অডিট রিপোর্টের তথ্য ডিএসইকে যাচাই করতে হবে : বিএসইসি কমিশনার

Looks like you've blocked notifications!

বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন বলেছেন, যখন কোনো অডিট রিপোর্ট বা বার্ষিক রিপোর্ট আসে তখন সেটা জানা যায় না কোন জায়গা থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অবশ্যই ওইসব রিপোর্ট সার্টিফাইড করতে হবে যে ঠিক আছে কিনা। তার জন্য সকল নিয়ম-কানুন অনুযায়ী ডিএসইকে সেসব রিপোর্ট যাচাই করতে হবে যে রিপোর্টগুলো আইন অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কিনা। 

গতকাল  রোববার (৩১ মার্চ) ডিএসই টাওয়ারের ভিআইপি লাউঞ্জে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভি-নেক্সটের প্লাটফর্ম বাস্তবায়ন শীর্ষক বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান। এতে সঞ্চালনায় ছিলেন ডিএসইর মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক মো. ছামিউল ইসলাম।

আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন জানিয়ে ড. শেখ শামসুদ্দিন বলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থের অভাবে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য পুঁজিবাজারকে কাজে লাগানোর জন্য ভি-নেক্সট প্লাটফর্ম হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। এটা নতুন কিছু না। অনেক আগে থেকেই বিষয়টা ছিল। শুধু মাঝখানে করোনা এবং অন্যান্য কারণে বন্ধ ছিল। ২০২০ সালে ডিএসই ভি-নেক্সট নিয়ে একটি প্রগ্রেস রিপোর্ট দিয়েছিল। সেখানে কি কি কাজ করা লাগবে সে বিষয়ে বলা আছে। এছাড়া ভি-নেক্সট সম্পর্কিত ওয়েবসাইটসহ আরও অনেক বিষয় বলা আছে। তাই আর পিছনের কথা বলবো না। এখন শুধু এগিয়ে যেতে হবে। আর এজন্য প্রথমে বিএসইসির সঙ্গে ডিএসইর বৈঠকের যে বিষয় আছে সেগুলো এবং ২০২০ সালের প্রেজেন্টেশনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে যে ২২টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল, তারা কেন শুরু করতে পারেনি সেটা তাদের কাছ থেকে জানতে হবে। তারা যদি বলে ডিএসই প্রস্তুত ছিল না, সেটা ছাড়া আর কি কারণ ছিল সেটা তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে ভি-নেক্সটে যুক্ত হতে হলে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রক আইন মেনে কাজ করতে হবে। সেই বিষয়টাও আমাদের খেয়াল রেখে কাজ শুরু করতে হবে।

শেখ শামসুদ্দিন আরও বলেন, ‘যখন কোন অডিট রিপোর্ট বা বার্ষিক রিপোর্ট আসে তখন সেটা জানা যায় না কোন জায়গা থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে ডিএসইকে অবশ্যই ওইসব রিপোর্ট সার্টিফাইড করতে হবে যে ঠিক আছে কিনা। তার জন্য সকল নিয়ম-কানুন অনুযায়ী ডিএসইকে সেসব রিপোর্ট যাচাই করতে হবে যে রিপোর্টগুলো আইন অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কিনা। আমরা যদি চিন্তা করি যে সব কিছু ঠিক থাকার পর কাজ শুরু করব তাহলে কোনো কিছু শুরু করাটা কঠিন হয়ে যাবে। যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোকে চিন্তা করে আমরা কাজ করতে পারি। বর্তমান ডায়নামিক বিশ্বে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সব ঠিক করতে না পারলেও সর্বনিম্ন বিষয়গুলো ঠিক করে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। বর্তমানে আমরা সমস্যাগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে পিছিয়ে যাচ্ছি।’

স্বাগত বক্তব্যে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের সহায়ক সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি মূলধন ম্যাচমেকিং প্লাটফর্ম যা ইক্যুইটি/ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও উদীয়মান প্রতিষ্ঠানের মূলধন সরবরাহ ও কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে। বর্তমানে এটি চীনসহ ৪৭টিরও বেশি দেশে ভি-নেক্সট প্লাটফর্মের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসকল দেশের সম্ভাবনাময় সংস্থাসমূহ ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন ও সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় মূলধন চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। অন-লাইন প্রযুক্তিনির্ভর ভি-নেক্সট প্লাটফর্ম সমগ্র বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একটি দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহ বৈদেশিক অর্থায়নের মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ভি-নেক্সট সেতুবন্ধন রূপে কাজ করছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের জন্য দুইটি সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রথমত, এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য অর্থায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন। দ্বিতীয়ত, পুঁজিবাজারে ইস্যুকারী ও বিনিয়োগকারী উভয়কে উপকৃত করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়ন।

ভি-নেক্সটের মাধ্যমে ব্যাপক বৈদেশিক বিনিয়োগ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, আমরা অচিরেই এটা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করবো। শুধু ভি-নেক্সট নয়, আরও অন্যান্য বিষয়েও কিভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে, সে বিষয়েও আমরা সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে পর্যায়ক্রমে আলোচনা চালিয়ে যাবো।

শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মিলিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ডিএসইর কৌশলগত চুক্তির আওতায় ইস্যুয়ার ও প্রাতিষ্ঠানিক/যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম হচ্ছে ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্ম। স্টক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে ভি-নেক্সটের কার্যকারিতা বাস্তবায়নের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর সিনিয়র ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি ভি-নেক্সটের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, ভি-নেক্সট গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, ভি-নেক্সট কমিউনিটি, ভি-নেক্সট অফার: এন্টারপ্রাইজ, ভি-নেক্সট ও ডিএসই, ভি-নেক্সট ব্যবহারকারীদের নির্দেশিকা এবং ভি-নেক্সটের অপারেশনাল প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

মূল প্রবন্ধের উপর বক্তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি, এসএমই, স্টার্টআপ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ভি-নেক্সট প্লাটফর্মে অন্তভূক্তিকরনের ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন এবং এর সুবিধা তুলে ধরেন। এ ছাড়া বক্তারা আশাবাদ ব্যাক্ত করেন আমাদের প্রধান কাজই হচ্ছে মার্কেটকে বড় করা। যারা আসতে চায় না তাদেরকে আনতে হবে এবং কেন আসতে চায় না সেটাও জানতে হবে। ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্ম একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রযুক্তি, যা কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। ভি-নেক্সট চালুর হলে বাংলাদেশে মানসম্পন্ন কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং ভি-নেক্সট ভুক্ত কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অথনীতি তথা পুঁজিবাজার উননয়নে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখবে।

এতে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি),  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ডিএসইর মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের মহা-ব্যবস্থাপক মো. ছামিউল ইসলাম।