ইন্টারনেট বন্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাকেজ, ডাটা নিয়ে ভাবনায় গ্রাহকরা
একদিকে চলছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন, অন্যদিকে জ্বালাও-পোড়াও। সব মিলিয়ে দেশ তখন উত্তাল। এরইমধ্যে গত বুধবার (১৭ জুলাই) রাত থেকে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ভোগান্তিতে পড়েন ব্যবহারকারীরা। অনেকেরই অভিযোগ ছিল, তারা পাচ্ছেন না ফোর-জি সেবা। তারপর হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল ইন্টারনেট। তখনও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সচল ছিল। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার পর থেকে সেই সেবাটিও আর পাচ্ছিলেন না ব্যবহারকারীরা।
এরপর গত মঙ্গলবার রাত থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্রডব্যান্ড চালু হয়। যদিও আজও (বৃহস্পতিবার) মেলেনি মোবাইল ইন্টারনেট। তবে, সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রবি-সোমবারের এই সেবা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে যারা স্বল্প মেয়াদে বিভিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর থেকে ইন্টারনেট ডাটা কিনেছিলেন, তারা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবহার না করতে পারলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ ডাটা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন—তাদের ডাটার কী হবে? যদিও অনেকের ধারণা—অপারেটরগুলো নিশ্চয় এ বিষয়ে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে। তবে, কোনো অপারেটর এখনও এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী জহিরুল জানান, তিনি বাংলালিংকের গ্রাহক। তিনি বলেন, গত ১৫ জুলাই (সোমবার) মোবাইলে এক সপ্তাহ মেয়াদি ১৮ জিবি ইন্টারনেট ডাটা কিনেছিলাম। এর মধ্যে চার জিবি ডাটা ব্যবহার হয়েছে। মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ১৪ জিবি অব্যবহৃত আছে। এখন আমার মোবাইলে ডাটা থাকলেও মেয়াদ নেই। এ বিষয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের কোনো ঘোষণা চোখে পড়েনি। তাদের সিদ্ধান্ত থাকা দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়।
আজিমপুরের বাসিন্দা গ্রামীণফোনের গ্রাহক গৃহিণী ফারজানা আক্তার বলেন, এক সপ্তাহের ডাটা কিনেছিলাম। কিন্তু, একদিন পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা। যে ডাটা অব্যবহৃত থেকে গেল, তার কী হবে?
একই এলাকার আরেক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ২৫ জুন এক মাস মেয়াদি ৪০ জিবি ডাটা কিনেছি। এর মধ্যে ২৬ জিবি ব্যবহার করেছি। কিন্তু গত ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছি না। আজ আমার মাসব্যাপী ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ শেষদিন। কিন্তু আমার এখন ১৪ জিবি ডাটা অব্যবহৃত আছে। এখন প্রশ্ন, আমার অব্যবহৃত ডাটা কি আমি পাব না? যদি না পাই, তবে এই ক্ষতি কি আমি একাই বহন করব?
ডাটা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি রেখে নর্দ্দার বাসিন্দা গ্রামীণফোনের আরেক গ্রাহক চাকরিজীবি ফেরদৌসি আরা বলেন, আমার স্বামী থাকেন বিদেশে। প্রতিনিয়ত ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সাবক্ষণিক মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করতে হয়। গত ১৫ জুলাই ডাটা কিনেছি। অল্পই ব্যবহার হছে। বর্তমানে প্যাকেজটির মেয়াদ শেষ, এখন আমার এই জমে থাকা ডাটা কোথায় যাবে? এটা তো আমার কারণে অব্যবহৃত, তা নয়।
শনির আখড়ার বাসিন্দা এয়ারটেলের গ্রাহক চাকুরীজীবি তাসফিয়া, মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা কিনেও ব্যবহার করতে পারেননি, কিন্তু মেয়াদ শেষ। মোবাইল অপারেটরগুলো কিছুই জানাচ্ছে না যে অব্যবহৃত ডাটার কী হবে? তিনি আরও বলেন, আমার অব্যবহৃত ২০ জিবি কীভাবে পাবে। আমি যদি না পাই, তবে কি ডাটার টাকা ফেরত পাব? এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত অপারেটরদের কাছ থেকে আসা উচিত বলে মনে করি। একই কথা ওয়ারির বাসিন্দা রবির গ্রাহক উম্মে কলুসুমেরও।
কবীর সাইফুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার একটি ক্রেডিট কার্ড আছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যাংক বন্ধ থাকায় ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতে না পেরে থাকলে তার জন্য ব্যাংক কোনো বিলম্ব ফি নেবে না। এমনকি, লোন পরিশোধের ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে তারা। কিন্তু মোবাইল অপারেটর বন্ধ থাকায় অব্যবহৃত ডাটার বিষয়ে কোনো বার্তা দেয়নি। এ বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল।
ইন্টারনেট বন্ধের কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের সঙ্গে বারবার চেষ্টার পরও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।