তিন নবীন স্থপতিকে অ্যাওয়ার্ড দিল কেএসআরএম

মেধাবী ও প্রতিভাবান ভবিষ্যৎ স্থপতিদের উৎসাহ দিতে ‘কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ডস ফর ফিউচার আর্কিটেক্টস : বেস্ট আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থিসিস’ শিরোনামে কর্মসূচির আওতায় নবীন স্থপতিদের অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে কেএসআরএম।
১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা গবেষণাপত্রের প্রকল্প প্রদর্শনীর পর জুড়ি বোর্ডের বিচার বিশ্লেষণের পর এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে গত বুধবার সন্ধ্যায় এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়।
কেএসআরএম ও আইএবির যৌথ উদ্যোগে সেরা গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে প্রকল্প প্রদর্শনের পর বিজয়ী নবীন স্থপতিদের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে সম্প্রতি কেএসআরএমের সঙ্গে আইএবির সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। পরবর্তী সময়ে ২৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী প্রকল্প প্রদশর্নী অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইবির অধিভুক্ত ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনটি করে মোট ৩০টি সেরা গবেষণাপত্র প্রকল্প আকারে প্রদর্শন করা হয়।

এর মধ্যে সেরাদের সেরা নির্বাচিত করা হয় তিন অংশগ্রহণকারীকে। একটি অভিজ্ঞ ও উচ্চ পর্যায়ের জুড়ি বোর্ড আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর দূরদর্শিতা ও মেধা প্রকাশের ভিত্তিতে তাদের নির্বাচিত করেন।
বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শন শেষে জুড়ি বোর্ডের বিবেচনায় সেরা নির্বাচিত হয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে প্রথম হয়েছেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির মো. আরমান আলম, দ্বিতীয় হয়েছেন আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃষ্টি সরকার ও তৃতীয় হয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রহমান গোলাম মাহমুদুর।
এ ছাড়া ফাহিম হাসান ও শরীফুল আলমকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে অর্থ পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান, পরিচালক সারোয়ার জাহান, আইএবির প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলানিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক জুয়েল মাজাহার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে নবীনদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। নিরলস প্রচেষ্টা থাকলে তারা বিকশিত হতে পারবে। সময় এসেছে স্কোরভিত্তিক স্ক্যানিংয়ের। সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উন্নয়ন হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থার মধ্যে বিরাজমান রয়েছি। সেই ব্যবস্থার মধ্য থেকে উত্তরণের জন্য আমরা যাঁরা অবিরাম পরিশ্রম করে চলছি, তার মধ্যে আপনারাও (স্থপতি) আছেন।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘স্থপতিদের জন্য দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পগোষ্ঠীরা উদ্যোগ নিলে আমাদের সন্তানরা আরো উৎসাহী হবেন। আমাদের স্থাপনা হতে হবে টেকসই, সৃজনশীল ও পরিবেশসম্মত। আমি বিশ্বাস করি, এটি সম্ভব হবে, আমরা যে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি সেখানে আপনাদের সৃজনশীলতা প্রতিফলিত হবে।’
অনুষ্ঠানে তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘টেকসই নগর উন্নয়নে তিনটি বিষয় (অর্থনীতি, পরিবেশ, সাম্য) জরুরি। সেটা হচ্ছে না। উন্নয়ন হচ্ছে শুধু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও শারীরিকভাবে সবলদের। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের কোনো সুযোগ নেই।’
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) সভাপতি জালাল আহমেদ বলেন, ‘কেএসআরএম ও আইএবির যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নতুন পেশায় আগত সৃষ্টিশীলদের স্থাপত্য শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।’
কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্টের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা যারা স্টিল সেক্টরে কাজ করি, সব সময় পণ্যের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এখানে সৌন্দর্য দেখানোর কোনো জায়গা নেই। কিন্তু যাঁরা আমাদের পণ্য ব্যবহার করেন। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কিছু একটা বানান। বাড়ি, ফ্যাক্টরি এমনকি আমাদের দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। এসব বানানোর পেছনে মানুষের অনেক আবেগ, অনেক স্বপ্ন থাকে। আমাদের পরিশ্রম আর সৃজনশীলতার মাধ্যমে মানুষের স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটায় আমাদের আর্কিটেক্টসরা। তাই ভাবলাম যাঁরা আমাদের বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনার সৌন্দর্য উপহার দিচ্ছেন তাঁদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আর যদি ধন্যবাদ দিতেই হয়, এমন কিছু একটা করে দেওয়া উচিত, যার দীর্ঘমেয়াদি অর্থবহ প্রভাব থাকবে। তাই আমরা আইএবির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভবিষ্যতের আর্কিটেক্টদের উৎসাহ দেওয়ার এ আয়োজন করেছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএমের উপদেষ্টা (বিক্রয় ও বিপণন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহিদুর রহমান, বিক্রয় ও গবেষণা বিভাগের প্রধান কর্নেল আশফাকুল ইসলাম, মিডিয়া অ্যাডভাইজর মিজানুল ইসলাম। আইএবির সহসভাপতি (জাতীয় বিষয়াদি) স্থপতি মামনুন মুরশেদ চৌধুরী, আইএবির সম্পাদক (শিক্ষা) স্থপতি এম আরেফিন ইব্রাহিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক স্থপতি শেখ ইতমাম সৌদ, কেএসআরএমের ব্র্যান্ড বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান, এহসান রহমান, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিজান-উল-হক, সাদ হোসেন, মিঠুন বডুয়া প্রমুখ।