রাবির নতুন উপ-উপচার্যের দুর্নীতি রোধে কাজ করার ঘোষণা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নতুন উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সচল রাখতে কাজ করে যাবেন বলেও জানান তিনি।
আজ শনিবার দায়িত্ব নিয়ে গণমাধ্যমকে এসব কথা কলেন তিনি। বেলা ১১টার দিকে বিদায়ী উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
এ সময় অপর উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালামসহ অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, অফিস প্রধান, বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজসহ বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির জনকের প্রতিকৃতি ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মোনাজাত করেন। এছাড়া তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ড. শামসুজোহার সমাধি ও শহীদ চার জাতীয় নেতার অন্যতম এ এইচ এম কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করেন।
দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেহেতু মানুষ, কোনো কাজ করতে গিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে, এ ক্ষেত্রে আমি প্রত্যাশা করব আপনারা আগে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ধরিয়ে দিন। ভুল হয় সংশোধন করার জন্য। আর যদি সংশোধন না করি, তখন অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা আমার ওপর বর্তাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে আইনগুলো বিভিন্ন আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছেন, তা আমার ওপরও প্রয়োগ হবে। এটি আমি আনন্দিত চিত্তে মাথা পেতে নেব।’
অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক ছিলেন। বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহানসহ তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বেশ তৎপর ছিলেন। তিনি বলেন, ‘যে আদর্শ নিয়ে তাঁরা দুর্নীতি-অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সে আদর্শ বাস্তবায়িত হোক, এখন এটাই আমার একমাত্র কামনা।’
লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ তিনি দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাঁর প্রথম কাজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট পুনর্বহাল রাখা এবং তা সব ক্ষেত্রে কার্যকর করা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার হোক, সংস্কৃতিচর্চার হোক এবং গবেষণার হোক, এখানে বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মানুষ সৃষ্টি হোক।’
অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকেরা মিলে তাঁরা নির্যাতন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। এটি ছিল একটি আদর্শভিত্তিক আন্দোলন। এই আন্দোলনে তাঁরা বা তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নিয়ে সেই কথাগুলোর বাস্তবায়ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এটি বাস্তবায়িত হবে ’৭৩ সালেল অ্যাক্টের মাধ্যমে।
গত ১৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন। ১৭ জুলাই থেকে পরবর্তী চার বছরের জন্য এই নিয়োগ কার্যকর থাকবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভূতত্ত্ববিদ মো. সুলতান-উল-ইসলাম ১৯৯৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন ও ২০০৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপ-উপাচার্য হিসেবে নিযুক্তির সময় তিনি ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে সভাপতির দায়িত্বে রত ছিলেন। তিনি এ পর্যন্ত পিএইচডি পর্যায়ে চারটি, এমফিল পর্যায়ে দুটি, এমএসসি পর্যায়ে পঁচিশটি গবেষণা এবং বিএসসি (সম্মান) পর্যায়ে পঁয়ত্রিশটি গবেষণা প্রকল্প তত্ত্বাবধান করেছেন। বর্তমানে তিনি তিনটি এমফিল/পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধানরত আছেন। তাঁর নব্বইটির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিষয়ে তাঁর ছয়টি গবেষণা পুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ও পরবর্তীতে উপপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া ও রংপুরের খালাশপীর কয়লাক্ষেত্রের আবিষ্কারক ভূতত্ত্ববিদদের অন্যতম ছিলেন ও খনি দুটির উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়নে পরামর্শক ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি নির্ধারনের জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং বেঙ্গল বেসিনের স্তরতাত্ত্বিক মূল্যায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য ও ভূতাত্ত্বিক হিসেবে জার্মান ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করেন।
দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের নতুন আহ্বায়ক অধ্যাপক সামাদী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকসমাজের নতুন আহ্বায়ক হয়েছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের এক আলোচনা সভা শেষে সামাদীকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপ-উপাচার্য ও সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক সুলতান-উল-ইসলামকে অভিনন্দন জানান।
নতুন আহ্বায়ক অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী জানান, তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি। তাঁরা প্রায় দুই বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। তাঁদের এই আদর্শের আন্দোলন চলমান থাকবে। তাঁদের আহ্বায়ক বর্তমানে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও যদি অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাঁর বিরুদ্ধেও আন্দোলন চলবে। কাউকে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।