কোরবানির চামড়ার দাম নির্ধারণে সভা রোববার
কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণে আগামী রোববার সরকারপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন আজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
সচিব জানান, কাঁচা চামড়া সংগ্রহে প্রতিবছরই ঈদুল আজহার আগে পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। করণীয় নির্ধারণে ১০ আগস্ট একটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে।আগামী রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) চামড়া-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগে থেকে দাম নির্ধারণ ও তার ঘোষণা না দিলে কাঁচা চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকে। চামড়া পাচার রোধে এরই মধ্যে সীমান্তে টহল জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চামড়ার সুষ্ঠু সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সূত্রে জানা গেছে, চামড়ার দাম নির্ধারণী বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিএ, বাংলাদেশ হাইড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) ও পোস্তার কাঁচা চামড়া মজুদকারকদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্যানারির মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম নির্ধারণে অনীহা দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্যান্য বছরের মতো এবারও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়ার উপযুক্ত দাম পাবেন কি না—তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববাজারে মন্দাবস্থার কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দরপতন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যানারির মালিকরা। তাঁদের দাবি, আগের অর্ডারের চামড়া এখন রপ্তানি হচ্ছে, নতুন রপ্তানি অর্ডার কমছে। এ ছাড়া ট্যানারি সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে চামড়ার দর নির্ধারণ করে দিলে আরো লোকসানে পড়তে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিটিএর সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে চামড়ার দাম বেঁধে দিই। চামড়ার গ্রেডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রেডিং না বুঝেই শুধু সাইজ দেখে চামড়া কেনেন। এতে তাঁদের কেনা দামে চামড়া বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে ট্যানারির মালিকরা গ্রেডিং মেনেই চামড়া কেনেন। দাম কমানোর ক্ষেত্রে তাঁদের হাত নেই। তাঁরা নিয়ম মেনেই চামড়া কেনেন।’
শাখাওয়াত আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম প্রতিনিয়ত কমছে। গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ৩৫-৪০ শতাংশ কমেছে। দেশের বাজারে এ হার আরো বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এবার চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে কম হবে।’
গত বছর ঈদুল আজহায় রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০-৫৫ টাকা এবং রাজধানীর বাইরে ৪০-৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দর ধরা হয় ৩৫-৪০ টাকা। আর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা ও বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়।
এর আগের বছর ২০১৪ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৭০-৭৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে নির্ধারণ হয় ৬০-৬৫ টাকা। গত বছর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা, খাসির চামড়া ৩০-৩৫ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা।