দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ৬১ সেতু নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন
দেশের পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য দুই হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ছোট ও মাঝারি ধরনের ৬১টি সেতু নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এটিসহ মোট ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আজ মঙ্গলবার একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজকের একনেক সভায় ছয় হাজার ২৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকার দুই হাজার ৬৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে। আর প্রকল্প সাহায্য থেকে তিন হাজার ৫৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, বৈঠকে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ‘ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। কিন্তু অর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ও অনিরাপদ সেতু প্রতিস্থাপন করা হয়নি। ফলে ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ সমস্যা দূর করতে দেশের পূর্বাঞ্চলে জাপান সরকারের অর্থায়নে এক হাজার ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবার জাইকার অর্থ সহায়তায় ‘ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় ৬১টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে রংপুর ১৯টি, রাজশাহী ১৬টি, গোপালগঞ্জ সাতটি, খুলনা নয়টি, বরিশাল নয়টি ও নরসিংদী অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি সেতু হবে।
প্রকল্পটির ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক হাজার ছয় কোটি টাকা আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে এক হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ অক্টোবর ২০১৫ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদকালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বৈঠকে অন্য অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো এক হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটার গেজ এবং ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৭৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে রেলের জন্য আরেকটি ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন ও লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অরগানাইজেশন (এমপিও) ও পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)-এর অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
‘ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন আওরঙ্গবাদ হতে ব্রাহাবাজার ঘাট পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণমূলক কাজ’ প্রকল্পটি ২১৭ কোটি ৬২ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৭২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সোনাপুর (নোয়াখালী)-সোনাগাজী (ফেনী)-জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
৩৩ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করে ২১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘শেরে বাংলানগরের বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ‘প্রকল্পের ১ম সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক কমিটি। ১১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ‘বাংলাদেশে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর উন্নয়ন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালেযর উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
এ ছাড়া ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (আইডিবি) প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী এনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা