শাবিপ্রবির গবেষকরা উদ্ভাবন করলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাংলা কিবোর্ড
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন বাংলা কিবোর্ড উদ্ভাবন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একদল তরুণ গবেষক। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে ব্যবহার উপযোগী এই কিবোর্ডটির নাম রাখা হয়েছে একুশে বাংলা কিবোর্ড।
এই কিবোর্ডের একটি বিশেষত্ব হলো, যত ব্যবহার করা হবে তত বেড়ে যাবে এর বুদ্ধিমত্তা। এই কিবোর্ডে টাইপের জন্য আলাদা করে টাইপ শিখতে হয় না। লেখার গতি দ্রুত করার জন্য টাইপের পাশাপাশি রয়েছে সুইপ (sweep) পদ্ধতি। সুইপ করে লিখলে যেমন সময় কম লাগে, তেমনি এক হাতে টাইপ করার দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে আয়োজিত কিবোর্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. রেজা সেলিম, অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান ও অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম।
ড. জাফর ইকবাল আরো বলেন, ‘কিবোর্ডটি তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিজেই বুঝে ফেলবে আপনি কি লিখতে চান। একসময় আমরা বাংলা লিখতে গেলে ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করতে হতো। যা আমাদের পীড়া দিত। এখন আর এই সমস্যা থাকবে না।’
ভাষা দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে এই কিবোর্ডের নাম রাখা হয়েছে, একুশে বাংলা কিবোর্ড। এরই মধ্যে এই কিবোর্ডের বেটা ভার্সন রিলিজ দেওয়া হয়েছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই কিবোর্ড এক নতুন ধারা সংযোজন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
একুশে বাংলা কিবোর্ড আবিষ্কার দলের প্রধান শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তীর অধীনে এই প্রকল্পে কাজ করেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন রণিত দেবনাথ আকাশ, উ খ্যই নু (২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ), গৌতম চৌধুরী ও বুদ্ধ চন্দ্র বণিক (২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ)। এই কিবোর্ডের ইউজার সারফেস ডিজাইন করেছেন আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল হক। আরো অনেকেই এই প্রকল্পে সহায়তা করেছে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, এই কিবোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো কিবোর্ডটি তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বুঝে ফেলবে আপনি কী লিখতে চাচ্ছেন। যেমন, আপনি লিখলেন ‘বাংলা আমার’ এই কিবোর্ড তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বুঝে ফেলবে যে আপনি লিখতে চাচ্ছেন ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষা’। সময়ের সাথে কিবোর্ডটির বুদ্ধিমত্তাও বাড়তে থাকবে। কিবোর্ড যত বুদ্ধিমান হবে আপনাকে লিখতে হবে তত কম। পরিশ্রমও কমে যাবে অনেকগুণ।
বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী আরো জানান, ভাষার মাস উপলক্ষে একটু তাড়াহুড়া করে কিবোর্ডটির উদ্বোধন করা হলেও ভবিষ্যতে এটিকে আরো উন্নত করার ইচ্ছে আছে। নতুন নতুন ফিচার সংযুক্ত করে টাইপিং সহজ করতে আরো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। সবাই এটাকে গুগল প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। আমরা চাই, বাংলা বলার পাশাপাশি বাংলায় লিখে সবাই তাদের মনের ভাব প্রকাশ করুক।
এই তরুণ শিক্ষক ও গবেষক দলের আশা, পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের দেশের তরুণরা দেশকে নতুন নতুন আবিষ্কার উপহার দেবে।