খান’স কিচেনে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান, ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ
রাজধানীর বড় বেরাইদ এলাকায় অবস্থিত খান’স কিচেন লিমিটেড নামের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে (ক্যাটারিং সার্ভিস) ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা দল। গতকাল সোমবার চালানো এই অভিযানে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে খান’স কিচেনের এক ভোক্তার করা সচিত্র অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযানটি চালানো হয়। অভিযানে গিয়ে খান’স কিচেন থেকে মাত্র দুই মাসেই এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বিক্রয় হিসাব গোপনের তথ্য উদ্ধার করে ভ্যাট গোয়েন্দা দল।
আজ মঙ্গলবার ভ্যাট গোয়েন্দা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এক ভোক্তার করা অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে এই অভিযানটি চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির নাম খান’স কিচেন লি: খান’স হাউস, বড় বেরাইদ। এর মূসক নিবন্ধন নম্বর: ০০১৭২০৫৬৪-০১০১। খান’স কিচেন বড় বড় শিল্প কারখানা এবং নানা অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করে থাকে। আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির প্রসার ঘটেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে সোমবার অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গোয়েন্দারা ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে। এসব দলিলাদি প্রাথমিক যাচাইয়ে দেখা গেছে, ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, খান’স কিচেন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ ভ্যাট চালানের পরিবর্তে ডুপ্লিকেট ও অবৈধ চালান ব্যবহার করে আসছে। এসব চালানে ভ্যাট আইন অনুসারে মূসক ৬.৩ ব্যবহার করা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, তল্লাশির একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির ক্লিপ ফাইলে চলতি বছরের দুই মাসের (জুলাই ও ডিসেম্বর) প্রকৃত বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। এতে দেখা যায় যে, জুলাই মাসে তাদের মোট ৯৩.০৩ লাখ টাকার বিক্রয় হয়। কিন্তু এ সময় প্রতিষ্ঠান গুলশান ভ্যাট সার্কেলে প্রদত্ত দাখিলপত্রে ১৯.৯৩ লাখ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। অর্থাৎ উক্ত মাসের দাখিলপত্রে ৭৩.১০ লাখ টাকার বিক্রয়তথ্য গোপন করেছে, যার উপর পরিহারকৃত ভ্যাট ৯.১৪ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ২.৯৩ লাখ টাকা প্রযোজ্য।
অন্যদিকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মোট ৮৪.৮০ লাখ টাকার বিক্রয় তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এ সময় প্রতিষ্ঠান দাখিলপত্রে ১৫.৮৯ লাখ টাকা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে। অর্থাৎ এই মাসের দাখিলপত্রে ৬৮.৯১ লাখ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে, যার ওপর পরিহারকৃত ভ্যাট ৮.৬৮ লাখ টাকা। এই ভ্যাট যথা সময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ১.৯১ লাখ টাকা প্রযোজ্য।
ওই দুই মাসেই খান’স কিচেন ১.৪২ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করে ১৭.৮২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে, যার উপর ২ শতাংশ হারে সুদ ৪.৮৪ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ২২.৬৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দারা অন্যান্য মাসগুলোতেও অনুরূপ গরমিল দেখতে পেয়েছেন।
ক্যাটারিং সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জব্দকৃত ভ্যাট সংক্রান্ত সব দলিলাদি যাচাই-বাছাই এবং প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার পর থেকে মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে।
ভ্যাট আইন পরিপালন না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।