রম্য
সব বাবু বাবু নয়

কার্টুন : রবিউল ইসলাম সুমন
১.
বন্ধু হাসান কথা বলছিল আমার সঙ্গে।
—দোস্ত, একটা সুখবর আছে।
—কী সুখবর আবার তোর? আমারও একটা আছে।
—আচ্ছা, আগে তোরটাই বল।
—জানিস, আমার ছোট খালামণির একটা বাবু হয়েছে।
—বাহ! আমারও একটা বাবু হয়েছে!
—বলিস কী! তুই তো ছেলে, তোর আবার কীভাবে বাবু হয়? তুই তো ছেলেমানুষ!
—আরে বাবু মানে বুঝিস না? আমার একটা নতুন গার্লফ্রেন্ড হলো!
বেচারার গার্লফ্রেন্ড হয়েছে, এত বড় অঘটন ঘটে গেল, তাই খুশি হবো না দুঃখ পাব, বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ আমার বাবু মানে যূথী ফোন দিল।
—বাবু তুমি কই?
—কোথাও না, রাস্তাঘাটে হাঁটাহাঁটি করছি।
—যাই হোক, যেখানেই থাকো, আধঘণ্টার মধ্যে ধানমণ্ডি লেকের সামনে চলে আসো, আমি অপেক্ষা করছি।
২.
ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসেছিলাম আমি আর যূথী। বছরের প্রথম দিন, যূথী অনেক সেজেগুজে এলো।
আমার একটু দেরি হলো দেখে আমাকে হালকা করে বকেও দিচ্ছিল।
—বাবু! তুমি এতক্ষণে এলে? তুমি আমাকে এভাবে দেরি করালে! এখনই কান ধরে ওঠবস করো। ধানমণ্ডির এত মানুষের সামনে লাজলজ্জা বিসর্জন দেওয়ার পর সে বলে, আচ্ছা যাই হোক, বাবু তুমি এসো আমার কাছে এসে বসো।
—আচ্ছা বাবু, বলো তো আমাকে কেমন লাগছে? দেখতে ভালো লাগছে না?
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, তার আগেই পাশের টঙের দোকানের ছেলেটা বলে উঠল, ‘হ আপা! আপনারে অনেক ভালো লাগতাছে!’
যূথী তো বেশ অবাক হলো।
আমার মাথাও গরম হয়ে গেল, বললাম, ‘এই! তুই কোথা থেকে এলি আবার? আর এই কথাই বা বলছিস কেন?’
—ওমা! আপায় কতক্ষণ ধইরা বাবু বাবু কইয়া ডাক দিল, আবার জিগায় দেখতে কেমন লাগে, তো কমু না?
—আপা ডাকছে তাতে তোর কী?
—ওমা! আমনে কন কী? আমার নামই তো বাবু।
৩.
হঠাৎ পাশে একটা মেয়ে এসে বসল আমাদের। মনে হয়, সেও তার বাবুর সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছে, বারবার দেখছিলাম ফোন দিচ্ছে। ছেলে ফোন ধরছে না আর মুখ দিয়ে যাচ্ছেতাই বলছে নিজে নিজে। একটু পর হয়তো এই মেয়েটাই ছেলেটাকে বাবু বলে ডাকবে! নিয়তি কী নিষ্ঠুর।
যাই হোক, হঠাৎ একটা ফোন এলো, উঠে গেলাম কথা বলতে। কথা বলে যখন ফিরে এলাম, তখন দেখি আমার বাবু মানে যূথী খুবই উত্তপ্ত অবস্থায় আছে। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেলাম, মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আমি আবার কিছু করলাম না তো! কিন্তু না, মনে তো হচ্ছে না আমি কিছু করেছি। কিন্তু হলোটা কী? কথা বলতে গেলাম, দেখি নাহ! সে আমার সঙ্গে কথা বলবে না। জিজ্ঞেস করলাম, আমি করেছি কী? আমার সঙ্গে কথা বলবে না? কোনো উত্তরও সে দিচ্ছে না! দেখলাম, সোজা হাঁটা দিল সে, আমিও কোনোরকমে ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছি, রাস্তায় খুব একটা সুন্দর সিনেমা হচ্ছে এমন ভঙ্গিতে সবাই তাকিয়ে আছে। যূথীও মনে এটা খেয়াল করল।
পরে বলল, ‘কী? তোমার বাবু তো তোমার জন্য বসেই আছে লেকের পাড়ে, তুমি এখানে কেন?’
আমি তো অবাক!
—কী বল এসব?
—এখন তো কিছু বুঝবে না, তাই না? এটাই তো হয়। আমার পাশ থেকে উঠে গিয়ে আমাদের পাশের মেয়েটার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলে, একটু পর আসছ বললে, কোনো কাজে আটকে গেছ, তাই এত হাজার বার সরি বললে, আমি বুঝিনি?
—মানে কী? কখন মেয়ের সঙ্গে কথা বললাম?
—-হ্যাঁ এখন তো বুঝবেই না! আমাদের পাশের মেয়েটা, তুমি গেলে পাশ থেকে তখনই ফোনে কথা বলছিল, তখন আমি বেশ শুনেছি তোমাদের প্রেমালাপ। খবরদার, আমার কাছে আর আসবে না। আমি চিৎকার করব না হলে।
—আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিকশায় উঠে গেল যূথী।
আমি আর কী বলব? টঙের দোকানের বাবু ছেলেটাকে ডাক দিয়ে আরেকটা চা অর্ডার করলাম।