ধারাবাহিক মন্দায় কমেছে মূলধন, ডুবেছে লেনদেন
পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক মন্দায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের লোকসান পরিমান দিনদিন বাড়ছে। বড় ধরনের লোকসান ভয়ে তড়িঘড়ি করে গত এক মাসে অনেকেই কম ধরে শেয়ার বিক্রি করেছে। এতে পুঁজিবাজারের পতন আরও বড় হয়েছে। রমজান মাসে অস্বাভাবিকভাবে কমেছে পুঁজিবাজারে মূলধন। মন্দায় ডুবেছে লেনদেন পরিমান। পতন হয়েছে সব ধরনের সূচকের। গত এক মাসের বাজার বিশ্লেষণে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শেয়ার বিক্রির চাপে গত এক মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ১৯৪ পয়েন্ট। এই সময়ের মধ্যে গত ২ এপ্রিল ডিএসইএক্স কমে পাঁচ হাজার ৭৩৮ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। এ ধরনের কম পয়েন্টের সূচক গত ৩৪ মাস ২২ দিনের মধ্যে দেখেনি বিনিয়োগকারীরা। গত এক মাসে ডিএসইএস সূচক ৪০ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক ৪৩ পয়েন্ট কমেছে। আলোচিত এক মাসে বাজারে মূলধন পরিমাণ কমেছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। আর ৭০০ কোটি লেনদেন চলে এসেছে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে পতনের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। রমজানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই তারা কারসাজির মাধ্যমে বাজারে পতন ঘটিয়েছে। চক্রটি পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে তৎপর রয়েছে। আরও বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করছে চক্রটি। তাদের (চক্র) ইচ্ছে, পতন ভয়ে দেখিয়ে কম দরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার হাতিয়ে নেওয়া। তাই এমন অবস্থায় বুঝে ও বিশ্লেষণে শেয়ার কেনাবেচার পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে আরও পতন বাড়বে এমন গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
পতন কারণে বিনিয়োগকারীদের বাজার প্রতি অনাস্থা আরও বেড়েছে জানিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, পতন দেখে এ সময় অনেকে নতুন করে শেয়ার কেনা থেকে বিরত ছিলেন। আবার বড় ধরনের পতন ভয়ে অনেকে হাতে থাকা শেয়ার কম দরে বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া ঈদে অনেকের অর্থের প্রয়োজন পড়েছে। খরচ যোগাতে লসে হলেও অনেকে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। সব মিলিয়ে গত এক মাসে শেয়ার বিক্রিতে চাপ বেড়েছে। এতে পুঁজিবাজারের সূচক পতন হয়েছে। কমেছে বাজার মূলধনও।
বাজারে উত্থান পতন থাকবে, এটাই নিয়ম জানিয়ে আবু আহমেদ বলেন, এটাতে ভয় পাবার কিছু নেই। একটা শ্রেণির লোক আছে, যারা গুজব ছড়িয়ে ভয়ভীতি দেখায়ে আপনার হাতে থাকা শেয়ার কম দরে কিনতে চাইবে। আবার তার হাতে থাকা শেয়ার বেশি দরে আপনার কাছে বিক্রি করবে। তাই বলছি, আপনার শেয়ার দেখে, শুনে ও বিশ্লেষণ করে কেনাবেচা করুন। কান কথা থেকে বিরত থাকুন।
ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন দুই লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে সাত লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। পরে গত ১১ মার্চ বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ ৪০ হাজার ৮৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকায়। সেখান থেকে আরও কমে গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) পুঁজিবাজার মূলধন দাঁড়ায় ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকায়। শেষ এক মাসের ব্যবধানে বাজারে মূলধন কমেছে ৫৫ হাজার ৩৫২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
গত ৯ এপ্রিল মার্চ ডিএসইতে লেনদেন হয় ৪৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এক মাস আগে গত ১১ মার্চ ডিএসইতে লেনদেন ছিল ৭৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে সাত কোটি টাকার লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইএক্স ১৯৪ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে ৯ এপ্রিল সূচকটি দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৮৬৪ দশমিক শূন্য আট পয়েন্টে। গত ১১ মার্চ ডিএসইএক্স ছিল ছয় হাজার ৫৮ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। আলোচিত এক মাসে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪০ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮২ দশমিক ২৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই৩০ সূচক ৪৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩২ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে।
এদিক গত ৯ এপ্রিলে (মঙ্গলবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১১ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত মঙ্গলবারের ডিএসইর পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।