প্রবাসী আয় কমেছে ৩.২৫ শতাংশ
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলতি বছরের (২০২৪ সাল) সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের (২০২৩ সাল) জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এই সময়ের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কম এসেছে ছয় কোটি ৪১ লাখ ডলার বা তিন দশমিক ২৫ শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল ৫টা ২ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে এক ক্ষুদে বার্তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) প্রবাসী আয় এসেছে ১২ কোটি ডলার। আগের বছর (২০২৩ সাল) জুলাই মাসে যা ছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার।
জানা যায়, গত ১৪ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত (১৪দিন) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচিত সময়ে প্রতিদিন গড়ে এসেছে চার কোটি ২০ লাখ ডলার। অথচ জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ওই প্রথম ১৩ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল সাত কোটি ৫২ লাখ ডলার। জুলাইয়ে শেষ ৪ দিনে (২৮ থেকে ৩১ জুলাই) প্রবাসী আয় এসেছে ৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সেই হিসেবে, শেষ ৪ দিন প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধু গত বুধবার (৩১ জুলাই) প্রবাসী আয় এসেছে ১২ কোটি ডলার। আগের মাস জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। জুনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫৪ লাখ ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) জুলাইয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। ওই সময় প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ছয় কোটি ৩৬ লাখ ডলার।
চলতি বছরের গত জুনে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় পেয়েছিল দেশ। এক মাস না যেতে প্রবাসী আয়ে উল্টোচিত্র দেখা গেল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ে পাঁচদিন (১৯ থেকে ২৩ জুলাই) ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রবাসী আয়ের এই নেতিবাচক প্রভাব দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হবে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন কৌশলে যেকোনো মূল্যে প্রবাসী আয় বাড়াতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার গত ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে। এর ফলে গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এসময় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন পুরো বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বন্ধের পর গত ২৪ জুলাই থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়। অবশ্য সেইদিন ব্যাংকের লেনদেন চলে চার ঘণ্টা (বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত)। ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পাঁচদিন (১৯ থেকে ২৩ জুলাই) ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসা সম্ভব ছিল না। এতে ১৪ দিনে (১৪ থেকে ২৭ জুলাই) প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়ে। তবে মাসটির চার দিনে প্রবাসী আয় বেড়েছে। মাসটির শেষ চারদিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। প্রবাসী আয় ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।