জাতীয় পরিবেশ পদক পেল ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ

জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৮ পেয়েছে দেশের ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পদক তুলে দেন।
ওয়ালটনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।
চলতি বছর পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরিতে এ পদক পেল ওয়ালটন। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এ সময় পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম।
ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক ইভা রিজওয়ানা, আশরাফুল আম্বিয়া, অপারেটিভ ডিরেক্টর শরীফ হারুনুর রশীদ সনিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরিতে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে এবারে যৌথভাবে পুরস্কারটি পেয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভা। এ ছাড়া পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বাটার ফ্লাই পার্ক এবং পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদকপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের হাতে ২১ ক্যারেট মানের দুই তোলা স্বর্ণের সমপরিমাণ অর্থ এবং ৫০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সারা দেশে ৩০ লাখ গাছের চারা রোপণের ঘোষণা দেন।
জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই; নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাজাই’। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৃক্ষ আমাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ নৈসর্গিক শোভা বর্ধনে বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম।’
জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম বলেন, ওয়ালটন বিশ্বাস করে সবুজ এবং বাংলাদেশ একে অপরের সমার্থক। সবুজ বাংলাদেশের চিত্র বুকে ধারণ করে সব পর্যায়ে পরিবেশ ও জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছে ওয়ালটন।
ওয়ালটনের কারখানায় মোট আয়তনের অন্তত ৪০ শতাংশ গ্রিন জোন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়, যার মধ্যে আছে লেক এবং খেলার মাঠ। পরিবেশ সুরক্ষা ও বর্জ্য পরিশোধনের ব্যাপারে ওয়ালটন শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে বলে জানান শামসুল আলম।
পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে ওয়ালটন কারখানায় প্রতি ঘণ্টায় ২০ ঘনমিটার শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বর্জ পরিশোধন প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদিত বিদ্যমান ইটিপি জিরো ডিসচার্জ প্লান্টের মাধ্যমে দৈনিক ৪৩২ ঘনমিটার পানি পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ঘণ্টায় ৩০ ঘনমিটার পানি পরিশোধণ ক্ষমতার আরেকটি ইটিপি স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানা যায়।
কর্তৃপক্ষের সূত্রমতে, ওয়ালটন কারখানায় নিজস্ব এনভায়রনমেন্ট, হেলথ এবং সেফটি নীতিমালার আলোকে রয়েছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা, আছে সবুজে শোভিত প্রশস্ত আর পরিচ্ছন্ন রাস্তা। কারখানার কর্মীরা যাতে মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে সে বিষয়টিকেই ওয়ালটন গুরুত্ব দেয় বেশি।
আরো জানা যায়, বাংলাদেশে ওয়ালটনই সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ সিএফসি, এইচসিএফসি গ্যাসমুক্ত ও পরিবেশ-বান্ধব সাইক্লোপেনটেন্স (সি-৫) গ্যাস ব্যবহার করে পলিইউরেথেন ফোমিং প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করে আসছে। ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয় হাইড্রোকার্বন আর৬০০এ রেফ্রিজারেন্ট, যা পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এ ছাড়া এ ফ্রিজে ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসার ব্যবহৃত হয় বলে জানা যায়, যা ফ্রিজে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
ওয়ালটন পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনডিপি-বাংলাদেশের সহায়তায় সাইক্লোপেনটেন্স ও আর৬০০এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশ ও দেশের বাইরে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য সরবরাহ করে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা।
শুরু থেকেই শতভাগ কমপ্লায়ান্স মেনে চলা ওয়ালটন এরই মধ্যে উচ্চমানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা প্রদানের জন্য আইএসও ৯০০১:২০১৫ এবং আইএসও ১৪০০১:২০১৫ সনদ পেয়েছে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করায় অর্জন করেছে ওএইচএসএএস ১৮০০১:২০০৭ সনদ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের বিবেচনায় শিল্পায়নের সফল মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছে ওয়ালটন। শুধু তাই নয় ওয়ালটনের সফলতা নিয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয় বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।