রম্য রচনা
ইলিশ পাওয়ার হাফ ডজন উপায়
বৈশাখ চলে এসেছে, অথচ এখনো ইলিশ জোগাড় হয়নি? চিন্তার কিছু নেই। আপনাদের জন্য দেওয়া হলো সহজে ইলিশ পাওয়ার হাফ ডজন উপায়, একটা ফ্রি!
কোরবানির ঈদে অনেকেই এককভাবে গরু-ছাগল কোরবানি দিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তিনজন, পাঁচজন কিংবা সাতজন মিলে ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। ইলিশ কিনতেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করুন। এককভাবে কেনার সামর্থ্য না থাকলে পাঁচ-সাতজন মিলে ভাগে ইলিশ কিনে ফেলুন। এতে শুধু ইলিশ খাওয়াই হবে না, পাশাপাশি ভাগে ইলিশ কেনায় বাঙালি বাঙালি ভ্রাতৃত্ববোধও বেড়ে যাবে!
দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অনেক ব্যাংক। এসব ব্যাংক বাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে গাড়ি কেনা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। ইলিশ কেনার জন্য কোনো একটা ব্যাংকে ‘ইলিশ লোন’ শাখায় আবেদন করে বসুন। ভাগ্য ভালো হয়ে থাকলে লোন পেয়ে যাবেন। আর একবার লোনের টাকা হাতে পেলে সেই টাকা দিয়ে মাছ কিনে বৈশাখ পালন করুন।
ইলিশ মাছের প্রতি বিড়ালের এক ধরনের আলাদা দুর্বলতা আছে। একটা মেয়ে যেমন এক মাইল দূর থেকেও তার প্রতি কারো ভালোবাসা টের পায়, তেমনি একটা বিড়ালও মাইলখানেক দূরত্ব থেকে ইলিশ মাছের ঘ্রাণ পায়! এই বাজারে ইলিশ পেতে হলে এ রকম কিছু বিড়াল সংগ্রহ করুন। প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াডের মতো বিড়াল স্কোয়াড গঠন করে সেই ট্রেনিংপ্রাপ্ত বিড়ালকে ছেড়ে দিন, দেখবেন কিছুক্ষণ পর বাজার, বড়লোকের ফ্রিজ কিংবা কোনো রেস্টুরেন্টের ডিপফ্রিজ থেকে ঠিকই সে ইলিশ নিয়ে হাজির হবে!
বাড়িতে চৌবাচ্চা থাকলে ভালো, না থাকলে চৌবাচ্চা বানিয়ে নিন। পানি ভর্তি করুন। পানির পরিমাণের সঙ্গে অনুপাত অনুযায়ী লবণ মেশান। এবারে এই লবণাক্ত পানিতে ইলিশের ডিম ছেড়ে দিন। এই বৈশাখে খেতে না পারলেও সামনের বৈশাখে ঠিকই ইলিশ খেতে পারবেন। এমনকি নিজের চাহিদা মিটিয়ে ইলিশ রপ্তানি করে ধনী হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ইলিশ কেনার সাধ্য না থাকলে একটা নৌকা ভাড়া করুন। জাল নিয়ে নিজেই নৌকায় উঠে পড়ুন। এর পর সরাসরি পদ্মা অভিমুখে রওনা করুন। নদী থেকে নিজেই ইলিশ ধরে বৈশাখ উদযাপন করুন।
এখানে বলে রাখা ভালো, জাটকা/ ডিমওয়ালা ইলিশ ধরবেন না। তাহলে এবারে ইলিশ খেতে পারলেও আগামী বৈশাখে ইলিশ শব্দটা শুধু নদী থেকে নয়, অভিধান থেকেও হারিয়ে যাবে!
দেশ থেকে যৌতুক সিস্টেম উঠে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই কনের বাবা জামাইকে খুশি করতে পালসার বাইক কিংবা অন্যান্য দামি উপহারসামগ্রী ধরিয়ে দেন। বৈশাখ থাকতে থাকতে বিয়ে করে ফেলুন। তারপর যদি শ্বশুরমশাই খুশি হয়ে কিছু উপহার দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে এক জোড়া ইলিশ দাবি করে বসুন। নতুন জামাই, আশা করি বিমুখ করবে না!
এসব কিছুতে কিছু না হলে বড় লেখকদের মতো কল্পনাপ্রবণ হয়ে যান। আপনিও তাঁদের মতো কল্পনায় বাজারে যান। গিয়ে সবচেয়ে বড় সাইজের একটা ইলিশ কিনে আনুন। তার পর পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে করতে খেয়ে ফেলুন বৈশাখী ইলিশ! এভাবে কল্পনা করতে করতে অতি শিগগিরই আপনিও বড় লেখকদের মতো কল্পনাপ্রবণ হয়ে যাবেন। আর এই সুযোগে ‘ইলিশ দেখতে গিয়ে’ এই ধরনের দু-চারটা বই লিখে নামধাম কামিয়ে ফেলতে পারবেন!