শিক্ষার্থীদের পর শিক্ষকদের আন্দোলনে ‘অচল’ রুয়েট
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষকরা। এতে প্রতিষ্ঠানটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
গত সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত আছেন রুয়েট শিক্ষকরা। আজ বুধবার পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
এর আগে ৩৩ ক্রেডিট বাতিলের দাবিতে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করে রুয়েটের ২০১৪ ও ২০১৫ সিরিজের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন চলাকালে উপাচার্যসহ প্রায় ২০ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার দুপুরে ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় রুয়েট। সেদিনই দুপুর ২টার দিকে রুয়েটের শিক্ষক সমিতি জরুরি এক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমরা গত সোমবার শিক্ষকদের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে তাঁদের কাছে মৌখিকভাবে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা ক্ষমা না করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন। আমরা তো সবাই আন্দোলন করেছি, আন্দোলন করে দাবি আদায় করেছি। সেখানে দোষী তো আসলে নির্দিষ্ট কেউ না।’
‘তা ছাড়া শিক্ষকরা আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, তার অনেকগুলোই মিথ্যা। যেমন, তাঁদের আমরা খাওয়া-দাওয়া করতে দিইনি। কিন্তু উপাচার্য স্যারের কার্যালয়ের সামনের সিসিটিভির ফুটেজ দেখলেই দেখা যাবে এ অভিযোগ মিথ্যা। প্রতি বেলার খাবারই আমরা যেতে দিয়েছি বা ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া ওষুধ আনেনি, মা অসুস্থ ছিল—এমন অজুহাতে অনেক শিক্ষককে আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায়ই বাড়ি যেতে দিয়েছি।’
এদিকে আগামী শনিবার শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাইতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করে দাবি আদায় করেছি। আমাদের দাবি যৌক্তিক ছিল। সে জন্য এখানে দোষের কিছু নেই। তার পরও শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন। তাঁরা আন্দোলনের সময় যদি কোনো কারণে মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন সে জন্য আমরা ক্ষমা চাইব। আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রাথমিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী শনিবার শিক্ষকদের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইব।’
‘এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যাওয়ায় আর বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধ থাকায় আমরা শনিবার লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়ার দিন ঠিক করেছি। আমরা আশা করছি, শিক্ষকরা আমাদের ক্ষমা করে ক্লাসে ফিরে আসবেন।’
আন্দোলন করেনি (২০১৪ ও ২০১৫ সিরিজের বাইরে) এমন এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা তো আন্দোলন করিনি। কিন্তু তার পরও আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই দুই সিরিজের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছিল, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম শিক্ষকরা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আমাদেরও এভাবে শিকার হতে হবে, সেটা বুঝতে পারিনি। আসলে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, শিক্ষকরা চাইলেই এটা সমাধান করে ফেলতে পারেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করছেন না, এটা তাঁদের এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা।’