রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় বাড়ার শঙ্কা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৩২০ কোটি ডলার। আর ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্প রুশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেওয়ার কথা। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয় আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাশিয়ার নভভোরোনেঝ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬ নম্বর ইউনিট চালু হচ্ছে দু-এক মাসের মধ্যেই। নভভোরোনেঝ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই ইউনিটের আদলেই নির্মাণ হচ্ছে বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
২০২২ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরের বছরই দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাকি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।
২০২৪ সালের মধ্যে দুটি ইউনিটেরই কার্যক্রম রুশ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝিয়ে নেওয়ার কথা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩২০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ও ৯০ শতাংশ দেবে রুশ সরকার।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রধান প্রকৌশলী পাভেল ভি ভ্লাসব বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে খানিকটা সমস্যা হলেও নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত ব্যয়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করব বলে আমরা আশাবাদী।’
তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নির্ধারিত ব্যয় ও সময় কোনোটিই পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশেও তারা ঠিক সময়ে করতে পারেনি এবং ঠিক বাজেটেও করতে পারেনি। এখন যেটা বলছে ১২ বিলিয়ন ডলারে হবে, সেটা বেড়ে ১৫, ২০ বিলিয়ন ডলারও হয়ে যেতে পারে। তখন দেখা যাবে যে আমাদের বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাচ্ছে এবং ওই টাকা আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও জোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছে।’
আবার এই কেন্দ্র নির্মাণে যে অর্থ খরচ হচ্ছে, তা দিয়ে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব বলেও মন্তব্য ড. ইজাজের।
তবে একবার খরচ করে প্রায় ৮০ বছর কম খরচে বিদ্যুৎ মিলবে—এমনটি দাবি করে এই ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর। তাঁর মতে, প্রকল্পের বেশির ভাগ অর্থই রুশ সরকার জোগান দেওয়ায় নির্ধারিত ব্যয়েই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়।
ড. শওকত আকবর বলেন, ‘আমরা বেশির দায়দায়িত্ব নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছি। আপনারা শুনেছেন যে, পরিবহন থেকে শুরু করে অফিস ভবনগুলো তারা করবে। আর উপকরণ তারা সরবরাহ করবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের যেটা নির্ধারিত খরচ সেটার মধ্যেই বাস্তবায়ন করব। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করব এই কারণে যে প্রস্তুতিমূলক যে কাজগুলো হওয়ার কথা, সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই করতে পেরেছি।’
নির্ধারিত খরচের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বললেও এরই মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গবেষণা, নির্মাণ, সরবরাহ ও ভ্যাট খাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।