সংসদ সদস্যরা বছরে ৪ কোটি টাকা করে পাবেন
নিজ এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণে ২৮৪ জন সংসদ সদস্য প্রত্যেকে পাঁচ বছরে ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাবেন। এ হিসেবে একজন সংসদ সদস্য বছরে ৪ কোটি টাকা করে পাবেন। এ খাতে মোট ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনে চলতি অর্থ বছরের প্রথম একনেক সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২৮৪ জন সংসদ সদস্যের জন্য উল্লিখিত প্রকল্প অনুমোদন হলেও সিটি করপোরেশন এলাকার ১৬ জন সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা এ প্রকল্পভুক্ত হবেন না। শিগগিরই তাদের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে।
বাসস জানিয়েছে, আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি নতুন এবং দুইটি সংশোধিত এবং মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারি কোষাগার থেকে ৮ হাজার ৭১০ কোটি, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯৫ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা জোগান দেওয়া হবে।
একনেক সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকায় রাস্তা-ঘাট, সেতু, কালভার্ট প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২’-এর অনুমোদন দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকার সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্প ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত করবে।
মন্ত্রী বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থ সংসদ সদস্যরা নিজেরা সরাসরি ব্যয় করতে পারবেন না। তারা তাদের প্রকল্প তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন এবং এলজিইডি তা বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৪৬৬ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ১৪৩০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং ৬১৭৩ কিলোমিটার গ্রাম সড়কের উন্নয়ন এবং ৪৫৯৭ কিলোমিটার পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন হবে।
সভায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ ও মানব পাচার রোধ এবং ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সক্ষমতা বাড়াতে দুইটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি প্রকল্প নতুন ও অন্যটি সংশোধিত। প্রকল্প দুইটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, এ দুই প্রকল্পের মধ্যে ‘বর্ডার ম্যানেজম্যান্ট ইক্যুইপমেন্ট ফর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় বিজিবি’র জন্য জিএসপি মেশিন উইথ কলিগ পজিশন, থার্মাল ইমেজিং বাইনোকুলার, ফগার মেশিন, নাইট ভিশন গোগলস, স্যাটেলাইট ফোনসহ প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস কেনা হবে।
এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবির ৬০টি বিওপি নির্মাণ’ শীর্ষক অন্য প্রকল্পের আওতায় সীমান্ত এলাকায় ৬০টি বর্ডার আউটপোস্ট নির্মিত হবে। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে সর্বমোট ৮৮৩টি ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ৬৬৭টি ক্যাম্পের ভবন এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে। অনুমোদিত এ প্রকল্পের আওতায় একুশটি সীমান্তবর্তী জেলায় ৬০টি ক্যাম্পের ভবন নির্মিত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর ১৯টি পুরোনো জরাজীর্ণ অস্ত্রাগারের স্থলে পর্যাপ্ত সুবিধাসহ আধুনিক অস্ত্রাগার নির্মাণে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।’
একনেক সভায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ছয়টি নতুন জাহাজ ক্রয়-সংক্রান্ত প্রকল্পের অনুমোদন সম্পর্কে মুস্তফা কামাল বলেন, সংস্থাটির বর্তমানে আটটি জাহাজ রয়েছে। এগুলোর গড় বয়স ৩০ বছরেরও বেশি।
আজকের সভায় অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় বিএসসির জন্য তিনটি তেলবাহী এবং তিনটি পণ্যবাহীসহ মোট ৬টি জাহাজ কেনা হবে। এর প্রতিটি জাহাজের ধারণ ক্ষমতা হবে ৩৯ হাজার টন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৪৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১৪৪৮ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৯৫ কোটি টাকা দেয়া হবে। ২০১৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

অর্থনীতি ডেস্ক