বাংলাদেশে উন্নত চুলা ব্যবহারে ৩৩ হাজারের বেশি জীবন বাঁচবে
ঘরের মধ্যে খোলা আগুনে রান্নায় স্বাস্থ্যের ওপর যে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে তা একদিনে দুই প্যাকেট সিগারেট খাওয়ার সমান হতে পারে। কাঠ বা অন্য কোনো জৈব জ্বালানি ব্যবহার ঘরের মধ্যে রান্না করা প্রতি ১০টি পরিবারের নয়টিই ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ডেনমার্কের পরিবেশবাদী সংস্থা কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার গৃহস্থালির বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কার্যকর উপায় চিহ্নিত করে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে।
ডেনমার্কের পরিবেশবাদী সংস্থা কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের সভাপতি ড. বিয়র্ন লোমবোর্গ বলেন, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা, বাংলাদেশে এই দূষণ প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণা ঘরের ভেতরের বায়ুর মান উন্নত করায় কার্যকর হতে পারে।
বিয়র্ন লারসেন তাঁর গবেষণায় ঘরের ভেতরের মারাত্মক বায়ুদূষণ হ্রাসের দুটি উপায়ের কথা বলেছেন। মানুষ হয় একই জৈব জ্বালানি, যা অধিকাংশ বাংলাদেশি পরিবার বর্তমানে ব্যবহার করে, তাই জ্বালাতে পারে, কিন্তু রান্নার চুলা হবে উন্নত মানের অথবা এমন জৈব জ্বালানির পরিবর্তে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার, যা বেশি পরিচ্ছন্নভাবে দাহ্য।
ঘরের ভেতরে মানসম্পন্ন বায়ুর ব্যবস্থা করার সহজতম উপায়টি হলো জৈব জ্বালানির উন্নত রান্নার চুলা। উন্নত চুলা সাধারণত বদ্ধ হয় এবং নির্দিষ্ট অংশে চিমনি থাকে, যা তাপের অপচয় হ্রাস করে, বায়ুদূষণ রোধ করে, এবং গতানুগতিক চুলা বা খোলা আগুনের চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে রান্নার পাত্রে তাপ ছড়িয়ে দেয়। উন্নত চুলা সাধারণত জৈব জ্বালানিকে আরো কার্যকরভাবে এবং কম দূষণের সঙ্গে দগ্ধ করে। বাংলাদেশে দুটি চুল্লি এবং একটি চিমনিসহ তিন বছর স্থায়ী হবে এমন একটি চুলায় বছরে খরচ প্রায় এক হাজার টাকা।
বাংলাদেশে তিন কোটি পরিবারের সবাই যদি পুরোনো চুলার পরিবর্তে উন্নত রান্নার চুলা নেয়, তাহলে বছরে ৩৩ হাজারের বেশি জীবন বাঁচবে। আর উন্নত চুলা যেহেতু বেশি কার্যকর, তাই পরিবারে রান্নার সময়ও বাঁচবে দিনে ১৫ মিনিট করে এবং জ্বালানি সংগ্রহ করার সময়কে অর্ধেকে নেমে আসবে। সব মিলিয়ে, উন্নত রান্নার চুলার জন্য প্রতি এক হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিটি পরিবার স্বাস্থ্য এবং সময় সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার সুবিধা পাবে।
ঘরের ভেতরের বায়ুর মান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত চুলা ব্যবহারের পরও বেশির ভাগ সমস্যা রয়ে যায়। এরপরও প্রতিবছর দেড় লাখ মৃত্যুর মধ্যে ৩৩ হাজার জীবন বাঁচানো যাবে। তবে আরো একটি বিকল্প হলো এলপিজি, যা খুব শুদ্ধভাবেদাহ্য। এ ধরনের চুলার ব্যবহার ৯১ হাজারের বশি জীবন বাঁচাবে। তবে, এলপিজির খরচটাও বেশি। তবে এলপিজি ব্যবহারে সব মিলিয়ে, আপনি প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১২ হাজার টাকারই সুফল পাবেন।
জানা গেছে, কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রকল্প “ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো” -এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের জন্য শ্রেষ্ঠ নীতিমালা চিহ্নিত করা এবং ব্যয়িত টাকায় সবচেয়ে কার্যকর সমাধান আনা। ব্র্যাকের সহযোগিতায়, কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার, বাংলাদেশ, এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন শ্রেণির সেরা অর্থনীতিবিদদের দায়িত্ব দিয়েছে ৭৮টি বাংলাদেশি প্রকল্পের জন্য ব্যয় এবং সুবিধাসমূহ খতিয়ে দেখার জন্য।