‘হয় অর্থ ছাড় করতে হবে, নয়তো খুন’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের ব্যাংক কর্মকর্তা মাইয়া স্যানটোস দেগুইতোর সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছে দেশটির তদন্ত কমিটি।
সেখানে দেগুইতোকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের অন্যতম হোতা বলে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে অর্থপাচারের তদন্তে দেশটির ব্লু রিবন তদন্ত কমিটি। তিনি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন।
স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্লু রিবন তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য একটি নির্বাহী অধিবেশন ডাকে। সাক্ষ্য গ্রহণের শুরুতে রিজাল ব্যাংকের সাবেক গ্রাহকসেবা বিভাগের প্রধান রোমুলডো আগাররাদো জানান, দেগুইতো বলেছেন, হয় আমাকে এ অর্থ ছাড় করতে হবে, নতুবা আমি অথবা আমার পরিবার খুন হব। তবে কারা তাকে এ হত্যার হুমকি দিয়েছিল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেননি তিনি।
আগাররাদো বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক অ্যাঞ্জেলা টোরেসের সামনে দেগুইতো এ হুমকির কথা জানান।
এর আগেই অবশ্য দেগুইতোর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত অভিযোগে ব্যাংকের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিটির কাছে শুনানিতে আগাররাদো জানান, দেগুইতোর গাড়িতে ২০ মিলিয়ন পেসো (ফিলিপিনো মুদ্রা) তুলতে দেখেছেন। তবে সে সময় বলা হয়েছিল, চীনের ব্যবসায়ী উইলিয়াম গোর রেমিট্যান্সের অর্থ এটা।
তবে এখন ধারণা করা হচ্ছে, এ অর্থ ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন (আট কোটি ১০ লাখ) ডলারের অংশ। আজ বৃহস্পতিবার ওই প্রত্যক্ষদর্শী ফিলিপাইনের সিনেট কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এ কথা জানান আগাররাদো।
ওই প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য দেওয়ার পরপরই ব্লু রিবন কমিটির কাছে দেগুইতো আবেদন করেন, তাঁকে যেন এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কমিটি চূড়ান্তভাবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়। সিনেটের সদস্য জুয়ান পন্স এনরিল ব্যাংকের শাখায় তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
দৈনিক ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, আজ সকালে দেগুইতোর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলে তিনি তাঁর জীবনের নিরাপত্তায় প্রকাশ্যে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তদন্ত কমিটি একটি নির্বাহী অধিবেশন ডাকতে সম্মত হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। ওই চুরির তদন্তে নিয়োজিত ব্লু রিবন কমিটি বলছে, আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিটের শাখা থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই অর্থ ব্যাংকটির চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরে এই অর্থ ক্যাসিনোতে ব্যবহার করা হয়।
এদিকে চলতি মাসে এই চুরি যাওয়ার ঘটনাটি প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার জের ধরে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে সরে দাঁড়ান ড. আতিউর রহমান।