রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া, বেড়েছে রিজার্ভ
দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪০ কোটির বেশি মার্কিন ডলার। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরই ধারায় গতকাল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। আজ বুধবার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যত (সরকারি, বেসরকারি, বিশেষ ও বিদেশি ব্যাংক) ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এটা দেশের ইতিহাসে কোনো একক মাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। তবে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় রেকর্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড চলতি বছরের জুনে। এই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
প্রবাসী আয়ের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাবমান অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন। সেই হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ প্রবাসী আয় তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। এই সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ে শীর্ষ এই ব্যাংকগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪০ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা মোট প্রবাসী আয়ের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩২ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।
এ ছাড়া রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা মোট আয়ের চার দশমিক ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ ডলার, যা মোট আয়ের চার দশমিক ৫৭ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের চার দশমিক ৪৩ শতাংশ। সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের চার দশমিক ২২ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের চার দশমিক ১৬ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের তিন দশমিক ৯৮ শতাংশ। ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে আট কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যা মোট আয়ের তিন দশমিক ৫১ শতাংশ।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতা বাড়ানোর কারনে এখন হুন্ডি বা অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা কমেছে। এতে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই ধারায় বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।
প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, সেপ্টেম্বরে ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী আয় আহরণে শীর্ষে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৫ কোটি তিন লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং আগস্টে ২২২ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।