জন্মভূমিতেই নিষিদ্ধ হচ্ছে ‘ভেসপা’?
বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইলপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভেসপা স্কুটার ও মপেড। কিন্তু যে শহরে ভেসপার জন্ম, এবার সেখানেই নিষিদ্ধ করা হলো ভেসপা। কারণ পরিবেশদূষণ।
পরিবেশ রক্ষায় ইতালির জেনোয়া শহরের মেয়র মার্কো ডোরিয়া এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জেনোয়া শহরে ভেসপা চালানো নিষেধ। আর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ১৯৯৯ সালের আগে তৈরি করা ভেসপার বিভিন্ন মডেলের ওপর। এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ডেইলি মেইলের অনলাইন সংস্করণ মেইল অনলাইন।
ইতালির যে কোনো শহরের তুলনায় জেনোয়ায় সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল চলে। আর ভেসপার এই জনপ্রিয়তার কারণে মেয়রের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেসপাপ্রেমীরা মেয়রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তাই গত ডিসেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী এপ্রিল মাস থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১৯৪৬ সালে ইতালির জেনোয়া শহরেই প্রথম উৎপাদন শুরু হয়েছিল ভেসপা স্কুটারের। মেয়রের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নিজভূমেই পরবাসী হয়ে যাবে ভেসপা।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মেয়রের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভেসপা মালিকরা। #handsoffmyvespa হ্যাশট্যাগ দিয়ে মেয়রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।
আর এটা শুধু জেনোয়াবাসীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বজুড়ে ভেসপাপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ভেসপা ক্লাব জেনোয়ার ভিত্তোরিও ভেরনাজ্জানো বলেন, ‘এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।’
একই ক্লাবের আরেক সদস্য এনরিকো পিআগ্গিয়ো বলেন, ‘২০১৬ সালে এই সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এই বছরই ভেসপার ৭০ বছর হচ্ছে। ১৯৪৬ সালে একজন জেনোভিজ উদ্যোক্তার হাত ধরে এই জেনোয়া শহরেই উৎপাদন শুরু হয়েছিল ভেসপার।’
ভেসপা চালকদের দাবি, শহরে চলাচলের মতো পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই তাই নাগরিকরা তাদের ভেসপার ওপরই নির্ভরশীল। গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করে ভেসপা বন্ধ করা হলে সেটা নাগরিকদের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করবে।
তবে পরিবেশবাদীরা মেয়রের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। পরিবেশবাদী ইতালো পোর্সিল বলেন, ‘আমি নিজেও ভেসপা চালাই। কিন্তু ‘ইউরো জিরো’-এর মতো কিছু মডেল রয়েছে যেগুলো ১৯৯৯ সালের আগে তৈরি। এগুলো পরিবেশ ও গণস্বাস্থ্যের জন্য আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ।”
ইতালির অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান পিআগ্গিও মূলত ট্রেনের ইঞ্জিন ও যুদ্ধবিমান তৈরি করত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ‘ভেসপা’ নামের স্কুটার উৎপাদন করা শুরু করে তারা। কারণ বিশ্বযুদ্ধের ফলে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থা সেই সময় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
গ্রামাঞ্চলে জনগণের চলাচলের জন্য গাড়ির বদলে ইতালিতে ভেসপার প্রচলন শুরু হয় তখন। আর ইতালির বাইরে ভেসপা জনপ্রিয় হয় ১৯৫৩ সালের ‘রোমান হলিডে’ ছবির মাধ্যমে। অড্রে হেপবার্ন এবং গ্রেগরি পেক অভিনয় করেছিলেন ছবিটিতে। ছবিতে ভেসপায় চড়ে পুরো শহর ঘুরে বেড়ান তাঁরা।