বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় এডিবি : কান্ট্রি ডিরেক্টর
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেছেন, ম্যানিলা-ভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থাটি আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়, যার মাধ্যমে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ‘একেবারে স্পষ্ট’। আমরা এখানে চলমান প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চাই ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সফল উদাহরণগুলো পুনরায় বাস্তবায়ন করতে চাই, যাতে আরও বেশি পৌরসভা, শহর ও সাধারণ মানুষ এডিবির সহায়তা থেকে উপকৃত হতে পারেন।’
আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) পটুয়াখালী ও খুলনায় এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনের সময় বাসসের সঙ্গে আলাপকালে এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কথা বলেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে এডিবি’র অর্থায়ন সরকারের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
পটুয়াখালী পৌরসভা ও খুলনার চালনা পৌরসভায় এডিবি অর্থায়িত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জিয়ং বলেন, ‘এডিবি বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন পৌরসভায় বিনিয়োগ প্রকল্পে সহায়তা করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, এই (মিডিয়া) সফর আমাকে প্রকল্প ও বিনিয়োগের প্রকৃত প্রভাব সরাসরি দেখার অসাধারণ সুযোগ দিয়েছে— যা শহর, অঞ্চল ও বিশেষ করে মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ভবিষ্যতে এডিবি সরকার, পৌরসভা ও নগর প্রশাসনসহ প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগ হলেও এর উন্নয়নমূলক প্রভাব হবে উল্লেখযোগ্য, এডিবি এ ধরনের প্রকল্পে ধারাবাহিক সহায়তা প্রদান করবে।
উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা মোকাবিলায় এডিবির আর্থিক পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, চলমান ‘কোস্টাল টাউন ক্লাইমেট রিজিলেন্স’ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্যই হলো উপকূলীয় শহর ও পৌরসভাগুলোতে এই ধরনের লবণাক্ততা সমস্যা মোকাবিলা করা। এখানে কেবল লবণাক্ততার ওপর নয় বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। যাতে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হয়।
কান্ট্রি ডিরেক্টর আরও বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমাদের নগর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো ‘সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ করা। যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এটি সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় ভবিষ্যতে বিনিয়োগ জোরদার করা হবে কিনা— জানতে চাইলে কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই, আমাদের লক্ষ্য হলো-উপকূলীয় পৌরসভাগুলোকে, বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় শহর এলাকাগুলোতে ধারাবাহিক সহায়তা প্রদান করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সমন্বিত কাঠামো এগিয়ে নিলে ভবিষ্যতে শহরগুলো বিশেষ করে পৌরসভাগুলোই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র। এই সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি শহর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরও বেশি অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক প্রভাব বয়ে আনবে।’
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০২৬ সালে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বড় অংকের সহায়তা নিয়ে আসতে পারে সংস্থাটি। এই অর্থায়ন অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী বছর অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে পারে।’
ম্যানিলা-ভিত্তিক এই সংস্থাটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তাদের ২০২৬ সালের জন্য ‘কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন’ (সিপিএম)-এ এই অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এ ছাড়াও, এই ১০টি প্রকল্পের বাইরে বাংলাদেশের জন্য যে কোনো জরুরি বা অগ্রাধিকারমূলক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘স্ট্যান্ডবাই তহবিল’ হিসেবে অর্থ প্রস্তুত রাখা হবে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার এডিবি গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে এবং ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এডিবি বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে এডিবির বর্তমান পোর্টফোলিও ৫১টি চলমান প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের।
১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ, সুশাসনসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৩৩ দশমিক ৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও ৫৭১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)