লোকসানি ইনটেকের দর কাদের পরশে দ্বিগুণ, খতিয়ে দেখার পরামর্শ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইটি খাতের দুর্বল কোম্পানি ইনটেক লিমিটেডের শেয়ার দর কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। অপরদিক সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৫ সাল) কোম্পানিটির লোকসান রয়েছে। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে নেগেটিভে। মূল্য আয় অনুপাত হিসেবে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ অনিরাপদ। তবুও মাত্র ১৪ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুরেটরদের দৃষ্টি দিতে বলছেন শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ইনটেকের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। যা গত ১৭ আগস্ট কোম্পানিটির এই শেয়ারের দর ছিল ২০ টাকা ৯০ পয়সা। গত ১৮ দিন বা ১৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ২৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ১১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৪১ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৩৮ টাকা। গত ১৭ আগস্ট মূলধন ছিল ৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৩ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ৭৬ কোটি ৪২ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৫ টাকা।
বাজারে ইনটেকের অনেক বয়েকা পড়ে আছে জানিয়ে কোম্পানিটির সচিব সাদ্দাম হোসাইন বলেন, নানা কারনে এই বকেয়া এখনও উঠাতে পারছি না। আবার কোম্পানির গতি বাড়াতে নতুন করে বিনিয়োগ করব, সেই ধরনের পুঁজিও কোম্পানিটিতে নেই। ইতোমধ্যে কোম্পানির সবশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসান পড়েছে। সম্পদমূল্য নেগেটিভে রয়েছে। লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। চেষ্টা করছি, এখান থেকে বেরিয়ে আসার।
দর বাড়ার প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, এত নেগেটিভের পরও ইনটেকের শেয়ার দর বাড়ছে। কেন বাড়ছে, কারা কিনছে ও বাড়াচ্ছে সেটা আমাদের জানা নেই। জানার কথাও না। কোম্পানির কেউ শেয়ার কেনাবেচা করে না। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় ডিএসইতে জানানো হয়েছে, শেয়ার দর বাড়ার মতো কোম্পানিটিতে এখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
শেয়ারটির দর বাড়া নিয়ে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের সিকিউরিটিজ হাউজে নানা গুঞ্জন ওঠেছে, শেয়ার দর এ ধরনের বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না কোম্পানিটির শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-মাচ) লোকসানে ডু্বেছে কোম্পানিটি। এছাড়া সম্পদমূল্য নেগেটিভ ও মূল্য আয় অনুপাত হিসেবে বিনিয়োগ অনিরাপদে রয়েছে। এতো মন্দার পরও কোম্পানিটির শেয়ার দর কারন ছাড়াই অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে। গত ১৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর দুই দশমিক ১৭ গুন বেড়েছে, যা মানতে নারাজ। অপরদিক শেয়ার দর এইভাবে বাড়ার কারণে ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে গত ২৬ আগস্ট কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। এরপর শেয়ার দর বাড়ার একই কারণে ডিএসই ফের নোটিস পাঠিয়েছে। এর জবাবে গত ৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। এই ধরনের দর বাড়ায় এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুরেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন বিনিয়োগকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ২৮৩ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে রয়েছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে ইনটেকের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা। আগের বছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১২ পয়সা। কোম্পানিটির গত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৯ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২৮ পয়সা। গত তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে নেগেটিভ এক পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে নেগেটিভ ৩৫ পয়সা।
এর আগে ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ১৬ পয়সা। ওই সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল ৭৪ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল নেগেটিভ পাঁচ পয়সা।
২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইনটেক। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১২০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা তিন কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার ২২৬টি। রিজার্ভ রয়েছে নেগেটিভ ৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, বিদেশিদের হাতে শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫২ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।