প্রবাসী আয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি
বিদায়ী বছরে হাওয়া লেগেছে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) পালে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে যেন অনেকটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ইতোমধ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপ, সচেতনতা ও প্রণোদনায় অন্যান্য যেকোন বারের চেয়ে বেড়েছে প্রবাসী আয়। গত বছরের (২০২৩) তুলনায় চলতি বছরের (২০২৪) প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪৭৫ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা ২১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। চলতি বছরে (জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রবাসী আয় এসেছে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি আট লাখ ৭০ হাজার ডলার। যা গত বছর (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) এসেছিল দুই হাজার ১৯১ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও জুলাইয়ে তা নিম্নগতিতে নেমে আসে। গত জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার হলেও পরে তা বেড়ে গত জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। কিন্তু পরে কমে জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। প্রবাসী আয় এই ধরনের কমার একমাত্র কারণ, জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন বলে মনে করে অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলনে অনেক প্রবাসী তাদের কষ্টের অর্থ না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসী আয় না পাঠাতে ক্যাম্পেইনও করেছিলেন তারা। ফলে গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ঠিক তিনদিন পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে তিনি প্রবাসীদের কষ্টের অর্থ দেশে পাঠানোর আহ্বান জানান। সেই আহবান ও নিজেদের দেওয়া কথা রেখে চলেছেন প্রবাসীরা। ফলে পরের পাঁচ মাস বেশ ভাল পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ মাসে (আগস্ট থেকে ডিসেম্বর) প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ১৬৪ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ডিসেম্বরের প্রথম ২৮ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪২ কোটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ আট লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার এবং আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এর আগের চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) প্রবাসী আয় এসেছিল এক হাজার ৫০২ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। এর মধ্যে জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ সাত লাখ ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মেতে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
প্রবাসী আয় হলো দেশের ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, কারণ এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করতে হয় না। পাশাপাশি কোনো দায় পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ে ডলার এলে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ডলার ব্যয় হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ শোধে ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় যত বাড়বে দেশে ডলারের সংকট তত কমবে। একই সঙ্গে আমাদের রিজার্ভ শক্তিশালী হবে।
প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বৈধ পথে প্রবাসীদের টাকা পাঠাতে সচেতনতা বাড়ানোর কারণে এখন হুন্ডি বা অবৈধভাবে টাকা পাঠানোর প্রবণতা কমেছে। এতে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। হুসনে আরা শিখা বলেন, অর্থপাচার পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ডলার সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বিদ্যমান ব্যান্ড এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা। এতে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকগুলো এখন ১২২ টাকায় প্রবাসী আয় কিনছে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলছেন, প্রবাসীরা এখন অনেক সচেতন। তাদের ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে দেশে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অতীতের চেয়ে এখন প্রবাসী আয় বেড়েছে। রিজার্ভও বেড়েছে।
চলতি বছরের প্রবাসী আয়ের চিত্র
ডিসেম্বরের প্রথম ২৮ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪২ কোটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ডিসেম্বরের আলোচিত এই ২৮ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৩ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম এই ২৮ দিনে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় ৩৩ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ডলার এসেছে। প্রবাসী আয় আসার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২৫ কোটি ৪৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮ কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮ কোটি ৫০ হাজার ডলার।
নভেম্বরে প্রবাসী আয় নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) নভেম্বর প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার। সে হিসাবে গত নভেম্বরে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। নভেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১২২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিল ৮২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। নভেম্বরের ২৪ থেকে ৩০ পর্যন্ত দেশে এসেছিল ৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। নভেম্বরের ১৭ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৭ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার। ১০ থেকে ১৬ নভেম্বর দেশের প্রবাসী আয় এসেছিল ৬০ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। নভেম্বরের ৩ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১ কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৪ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স।
প্রবাসী আয় অক্টোবরে এসেছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত অক্টোবরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিল ৭২ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অক্টোবরে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসি আয় এসেছিল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় ৪৩ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার এসেছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে আসা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ২৬ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ১৯ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ে শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪০ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা মোট প্রবাসী আয়ের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ৩২ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা মোট আয়ের চার দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত আগস্টে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিল ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সাত কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আগস্টে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় ৪০ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ২৯ কোটি তিন লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ছয় লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছিল।
প্রবাসী আয় জুলাইয়ে এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। জুলাইয়ের ১৪ থেকে ২৭ পযন্ত (১৪দিন) দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচিত সময়ে প্রতিদিন গড়ে এসেছে চার কোটি ২০ লাখ ডলার। জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। প্রথম ১৩ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল সাত কোটি ৫২ লাখ ডলার। জুলাইয়ে শেষ ৪ দিনে (২৮ থেকে ৩১ জুলাই) প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। শেষ ৪ দিন প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫৪ লাখ ডলার। শুধুমাত্র ৩১ জুলাই প্রবাসী আয় এসেছিল ১২ কোটি ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার গত ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে। ফলে গত ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এসময় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন পুরো বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বন্ধের পর গত ২৪ জুলাই থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়। অবশ্য সেইদিন ব্যাংকের লেনদেন চলে চার ঘণ্টা (বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত)। ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পাঁচদিন (১৯ থেকে ২৩ জুলাই) ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসা সম্ভব ছিল না। এতে ১৪ দিনে (১৪ থেকে ২৭ জুলাই) প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়ে।
জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠানোর ফলে জুনে প্রবাসী আয় বেড়েছে জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রতিবছরই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠান। সর্বশেষ সমাপ্ত জুন মাসে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, রেমিট্যান্সে ডলারের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে ব্যাংকের দরে পার্থক্য কমে এসেছে। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স বাড়াতে অনেক চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের উৎসাহিত করছে, এতে প্রবাসী আয় বাড়ছে।
মে মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) মেতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। গত মেতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিল ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সাত কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আগস্টে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় ৪০ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ২৯ কোটি তিন লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ছয় লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছিল।
প্রবাসী আয় এপ্রিলে এসেছিল ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৪ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এরপরেই রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছিল ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। গত এপ্রিলের ১ থেকে ৫ পর্যন্ত ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। ৬ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। এ ছাড়া ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৬ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
মার্চ মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) মার্চে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত মার্চে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৬ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার এসেছে। মাসটিতে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। গত মার্চে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৯ কোটি ১৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এরপরে রয়েছে জনতা ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এছাড়া ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।
প্রবাসী আয় ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি চার লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত ফেব্রুয়ারিতে আসা প্রবাসীদের আয় এর আগের ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩) শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৯৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। এর আগে প্রবাসী আয়ে বেশ ভাটা নেমেছিল। গত মার্চ থেকে আগের বছরের জুন ছাড়া কোনো মাসেই ২০০ কোটি ডলার আসেনি। কোনো কোনো মাসে রেমিট্যান্স নেমে গিয়েছিল ১৫০ কোটি ডলারের নিচে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেকর্ড সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছিল।
জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত বছরের (২০২৩ সাল) জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৮৫ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। মাসটিতে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭০ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপরে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এছাড়া আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল আট কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সাত কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, এনসিসি ব্যাংকের সাত কোটি ৩০ হাজার ডলার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ছয় কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং অগ্রনী ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।