লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করে ধৈর্য ধরার পরামর্শ  

Looks like you've blocked notifications!

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ বুধবারের (২৭ মার্চ) শুরুটা সূচক উত্থান থাকলেও লেনদেনের ২৫ মিনিট পর তার পতন হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অব্যাহত থাকে। দিনশেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্ট পতন হয়ে পাঁচ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে নেমে আসে। এ ধরনের কম পয়েন্টের সূচক গত ৩৫ মাস ১৫ দিনের মধ্যে দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। এতে অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে শেয়ার বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। 

তারা বলছেন, আরও পতন হবে, এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করতে চাচ্ছে একটি চক্র। তাদের (চক্র) ইচ্ছে, পতন ভয় দেখিয়ে কম দরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার হাতিয়ে নেওয়া। তাই এমন অবস্থায় বুঝে ও বিশ্লেষণে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দেন বিশ্লেষকরা। 

পুঁজিবাজার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই জানিয়ে বাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল আমিন বলেন, কিছুদিন আগেও গড় লেনদেন ছিল চৌদ্দ-পনেরশ কোটি টাকার ওপরে। বর্তমানে সেই লেনদেন চার-পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে। সূচক পতন হয়েছে অস্বাভাবিকহারে। প্রতিদিনই কমছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। পুঁজিবাজারের এই মন্দায় বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ ভালই অংশই হারিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের লসে শেয়ার বিক্রি না করে ধৈর্য ধরতে হবে।

পতন বাজার বিনিয়োগের জন্য ভাল সময় জানিয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে উত্থান পতন থাকবে। এটাই নিয়ম। তবে, পতন বাজারে শেয়ার লসে বিক্রি না করে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। 

মতিঝিলের লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী এম এ জহিরুল বলেন, ফ্লোর প্রাইজ আরোপ সময় আমার লস ১০ থেকে ১৩ শতাংশর মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু ফ্লোর প্রাইজ তুলে দেওয়ার পর সেই লস ৩১ শতাংশে পৌছেছে বর্তমানে। সামনে কোনদিকে যাবে সেই চিন্তাই করছি। আরেক বিনিয়োগকারী আদনান বলেন, আমি নতুন বিনিয়োগকারী। ২০২২ সালে শেয়ারবাজারে যুক্ত হয়েছি। আসার পর ভাল করেছি। বুঝে শুনে বিনিয়োগ করে ১৪ শতাংশ লাভের মুখে ছিলাম। কিন্তু বর্তমান পতনে সেই লাভ হারিয়েছি। পাশাপাশি পুঁজির ১৮ শতাংশই হারিয়েছি।  

ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, টানা আট কর্মদিবস পতনের পর গেল সপ্তাহের শেষ দুদিন সূচক উত্থানে লেনদেন হয়েছিল। সেই উত্থান ধরে রাখতে পারেনি। চলতি সপ্তাহের গত দুই কর্মদিবসের মতো আজ বুধবার সূচকের পতন হয়। এদিন লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স কমেছে ৭১ পয়েন্ট। ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। কমেছে বাজারে মূলধন পরিমাণ। লেনদেনের পরিমাণ পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।  

বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবস সোমবার লেনদেন ৪৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এদিন পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়ায় ছয় লাখ ৭৯ হাজার ১৯৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কর্মদিবস সোমবার বাজার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার। আজ সূচক ডিএসইএক্স ৭১ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৬২ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে। এর আগে ২০২১ সালের ১২ মে সূচক ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৭৫০ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে নেমেছিল। ডিএসইএস সূচক ১৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫২ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস৩০ সূচক ১২ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১২ দশমিক শূন্য সাত পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির ও কমেছে ৩২১টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৩৭টির।

আজ লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ২৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, বেস্ট হোল্ডিংসের ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, গোল্ডেন সনের ১২ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ফরচুন সুজের ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ১১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, বিডি থাইয়ের ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং শাইনপুকুরের ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরপতন হয়েছে। বাজারে মূলধন সহ কমেছে লেনদেন পরিমাণ। সিএসইতে বুধবার ৯ কোটি ৯৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আগের কর্মদিবস সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ১২ হাজার ৬০৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস সোমবার বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ১৪ হাজার ৪৮৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। 

সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১২৪ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক চার দশমিক ১৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১১ দশমিক ২৭ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৭২ দশমিক ১৭ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক সাত দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমেছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৪৩টির ও কমেছে ১৬৪টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১৯টির।

আজ সিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির তিন কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেন শীর্ষ উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের এক কোটি ছয় লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৩৩ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার ৩২ লাখ টাকা, এইচ আর টেক্সটাইলের ৩১ লাখ টাকা, বেস্ট হোল্ডিংসের ২৯ লাখ টাকা, রবির ২৮ লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ২৪ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ২৩ লাখ টাকা এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ২১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।