রেমিটেন্স বাড়াতে বিশ্ববাজার বুঝে শ্রমিক গড়তে হবে
২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে গত অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। প্রবাসী আয় বাড়াকে ইতিবাচক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, রেমিটেন্স আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারকে বুঝে শ্রমিকদের গড়ে তুলতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির তাগিদ বিশ্লেষকদের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা লাখ-লাখ বাংলাদেশি, তাদের আয় করা অর্থ দেশে পাঠান। এই প্রাবাসী আয় বরাবরই দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দিয়ে আসছে মজবুত ভিত্তি। কিন্তু বছরের পর বছর রেমিটেন্সের অঙ্কটার ধারাবাহিক বৃদ্ধিতে হঠাৎ করেই ছেদ পড়েছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। যেখান থেকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বিদায়ী অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এলো রেকর্ড পরিমাণ। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০৮ কোটি ডলার বেশি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যা দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় তার মধ্যে রেমিটেন্স অন্যতম। সে জন্য আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে জনশক্তি দক্ষ করে গড়ে তারপর পাঠাতে হবে। আমরা দ্রুত এই ধরনের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছি।’
অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘১৫ বিলিয়ন রেমিটেন্স আয় শুধু আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি পূরণ করছে, তা নয়। আজকে যে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, সেটার পেছনে এই রেমিটেন্সেরই মূল অবদান আছে বলে আমি মনে করি।’
বর্তমানে বিশ্বে রেমিটেন্স আয়ের তালিকায় শীর্ষ তিনটি দেশই এশিয়ার- ভারত, চীন ও ফিলিপাইন। অথচ ফিলিপাইনের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক জনশক্তি বিদেশে থাকলেও তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পরে। এ জন্য অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানোকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির তাগিদ তাঁদের।

ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের ১৫ জন শ্রমিক যা আয় করে তাদের একজন নার্স বা শ্রমিক তার চেয়ে বেশি আয় করে। ভকেশনাল টেকনিক্যালসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে প্রতিটি জেলায় স্কুল খোলা হয়েছে। এরা যখন বেরিয়ে আসবে আমরা আশা করি তখন দক্ষ জনসম্পদ পাঠাতে পারব।
ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন রকমের প্রাতিষ্ঠানিক চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু বিদেশে যে ধরনের শ্রমিকের প্রয়োজন ঠিক সেটাকে টার্গেট করে এগুলো করা হচ্ছে না। সুতরাং সেই মার্কেট নিড অরিয়েন্টেড ট্রেনিং এবং সেই করেস্পন্ডিং স্কিলটা সেজন্য প্রয়োজন তাদের দেশের ট্রেইনার এনে ট্রেনিং দেওয়া। ল্যাংগুয়েজ স্কিল দেওয়া। এগুলো করে মার্কেট টার্গেট করে এই দক্ষতাকে বাড়াতে হবে।’
এ ছাড়া প্রবাসী আয় বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা কমিয়ে, নতুন বাজার খোঁজার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।

হাসানুল শাওন