আগে ‘ভুতুড়ে’ ফেল, এখন ‘বাধ্যতামূলক’ ফরম পূরণ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫ সালের স্নাতক চূড়ান্ত (অনার্স ফাইনাল) পরীক্ষায় ‘ভুতুড়েভাবে’ ফেল করা হাজারো শিক্ষার্থীর খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘোষণা করে পরবর্তী বছরের পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণের তারিখ।
ফলে বাধ্য হয়েই নিরীক্ষণের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই আবার পরীক্ষায় বসার জন্য ফরম পূরণ করতে হচ্ছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের। নিরীক্ষণের পর যদি দেখা যায় একজন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে এই ফরম পূরণের জন্য দেওয়া টাকাটা জলে যাবে।
পাশাপাশি নিরীক্ষণের ফল না পাওয়ায় আবার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবেন নাকি ফলাফলের অপেক্ষা করবেন, তা নিয়ে দোটানায় আছেন এসব শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা অনার্স পাসের পর বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু এক বিষয়ে ফেল করায় তাঁরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন যে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাবেন নাকি নতুন করে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আবার লেখাপড়া শুরু করবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইসলামপুর আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুমনা সাহা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই আমাদের ফরম পূরণের শেষ তারিখ ছিল, তাই বাধ্য হয়ে ১২ তারিখে আমরা ফরম পূরণ করেছি। কিছু করার নাই, আমাদের তো কোনো পথ দিতেছে না, ওরা (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)। তাঁদের কাছে ফোন দিয়েছিলাম। সর্বশেষ যেই দিন আমরা ফরম পূরণ করি, তাঁরা বলেন রেজাল্টের সঙ্গে ফরম পূরণের কোনো সম্পর্ক নাই। আপনাদের ফরম পূরণ করতেই হবে।’
বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জানিয়ে সুমনা বলেন, ‘এখন আমরা বিসিএস-এর জন্য কী পড়াশোনা করব, আমাদের তো মনই ভেঙে গেছে। আমাদের রেজাল্ট আছে ভালো, কিন্তু নিবন্ধনের পরীক্ষা বা ব্যাংকগুলোতে আবেদন করতে পারছি না।’
সুমনা সাহা অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় সামাজিক পরিবর্তন বিষয়ে ফেল করেন। অথচ পরীক্ষা ভালো হয়েছিল বলে দাবি তাঁর। এর আগে প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি এবং আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন তিনি। তাঁদের বিভাগ থেকে ৩৭ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন, যার মধ্যে ২২ জন একই বিষয়ে ফেল করেছেন বলেও জানান সুমনা।
বাধ্য হয়ে ফরম পূরণ করেছেন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজের নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা ফরম পূরণ করেছি, এটা ছাড়া উপায় ছিল না। আমাদের ফরম পূরণের শেষ দিন ছিল গত ১৩ জুলাই।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের জীবনের এভাবে একটা বছর নষ্ট করে দিতেছে। আমার এবার লাস্ট সেশন। আল্লাহ মাফ করুক সামনে যদি এমন খারাপ কিছু হয়, আমি আর পরীক্ষা দিতেই পারব না।’
ফলাফলের কোনো আশ্বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফরম পূরণ করেছেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কলেজের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। একই কথা জানান মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের জুবেল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী।
এসব বিষয়ে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামানের সঙ্গে দুদিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে পাওয়া যায়নি তাঁকে।
এর আগে একসঙ্গে হাজারো শিক্ষার্থীর ফেলের বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বদরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘প্রতিবছর ফলাফল প্রকাশের পর এমন অনেক অভিযোগ আসে, সব সময়ই আসে। এতগুলো স্টুডেন্টকে ফেল করানোর পেছনে তো আমাদের কোনো কারণ নাই। পরীক্ষার পর কে কোন কলেজের স্টুডেন্ট সেটাও আমরা জানি না। আমি যদি চাইও একটা ছেলেকে ফেল করিয়ে দেব, তার কোনো সুযোগ নেই।’
আর ফলাফল কবে প্রকাশ করা হতে পারে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেছিলেন, ‘এটা বলা সম্ভব নয়। কারণ এটা একটা লম্বা প্রসেস (প্রক্রিয়া), খাতাগুলো সারা দেশে ছড়ানো থাকে, তা আনতে সময় লাগে। এ বছরে ১৫ দিনের ছুটির কারণে একটু বেশি সময় লাগছে। ছাত্রছাত্রীদের কোনো ক্ষতি হবে, এমন কাজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করে না। অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা এখন অনেক এগিয়ে আছি।’