রাষ্ট্রায়ত্ত ট্যানারিতে বিনিয়োগ করতে চায় ইতালি
বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাকে (ঢাকা লেদার কোম্পানি) গ্রিন ট্যানারি হিসেবে চালুর প্রস্তাব দিয়েছে ইতালির চামড়াশিল্প উদ্যোক্তা প্রতিনিধিদল।
আজ বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বাংলাদেশ সফররত ইতালির চামড়াশিল্প উদ্যোক্তারা বৈঠক করেন। এ সময় ইতালির বিনিয়োগকারীরা এ প্রস্তাব দেন।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মন্ত্রীকে জানান, পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ প্রতিষ্ঠানকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলতে ইতালির উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করবেন।
আমির হোসেন আমুকে উদ্যোক্তারা জানান, গ্রিন ট্যানারি রূপে (চামড়া প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান) চালু হলে কোনো ধরনের হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় কারখানাটিতে (ঢাকা লেদার) ওয়েট ব্লু এবং ফিনিস লেদার উৎপাদন করা যাবে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে।
ইতালির প্রতিনিধিরা জানান, ইতালির চামড়াশিল্প উদ্যোক্তারা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কোনো ধরনের দূষণ ছাড়াই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করছে। এ প্রক্রিয়ায় ওয়েট ব্লু লেদার উৎপাদনের পাশাপাশি ফিনিশ লেদার ও চামড়াজাত পণ্য তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এ ধরনের প্রযুক্তির প্রচলন না থাকায় বিশ্বের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো এসব দেশের জুতাসহ অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হলে, তৈরি পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ সময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব সবুজ চামড়াশিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সাভারে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারসহ (সিইটিপি) চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করা হচ্ছে। বিসিআইসির আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ কারখানা ঢাকা লেদার কোম্পানিকে গ্রিন ট্যানারি হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেশীয় চামড়াশিল্পের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন।’
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘ইতালীয় চামড়াশিল্প উদ্যোক্তাদের এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে গ্রিন ট্যানারি গড়ে তুলতে একই প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য ইতালীয় উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন তিনি।
১৯৯৭ সালে উৎপাদনের ছয়দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা লেদার কমপ্লেক্স চালু করার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি হিসেবে স্থাপন করার জন্য ইতালির প্রতিনিধিদল প্রস্তাব দেয়। ট্যানারিতে চলমান প্রযুক্তিতে শতভাগ চামড়া রফতানি করা সম্ভব হয় না। তবে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি (গ্রিন ট্যানারি) স্থাপন করতে পারলে তা সম্ভব হবে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুষেণ চন্দ্র দাস, জামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও দাবিরুল ইসলাম, বিসিকের পরিচালক পতিত পাবণ বৈদ্য, প্রতিনিধিদলের সদস্য ও ইতালীয় গ্রিন ট্যানারি বিশেষজ্ঞ এনটোনিও নাপ্পি মারকো ফোগলি, এনটোনিও লা পল্লা, পাওলো কুইরিসি এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আর এম এম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধ কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।