্প বোনে। দু'পাশে গাছগাছালি, ধানক্ষেতের জমিনে ফুটে ওঠে সবুজ। ভোরের স্নিগ্ধ প্রকৃতি জানান দেয় আরেকটি নতুন দিনের। চায়ের কাপ হাতে নাগরিক অপেক্ষা করে গরম গরম খবরের। একটা অবয়ব দাঁড়ায়। এনটিভির লোগোটাকে এই আঙ্গিকে দেখলে বোধকরি ভুল দেখবে না কেউ।

কোনো কিছু পারফেক্ট হতে হলে প্রয়োজন এর মজবুত ভিত। ভিতটাকে শক্ত করতে চাই নিখুঁত গাঁথুনী। গাঁথুনীর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট উপাদানের স্বচ্ছতা। সেগুলো যত ভালো হবে, ভিত তত নিখুঁত হবে। নিখুঁত করতে গেলে চাই দক্ষ কারিগর। দক্ষ কারিগরের হাতে স্বচ্ছ ও প্রয়োজনীয় উপাদান তুলে সেরাটা বের করে আনতে দরকার নেতৃত্বের। বিচক্ষণ নেতা সর্বোচ্চটুকু বের করে আনতে পারেন। সবকিছুর সমন্বয়ে বিন্দু বিন্দু করে আকাশ ছুঁতে পারে কোনো একটা স্বপ্ন। ২০০৩ সালের ৩ জুলাই শুরু হওয়া একটি স্বপ্ন ২১ বছর পর আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল, যাকে লোকে "এনটিভি" নামে চেনে, আজ তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। বদলায়। পৃথিবীর স্বভাবও বদলানো। না বদলালে নাকি হারিয়ে যেতে হয়! এনটিভি বদলায়নি, এনটিভি হারায়নি। নিজস্বতা ধরে রেখে 'সময়ের সাথে আগামীর পথে' নিজেকে পরিবর্ধিত করেছে। গুণে, মানে, সেবায় হয়ে উঠেছে দেশের প্রথমসারির গণমাধ্যম। নিজেকে এমন জায়গায় নিয়েছে এনটিভি, স্ক্রল করতে করতে সামনে যখন আসে, দর্শক থামতে বাধ্য হয়, পর্দায় দু'চোখ আটকাতে ব্যস্ত হয়।

এনটিভির বড় শক্তির জায়গা সংবাদ। একটি গণমাধ্যম তখনই জনগণের আয়না হয়ে উঠতে পারে, জনগণ যদি সেখানে নিজেদের দেখতে পায়। ঘটনা আর রটনার গ্যাঁড়াকলে পড়ে সত্য-মিথ্যা যাছাই করতে লোকে দ্বারস্থ হয় খবরের। এখানেই এনটিভি অনন্য। সকাল থেকে রাত অবধি খবরে সত্যের সঙ্গে আপোষ করতে শেখেনি এনটিভি। এনটিভির খবর শুরুর মুহূর্তে যে আবহ সংগীত বেজে ওঠে, চ্যানেলের শুরু থেকেই একই রকম আছে সেটি। মানুষ বুঝতে পারে, খবরের সময় হয়েছে। তারা আশ্বস্ত হয়, সত্য আর অজানা তথ্য জানতে পারবে বলে!

ইদানিং মানুষ দুঃখ করে একটা কথা বলে, আগের মতো আর বিনোদন জগতটা নেই। গানে প্রাণ নেই, নাটকে মান নেই, সিনেমার গল্পে ধার নেই। আপনি এনটিভির পর্দায় দৃষ্টি স্থির করলে দেখবেন ছুটির দিনের গানে আপনার প্রাণ জুড়াবে। দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রেখে সব ধরণের নাটকই পাবেন চ্যানেলে। ধারাবাহিক নাটক, সাপ্তাহিক প্যাকেজ নাটক-টেলিফিল্মের সামাজিক, কমেডি, রোমান্টিক- সব জনরার পরিবেশনা আছে এখানে। পুরোনো দিনের ক্লাসিক সিনেমার পাশাপাশি নতুন সিনেমার সমন্বয়ে চলচ্চিত্রের স্বাদ দিচ্ছে সিনেপ্রেমিদের।

ইতিহাস বরাবরই কাঠখোট্টা। ফলে, অনেকেরই আগ্রহ থাকে না ইতিহাসে। যদি ঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়, মানুষ তা লুফে নেয়। যার প্রমাণ দিয়েছে এনটিভি। ইসলামের ইতিহাসভিত্তিক জনপ্রিয় সিরিজ দিরিলিস আরতুগ্রুল ও কুরুলুস উসমান অন এয়ার হওয়ার পর দর্শক সেটি সাদরে গ্রহণ করেছে। করবে না কেন! এমনভাবে প্রবেশ করাবে সেই সাম্রাজ্যে, যেন দর্শকও এর অংশ। ইসলাম নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন 'আপনার জিজ্ঞাসা' ইসলামকে সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে দর্শককে সাহায্য করছে প্রবলভাবে।

প্রবাসীদের কথা নাকি কেউ শোনে না, কেউ বলে না। প্রবাসীদের কথা নিয়ে নিয়মিত আয়োজন প্রবাস জীবনে উঠে আসে প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা। তাদের গল্প শোনার মতো, শোনানোর মতো কেউ আছে, এই উপলব্ধির জায়গাটুকু তৈরি করতে পেরেছে এনটিভি।

'এখন যৌবন যার'- অনুষ্ঠানটিহেলাল হাফিজের বিখ্যাত 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতার বিখ্যাত এই লাইনের মতোই তারুণ্যের হাতেই নিহিত ক্ষমতার সিংহভাগ। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তরুণদের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, পিসি। তারা নিজেদের ভালো লাগা অনুযায়ী ব্যবহার করছে আধুনিক এসব ডিভাইস। প্রযুক্তি আরও আধুনিক হচ্ছে। তা কাজে লাগিয়ে তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে। এনটিভি তাদের তুলে আনছে, বিশ্বকে জানান দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে, সময়ের চাওয়া পূরণে এনটিভি শুরু করে 'এনটিভি অনলাইন।' ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ডিজিটাল এই মাধ্যম্যের পথচলা। সব খবর, সর্বশেষ খবরের বিশাল ভাণ্ডারএনটিভি অনলাইনে রয়েছে অসংখ্য সেগমেন্ট। ভূঁইফোড় মিডিয়া যখন চারিদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো গজাচ্ছে, তখন মূলধারার গণমাধ্যমের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পাঠক, দর্শকের জন্য নিয়ে এসেছে স্বস্তি। নিজস্ব কনটেন্টের সমারোহে পরিপূর্ণ এনটিভি অনলাইন নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করছে দিন দিন। মুহূর্তেই হাতের কাছে তরতাজা নিউজ পাচ্ছে পাঠক। পাঠকের হাতে নির্ভুলভাবে সংবাদ পরিবেশনে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দায়িত্বরতরা কাজে এক চুল ছাড় দেন না। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে এনটিভি ডিজিটালের লড়াইটা নিজের সঙ্গেই, নিজেকেই রোজ ছাড়িয়ে যাওয়ার শুদ্ধ লড়াই চলছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেখা যায় এনটিভির নানা আয়োজন।

বাংলাদেশের মানুষের আবেগের বড় অংশজুড়ে রয়েছে খেলাধুলা। খেলা নিয়ে বাঙালির মাতামাতিতে বাড়তি উন্মাদনা যোগ করে এনটিভি স্পোর্টস। ক্রীড়া সাংবাদিকদের বয়ানে, তাদের কলমে এমনভাবে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের কোনো জয়ের চিত্র, কিংবা ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্রিয় দলের সাফল্যের খবর; দর্শক ও পাঠকের মনে হবে, এই বুঝি গ্যালারি থেকে ঘরে এলাম! ঘরে এসেও খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে আছে এনটিভির খেলাবিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান 'গ্যালারি।' যেখানে সমসাময়িক বিষয়ে আলাপ হয়, বিশ্লেষণ হয়।

দর্শক হিসেবে ২০০৬ সালে এনটিভির সঙ্গে প্রথম পরিচয়। বাসায় সেবারই প্রথম ক্যাবল কানেকশন আসে। প্রথম সবকিছুর একটা আলাদা আবেদন থাকে। সাদাকালো টিভিতে বিটিভির বাইরে সবার প্রথমে যে সুরটা কানে আজীবনের জন্য গেঁথে যায়, তা হলো এনটিভির আবহ সংগীত। যে সংগীতে এক ধরণের মোহ আছে। এত বছর পরেও তা শুনতে এতটুকু বিরক্তি আসে না।

অনেক কথা হলো। সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'কলম' কবিতার কয়েক চরণ দিয়ে শেষ করি…

"কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধরে

অক্ষরে অক্ষরে 

গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনি শুরু করে।

কলম, তুমি কাহিনি লেখ…

তোমার কাহিনি কি দুঃখে জ্বলে

তলোয়ারের মতো ঝিকিমিকি?"

এনটিভি তো কালি কলম আর লাইট ক্যামেরার সমন্বয়ে সুখে-দুঃখে জ্বলছে ঝিকমিক করেই। বিশ পেরিয়ে, একুশেও ক্লান্তিহীন, নিঃসঙ্কোচে।

লেখক :  সাংবাদিক