হয়রানি কমাতে অ্যাপে কর আদায়সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা এনবিআরের
করদাতাদের হয়রানি কমাতে এবং জাতীয় কোষাগারে রাজস্ব আদায় বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে কর্পোরেট ট্যাক্স ফাইলিং, আয়কর আইনজীবীদের জন্য একটি অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা এবং সব করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি বিশেষভাবে প্রস্তুত অ্যাপ।
বর্তমানে আয়কর আইনজীবীরা ম্যানুয়ালি তাদের গ্রাহকদের আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। কিন্তু করদাতাদের হয়রানি কমাতে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে গুরুত্ব দিয়েছে এনবিআর। কিন্তু এই পরিবর্তন আয়কর আইনজীবীদের জন্য সমস্যা তৈরি করে। স্বতন্ত্র আয়করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য এনবিআর নির্ধারিত ওয়েবসাইটে একটি হিসাব খুলতে হবে। এ জন্য সেই ব্যক্তির (করদাতার) বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের একটি সিমকার্ড লাগবে। তবে এটি ট্যাক্স আইনজীবীদের তাদের ক্লায়েন্টদের পক্ষে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং বিষয়টি সমাধানে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘কর আইনজীবী ও করদাতাদের সমস্যা সমাধানে আমরা খুবই আন্তরিক।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ এমন একটি ব্যবস্থা তৈরির জন্য কাজ করছে, যেখানে আয়কর আইনজীবীরা তাদের নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আয়কর আইনজীবীরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবেন।’
ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং বেসরকারি খাতের আয়কর সার্কেলের আওতাধীন সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন (ই-রিটার্ন) দাখিল বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা জারি করেছে এনবিআর।
সব তফসিলি ব্যাংক, সব মোবাইল টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং কিছু বহুজাতিক কোম্পানি যথাক্রমে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসির কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতি থেকে করদাতারা ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কর পরিশোধ এবং দাখিলকৃত রিটার্নের কপি, রশিদ, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদের কপি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করার সুবিধা পেতে পারেন। এ ছাড়া যে কেউ বিগত বছরের জন্য দাখিল করা ই-রিটার্ন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন।
ই-রিটার্নে দাখিলের করতে সফল নিবন্ধনের জন্য প্রত্যেক করদাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে নিবন্ধিত একটি বায়োমেট্রিক সিম প্রয়োজন। করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে বর্তমানে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সময় বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট করদাতারা যাতে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন সেজন্য তার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘কিছুটা সময় লাগবে, এ বছর যদি আমরা সেটা করতে না পারি, তাহলে আমরা শতভাগ নিশ্চিত যে আগামী বছরের মধ্যে এটা হয়ে যাবে, যেখানে করপোরেট করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০তম দিন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ওপর গুরুত্বারোপ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
আগামী বছর থেকে আয়কর রিটার্নের জন্য একটি অ্যাপ চালুর পরিকল্পনাও করছে এনবিআর। আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘বিশেষভাবে প্রস্তুত অ্যাপের মাধ্যমে করদাতারা এ কাজ করতে পারবেন।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চলমান অনলাইন পদ্ধতিতে এসব বিষয় চালু করার পর এনবিআর সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের উদ্যোগ নেবে। কিছু ব্যতিক্রমও থাকতে পারে।